দস্তরখানায় খাদ্য খেলে কি হয়

আখেরি নবী হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি দস্তরখানায় খাদ্য মুবারক খেয়েছেন। তাই দস্তরখানায় খাবার খাওয়া সুন্নত।

নবীজী উনার সুন্নতী সুফরুন বা দস্তরখানা মুবারক কেমন ছিলেন?

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দস্তরখান মুবারক ছিল চামড়ার এবং তা হাল্কা লাল (খয়েরী) রংয়ের ছিল। (শামায়েলে তিরমিযী, আনিসুল আরওয়াহ্, জামউল ওসায়েল)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ مَا أَكَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلٰى خِوَانٍ وَلَا فِـيْ سُكْرُجَةٍ وَلَا خُبِزَ لَه مُرَقَّقٌ‏.‏ قُلْتُ لِـحَضْرَتْ قَتَادَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَلٰى مَا يَأْكُلُوْنَ قَالَ عَلَى السُّفَرِ‏.

অর্থ: “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনো ‘খিওয়ান’ (টেবিলের মত উঁচু স্থানে)-এর উপর খাবার রেখে আহার করেননি এবং ছোট ছোট বাটিতেও তিনি আহার করেননি। আর উনার জন্য কখনো পাতলা রুটি তৈরী করা হয়নি। রাবী (হযরত ইউনুস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি) বলেন, আমি হযরত ক্বত্বাদাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে উনারা কিসের উপর আহার করতেন? তিনি বললেন, খয়েরী রংয়ের দস্তরখানের উপর।”(বুখারী শরীফ: ৫৪১৫, ৫৩৮৬, তিরমিযী শরীফ: ১৭৮৮, ইবনে মাজাহ শরীফ: ৩৪১৭)

দস্তরখানায় খাওয়ার ফজীলত কি? 

চামড়ার খয়েরী রঙের দস্তরখানায় পানাহারের অসংখ্য অগনিত ফযীলত মুবারকঃ

(১) চামড়ার এবং খয়েরী রঙের দস্তরখানায় পানাহার করা খাছ সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অন্তর্ভূক্ত।

(২) হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম, হযরত মূসা আলাইহিস সালাম, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এবং সমস্ত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা চামড়ার দস্তরখানায় পানাহার করেছেন।

(৩) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি খয়েরী রঙের চামড়ার দস্তরখানায় এক লোকমা খাবার খাবে, তার প্রতিটি লোকমার প্রতিদানে তাকে ১০০টি করে ছওয়াব দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ!

(৪) প্রতিটি লোকমার প্রতিদানে ১০০টি জান্নাতের কামরা তার জন্য নির্মাণ ও সুসজ্জিত করা হবে। সুবহানাল্লাহ!

(৫) সে ব্যক্তি বেহেশতের মধ্যে সমস্ত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের অফুরন্ত ছলাত এবং সালাম লাভ করবে দায়েমীভাবে। সুবহানাল্লাহ!

(৬) উক্ত দস্তরখানায় পানাহার করে তা শেষ করার সাথে সাথেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সে ব্যক্তির জীবনের পুঞ্জীভূত গুনাহসমূহ মাফ করে দেন। সুবহানাল্লাহ!

(৭) যে ব্যক্তি উক্ত দস্তরখানায় পানাহার করবে, সে ব্যক্তি ১টি উমরাহ হজ্বের ছওয়াব পাবে এবং ১ হাজার ক্ষুধার্তকে পেট ভরে খাওয়ানোর ছওয়াব পাবে। সে ব্যক্তি এতো বেশী ছওয়াব লাভ করবে, যেন সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের মধ্যে হাজার বন্দীকে মুক্ত করে দিল। সুবহানাল্লাহ!

(৮) যে ব্যক্তি দস্তরখানায় কোন গরীব দুঃখীকে আহার করাবে, তাকে সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদায় সমাসীন করা হবে। সুবহানাল্লাহ!

(৯) যে ব্যক্তি চামড়ার দস্তরখানায় সবসময় খাবার খাবে, রোজ হাশরের দিনে হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তাকে বেহেশতী পোষাক পরিয়ে বোরাকে করে উপস্থিত করাবেন এবং এই অবস্থায় তাকে বেহেশতে প্রবেশ করিয়ে দিবেন। সুবহানাল্লাহ!

(১০) যে ব্যক্তি উক্ত দস্তরখানায় খাবার খাবে এবং দস্তরখানায় পতিত খাবার টুকে টুকে খাবে, কিয়ামতের দিন তার ডান হাতে আমলনামা দেওয়া হবে, পেটের পীড়া দূরীভূত হবে, নেক সন্তান হবে, চোখের জ্যোতি ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে। সুবহানাল্লাহ!

(১১) যে ব্যক্তি কোন মেহমানকে খয়েরী রংয়ের চামড়ার দস্তরখানায় খাবার খাওয়াবে, সে প্রতিটি দানার প্রতিদানে এক হাজার করে নেকী বা ছওয়াব লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ!

(১২) যে ব্যক্তি খয়েরী রঙের চামড়ার দস্তর খানায় খাদ্য খাবে, মেহমানকে খাওয়াবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে দয়া, রহমত ও ক্ষমার কুদরতী নজরে দেখবেন এবং তাকে সম্মানিত জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে শাফায়াত করিয়ে সাথে করে নিয়ে সম্মানিত জান্নাতে প্রবেশ করবেন। সুবহানাল্লাহ!