বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগের পক্ষে ১২ দেশ

ভারতের রফতানি সহায়তা কর্মসূচিগুলোর বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) যুক্তরাষ্ট্রের উত্থাপিত অভিযোগে সমর্থন দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), রাশিয়া, চীন, জাপানসহ আরো আটটি দেশ। তৃতীয় পক্ষ হিসেবে এ বিবাদে যোগ দিয়েছে এসব দেশ। ভারতের বাণিজ্যবিষয়ক সচিব রিতা তিওতিয়া জানিয়েছেন, ডব্লিউটিওতে যুক্তরাষ্ট্রের দায়ের করা এ মামলায় হেরে যাওয়ার ‘সমূহ’ সম্ভাবনা রয়েছে। খবর ইকোনমিক টাইমস।

ডব্লিউটিওতে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র এগ্রিমেন্ট অন সাবসিডিজ অ্যান্ড কাউন্টারভেইলিং মেজারস (এএসসিএম) উল্লেখ করে জানিয়েছে, ভারতের রফতানি সহায়তা কর্মসূচিগুলো তাদের কর্মীদের ক্ষতি করছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ বিভিন্ন রফতানি সহায়তা কর্মসূচির আওতায় প্রতি বছর ভারতীয় কোম্পানিগুলো ৭০০ কোটি ডলার ভর্তুকি পেয়ে আসছে। এ ধরনের প্রণোদনায় যুক্তরাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ডব্লিউটিওতে ভারতের ভর্তুকি কর্মসূচির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ সম্পর্কে অবগত এক ব্যক্তি জানিয়েছে, ‘এ ইস্যুতে একাধিক তৃতীয়পক্ষের যুক্ত হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক এবং এটি খুবই তাত্পর্যপূর্ণ ইঙ্গিত। তারা অভিযোগকারীকে সমর্থন দিচ্ছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘আরো অনেক বেশি দেশ ভারতকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে, এটি অনেক বড় একটি ইস্যু।’ এ মামলায় ব্রাজিল, কানাডা, চীন, মিসর, ইইউ, জাপান, কাজাখস্তান, কোরিয়া, রাশিয়া, শ্রীলংকা, তাইওয়ান এবং থাইল্যান্ড তৃতীয় পক্ষ হিসেবে যোগ দিয়েছে।

ভারতের সঙ্গে রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) শীর্ষক বাণিজ্য চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে চীন, কোরিয়া, জাপান এবং থাইল্যান্ড। এসব দেশ ৯০ শতাংশ পণ্যে শুল্ক ছাড়ের জন্য চাপ দিচ্ছে ভারতকে। দিল্লির একজন বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ বলেছেন, যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগে সমর্থন দিয়েছে, তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কিছু দেশের সঙ্গে আমাদের বাজার দখলসংক্রান্ত সমস্যা চলছে, বাকিগুলোর সঙ্গে আরসিইপি সংশ্লিষ্ট ঝামেলা রয়েছে। তিনি এর ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘শ্রীলংকা আমাদের অনেক রফতানি পণ্যের প্রতিদ্বন্দ্বী। ফলে রফতানিতে আমাদের দেয়া প্রণোদনা বাতিলের মাধ্যমে তারা সুবিধা পেতে চায়।’

এদিকে আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত এ বিষয়ে পারস্পরিক কোনো সমঝোতায় আসতে ব্যর্থ হওয়ায় ফিলিপাইনের হোসে এন্তোনিও এস বোয়েনকামিনোর নেতৃত্বে একটি প্যানেল গঠন করেছে ডব্লিউটিও। এ প্যানেলের অন্য সদস্যরা হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার লিওরা ব্লুমবার্গ ও সুইজারল্যান্ডের সার্গে প্যানাতেয়ার। ইস্যুটির একজন আলোচক জানান, ‘আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ভারতের ওপর চাপ বাড়ছে, কারণ প্যানেল গঠন করার অর্থ এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।’ উল্লিখিত বিষয়ে কার্যক্রম বিষয়ে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে ডব্লিউটিওর সব সদস্যকে অবহিত করতে হবে এ প্যানেলকে।

এদিকে ভারতের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী রিতা তিওতিয়া মনে করেন, ভারত এ দ্বন্দ্বে হেরে যাবে। কারণ যে পরিমাণ আয়সীমা থাকলে রফতানিতে ভর্তুকি দেয়া যায়, তা অতিক্রম করেছে ভারত। তিনি বলেন, ডব্লিউটিওতে ভর্তুকি ইস্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিবাদে ভারতের হেরে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের উত্থাপিত অভিযোগগুলো নিয়ে ভারত খুবই শক্তভাবে জবাব দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, যখন রফতানিতে প্রত্যক্ষভাবে ভর্তুকি দেয়া যাবে না, তখন সরকার আইনসম্মতভাবে বিভিন্ন নীতিমালাগত সহায়তা নিতে পারে। রিতা বলেন, ‘সেবা রফতানিতে দেয়া সুবিধা অব্যাহত থাকবে এবং রফতানিকারকদের জিএসটি প্রত্যর্পণ অব্যাহত থাকবে।’

রফতানিতে দেয়া সহায়তা কর্মসূচি নিয়ে ডব্লিউটিওতে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে কাজ করতে এরই মধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করেছে ভারত সরকার। বিবাদ মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত রফতানিতে ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে।