ড্রাগন বাগানে ১৮ ঘণ্টায় দিন!

ড্রাগন বাগানে ১৮ ঘণ্টায় দিন!

রাজশাহী সংবাদদাতা: দিনশেষে সূর্য ডুবে গেলেও রাজশাহীর একটি ড্রাগন ফলের বাগানে সন্ধ্যা নামে না। থাকে দিনের মতোই আলো। রাত ১০টা পর্যন্ত ঝলমলে আলোয় আলোকিত থাকে বাগান। ভোরে সূর্যের আলো ফোটার এক ঘণ্টা আগেই এখানে আলো জ¦লে। যখন আলো থাকে তখন ড্রাগন গাছ বোঝে, এখন দিন। আগাম ফুল পেতে ড্রাগন বাগানে বৈদ্যুতিক বাল্ব জ¦ালিয়ে গাছকে বোঝানো হচ্ছে দিন এখন ১৮ ঘণ্টা।

গোদাগাড়ী উপজেলার বিদিরপুর গ্রামের ড্রাগন চাষি হেদায়েতুল ইসলাম হেলাল এমন কৌশল অবলম্বন করছেন। হেলাল বলছেন, সন্ধ্যা নামার পর গাছ তার সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। কিন্তু দিন বড় থাকলে গাছ সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া চালু রাখে। গাছ যত বেশি খাদ্য গ্রহণ করে ততবেশি বেড়ে ওঠে। ফুলও ফোটে তাড়াতাড়ি। তাই এই কৌশল। গোদাগাড়ীর উদপুর এলাকায় হেলালের ড্রাগন বাগান। প্রকল্পের নাম রাখা হয়েছে গ্রীন ওয়ার্ল্ড বসন্তপুর’। প্রকল্পের উদ্যোক্তা হেলাল একজন নগর সবুজায়ন কর্মী। ঢাকা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন নগরী সবুজায়নের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ করেন তিনি। দেশে উৎপাদন কম এমন বিদেশি ফলের পরীক্ষামূলক চাষাবাদ শুরু করছেন তিনি। বাগানে তার ড্রাগন ছাড়াও রয়েছে ভিয়েতনামের আতা, ক্যাপসিকাম, অ্যাবোকাডো, গুজরাটি খেজুর, মাল্টা ইত্যাদি ফল।

দুই বছর আগে হেলাল সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে করেন ড্রাগনের বাগান। সেই জমি থেকে গেল বছর সাড়ে ১৩ মেট্রিক টন ড্রাগন বিক্রি করেছেন। এরই মধ্যে বাগানের পরিধি বেড়ে হয়েছে ১৮ বিঘা। এর মধ্যে ১২ বিঘা ড্রাগন। অন্যান্য ফল রয়েছে ছয় বিঘায়। গত বছর চারটি বাল্ব দিয়ে আলোর পরীক্ষাটা চালিয়েছিলেন তিনি। দেখা গেছে, এসব গাছে ফুল ফুটেছে একমাস আগে। তাই এবার আরও বড় পরিসরে এই আলোর ব্যবস্থা করেছেন হেলাল। তবে এটিকে পরীক্ষামূলকই বলছেন হেলাল।

গত বছর ৫ ফুট পরপর চারটি বাল্ব ব্যবহার করেন হেলাল। ফুলও এসেছিল আগে। কিন্তু দিনে আবার রোদ বেশি থাকায় নিষিক্ত হওয়ার আগেই ঝরে পড়ে ফুলগুলো। এবার দিনে সূর্যের তাপ কম। তাই পরীক্ষামূলক এই পদ্ধতিতে আগাম ফল পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী হেলাল। তিনি এখন বিকাল ৫টার দিকে বাল্ব জ¦ালিয়ে দিচ্ছেন। জ¦লছে রাত ১০টা পর্যন্ত। মাঝে দিনশেষে রাত নেমে এলেও গাছ টের পাচ্ছে না। আবার ভোরের আলো ফোটার আগে ৫টার দিকেই বাল্বগুলো জ¦ালিয়ে দেওয়া হয়। তখন গাছ ভাবে, সূর্য উঠে গেছে। ভোর ৬টার দিকে যখন প্রকৃতই সূর্যের আলো ফোটে তখন বাল্বগুলো বন্ধ করা হয়। এভাবে গাছকে ছয়ঘণ্টা দিন বড় দেখানো হচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা বলছে, সূর্যের আলোর সঙ্গে বিকিরিত হয় দেড় লাখেরও বেশি রঙ। যা গাছেদের সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে। আর এই বাল্বগুলো রং ছড়ায় ৩ হাজার ৬০০ ধরনের। আলোর রং সূর্যের রঙের মতোই। তাই সূর্যের আলোর বিকল্প হিসেবে এই বাল্বগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। এই আলো গাছকে সজাগ ও বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে পুরোপুরি না হলেও বেশ সহায়ক হবে।