অর্থনীতি দুর্বল হলে রক্ষণশীল রাজনীতির জোর বাড়ে

ডেস্ক: পশ্চিমা দেশগুলোয় রক্ষণশীল রাজনীতির জয়জয়কার দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট সিদ্ধান্ত ও যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্থানের পাশাপাশি ইউরোপের আরো কিছু দেশে এমন ধারা জোরালো হচ্ছে। কট্টর রক্ষণশীলতার পালে এমন জোরালো হাওয়ার পেছনে অর্থনীতির দুরবস্থাই মূল কারণ। সেই সঙ্গে রয়েছে অভিবাসনসহ বিভিন্ন জনমিতিক ইস্যু। বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ হারুন ওনদার এক গবেষণায় বিষয়টি তুলে ধরেছেন। খবর কোয়ার্তজ।

ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি ও ইতালিতে অভিবাসনবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচনে ভালো করছে। হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ডসহ পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতেও একই ধারার জয়ধ্বনি শোনা যাচ্ছে।

হারুন ওনদারের মতে, অর্থনীতির দুরবস্থাই রক্ষণশীল রাজনীতিকে শক্তি জুুগিয়েছে। পাশাপাশি আরেকটি বড় কারণ হলো, এসব দেশে নাগরিকদের বয়স। আগামী বছরগুলোয় বেশির ভাগ ধনী দেশ বড় ধরনের জনমিতিক পালাবদল দেখতে পাবে। এসব দেশে প্রবীণরাই জনসংখ্যার সিংহভাগ হতে যাচ্ছেন।

প্রবীণ জনগোষ্ঠী যে ধরনের অর্থনৈতিক চাপ বোধ করেন, তা সংরক্ষণবাদী প্রবণতাকে জোরালো করে। এ কারণেই জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকে তারা বেশি আবেদনময় মনে করেন।

ব্রিটেনের সাম্প্রতিক গণভোটে তরুণদের তিন-চতুর্থাংশের বেশি ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) থাকার পক্ষে রায় দিয়েছেন। অন্যদিকে ৬৫ বছর অথবা তার বেশি বয়সের ব্রিটিশ নাগরিকদের ৬০ শতাংশই ইইউ ছাড়ার পক্ষে রায় দিয়েছে।
বয়স্করা সাধারণত সতর্ক ও সংরক্ষণবাদী হয়ে থাকেন। অন্যদিকে তরুণরা থাকেন ঝুঁকি নেয়ার ও পিছুটান না রাখার পক্ষে। নির্দিষ্ট কোনো স্থানে নিজের ভাগ্যকে বেঁধে রাখার প্রবণতা তরুণদের থাকে না। বয়স্কদের মধ্যেই তা চোখে পড়ে।
১৯৯৭ সালের এশীয় আর্থিক সংকটের পর ইইউতে নতুন ছয় সদস্য দেশের অন্তর্ভুক্তি ঘটে। উপর্যুপরি দুটি অর্থনৈতিক ইস্যুর সমান্তরালে ইইউভুক্ত দেশগুলোয় রক্ষণশীল রাজনীতি চাঙ্গা হতে দেখা যায়।

নিউইয়র্ক টাইমসের ইউরোপিয়ান ইলেকশন ডাটাবেজ অনুযায়ী, ১৯৯৭-২০১৫ সময়কালে ব্রিটেনে রক্ষণশীল ইউকে ইনডিপেনডেন্স পার্টির ভোট ১৩ শতাংশ বেড়েছে। একই সময় ফ্রান্সে সমহারে বেড়েছে কট্টরপন্থী ন্যাশনাল ফ্রন্টের ভোট (১৫ থেকে বেড়ে ২৮%)। জার্মানিতে অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড পার্টির ভোটও এ সময় ১৩ শতাংশ বেড়েছে (শূন্য থেকে ১৩%)।
একইভাবে ২০০৪-১৫ সময়কালে গ্রিসে গোল্ডেন ডন পার্টির ভোট বেড়েছে ৯ শতাংশ (২ থেকে ১১%)। হাঙ্গেরিতে প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবানের জব্বিক পার্টিসহ পাঁচটি রক্ষণশীল দলের ভোট গত ১৭ বছরে ১৭ শতাংশ বেড়েছে। ১৯৯৮ সালে এ দলগুলো মোট প্রদত্ত ভোটের ৪৮ শতাংশ পায়। ২০১৫ সালে পেয়েছে মোট ভোটের ৬৫ শতাংশ। ১৯৯৭-২০১৫ সময়কালে পোল্যান্ডে ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির ভোট বেড়েছে ২৮ শতাংশ।

২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সম্পদ বুদ্বুদ ও অতিকায় কয়েকটি ব্যাংকের পতনের জেরে বৈশ্বিক আর্থিক সংকট দেখা দেয়। দেশে দেশে রক্ষণশীল রাজনীতি তাতে আরো জোরদার হয়। ২০১০ সাল থেকে পরবর্তী চার বছরে রক্ষণশীল সুইডেন ডেমোক্রেটিক পার্টির ভোট বেড়েছে ৭ শতাংশ।

ইউরোপিয়ান ইলেকশনে ডাটাবেজে দেখা গেছে, প্রতিটি দেশে রক্ষণশীল দলগুলোর ভোটহার বৃদ্ধির বিষয়টি ধারাবাহিক। গত বছর ইউরোপে বিপুল সংখ্যক অভিবাসীর আগমন কেবল এ বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছে।