৭০০ বছরের প্রাচীন মহজমপুর শাহী মসজিদ

৭০০ বছরের প্রাচীন মহজমপুর শাহী মসজিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক-বাহক স্মৃতিময় স্থান সোনারগাঁ। পূর্বের নির্মাণশৈলী আর বর্তমান নির্মাণশৈলী নিয়ে বিশ্নেষণ করা বড়ই মুশকিল। যেমন মহজমপুরে সুলতানি আমলের সুবিখ্যাত মসজিদ। এ বিষয়ে এখনও অনেকেই জানেন না বললেই চলে। দিকনিদের্শনামূলক কোনো নামফলক তৈরি না করায় মহজমপুরের অসাধারণ একটি দুর্লভ স্থাপনা ভ্রমণপ্রিয় পর্যটকদের দৃষ্টির বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

মসজিদটি দেখে মনে হয় যে, একটি প্রাচীন মসজিদের ধ্বংসাবশেষের ওপর নতুন করে একটি মসজিদ নির্মাণ করার কাজ চলছিল। এলাকাবাসী প্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে নতুনভাবে মসজিদ নির্মাণ যেন না করে, সে জন্য প্রশাসন বন্ধ রেখেছে। মসজিদের বর্তমান আয়তন প্রায় ৯.৩ মিটার। এটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। মসজিদের ওপরে ৬টি গম্বুজ আছে।

মসজিদের অভ্যন্তরের মাপ ৬.৮ মিটার। দেয়াল ১.৮ মিটার পুরু। পূর্ব দেয়ালে তিনটি খিলানবিশিষ্ট দরজা এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে একটি করে অনুরূপ দরজা আছে। পশ্চিম দেয়ালে কেন্দ্রীয় মিহরাব কষ্টিপাথরের এবং শিকল ও ঘণ্টাসহ অন্যান্য কারুকার্যে শোভিত। ভেতরের দুটি স্তম্ভ এবং চারপাশের দেয়ালের ওপর মসজিদের ছয়টি গম্বুজ নির্মিত হয়েছে। ইটের মাপ ১.৫ ইঞ্চি। কেন্দ্রীয় মিহরাবের পেছনের দেয়ালে যেসব পোড়ামাটির চিত্রফলক ছিল, এখনও সেগুলোর বেশিরভাগ আদি অবস্থায় টিকে আছে।

মসজিদের গায়ে একটি শিলালিপি ছিল। সেটি ভেঙে গিয়েছিল। সৈয়দ আওলাদ হোসেন এই ভগ্ন শিলালিপিটি পাঠ করে জানতে পারেন, মসজিদটি সুলতান জালাল-উদ্-দীন মোহাম্মদ শাহ্র (যদু) পুত্র শামস-উদ্-দীন আহ্মদ শাহ্র রাজত্বকালে (১৪৩২-৩৬ সাল) জনৈক ফিরোজ খান কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। লিপিটির পিঠে তিনটি নাম আছে। প্রথমটি মসনদশাহী আহমেদ শাহ্। অন্য দুটির নাম ফিরোজ খান এবং আলী মুন্সি সুলতান। শিলালিপির পাঠ যদি ঠিক হয়, তবে মসজিদটি পনেরো শতকের দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মাণ হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে মাটির ওপরে কোনো কীর্তির ধ্বংসাবশেষ টিকে নেই। মাটির নিচে গ্রামের সর্বত্র কালের সাক্ষী হিসেবে সুলতানি নির্মাণশৈলীর ইট গাঁথা দেখতে পাওয়া যায়। মসজিদটির ভেতরে-বাইরে স্থানীয় পোড়ামাটির ফলকের নানা নকশার কারুকাজ। এই মসজিদে ছোট পান্ডুয়া, আদিনা, রাসবাড়ি, তাঁতিপাড়া, বাগেরহাট ষাটগম্বুজ মসজিদ ও বাঘা মসজিদে পোড়ামাটির অনুরূপ অলঙ্করণ দেখা যায়।

মসজিদ অঙ্গনের উত্তর-পূর্ব কোণে সুবৃহৎ পাকা কূপটি এখন আর নেই। স্থানীয় অধিবাসীরা এই কূপের সুপেয় পানিকে আব-ই-জমজমের পানির সঙ্গে তুলনা করে পানি পান করতেন। মসজিদটির ভেতরের নির্মাণশৈলী এতই মনোরম যে, না দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই। বাইরে একটি সিন্দুক আছে, তাও বহু পুরনো এবং এই সিন্দুকে মনোকামনায় দূরের ও কাছের অতিথিরা যার যতটুকু সামর্থ্য আছে মুক্তহস্তে দান করে থাকে।