পাঠান আমলের সুয়াপাড়া মিয়াবাড়ি মসজিদ
মুন্সিগঞ্জ সংবাদদাতা: মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বজ্রযোগিনী ইউনিয়নের সুয়াপাড়া মিয়াবাড়ি জামে মসজিদ নামে এ মসজিদটি সবার কাছে বর্তমানে পরিচিত। ইতিহাসবিদরা মনে করেন, এটি এখানে পাঠান আমলে এ মসজিদটি নির্মিত হয়। মুন্সীগঞ্জে বিভিন্ন এলাকায় পাঠান আমলে নির্মিত একাধিক মসজিদের খোঁজ পাওয়া গেছে। বজ্রযোগিনী বাজার থেকে এক কিলোমিটার পশ্চিমে সুয়াপাড়া মিয়াবাড়ি প্রাচীন এ মসজিদের পূর্বপাড়ে এখানে একটি বড়সরো প্রাচীন দীঘি রয়েছে। এ মসজিদটি কবে, কখন, কীভাবে কে নির্মাণ করেন তার ইতিহাস কোথাও লেখা পাওয়া যায়নি? তবে কেউ কেউ এটিকে গায়েবী মসজিদ হিসেবে অভিমত প্রকাশ করেছেন। আবার অনেকের অভিমত হচ্ছে এটি সম্রাট শাহজাহান নির্মাণ করেছেন।
আবার অনেকে এখানে ভিন্নমত প্রকাশ করে বলেন এ মসজিদটি নির্মাণ করেন সম্রাট জাহাঙ্গীর। এ গ্রামে যাদের বয়স বর্তমানে ৭০ থেকে ৮০ বৎসর বয়স অতিবাহিত করছেন তারা দাবি করছেন এ মসজিটি সম্রাট আকবর নির্মাণ করেছেন। এ জনপদে সম্রাট আকবরের কোন নিদর্শন মুন্সীগঞ্জ জেলা বা প্রাচীন বিক্রমপুরে কোথাও নেই বলে শোনা যাচ্ছে।
এছাড়া সম্রাট শাহজাহান এর সময়ের কোন নির্দেশন নেই এ জনপদে। সম্রাট জাহাঙ্গীরের সেনাপতি ইসলাম খান চিশতী ঢাকা বিজয়ের আগে বিক্রমপুর জয় করেন বলে ইতিহাস সূত্রে জানা গেছে। এ বিক্রমপুরে চাঁদ রায় কেদার রায়ের সাথে ইসলাম খানের সাথে এখানে একাধিক যুদ্ধ সংঘঠিত হয়েছে। সেইসব যুদ্ধে ইসলাম খান বীরের বেশে জয়ী হন।
ইসলাম খান মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের পাথরঘাটায় বিক্রমপুর জয় করে সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। সেই মসজিদটি পাথরঘাটা মসজিদ নামে এ জনপদে পরিচিত লাভ করে। ইতিহাসবিদরা দাবি করেন সুয়াপাড়ার এ প্রাচীন মসজিদটি পাঠান আমলে এটি মুঘল প্যাটার্নে নির্মিত হয়।
এ মসজিদটি খুব সম্ভবত কররানী শাসকদের সময় ব্রজযোগিনী গ্রামের সুয়াপাড়ায় নির্মিত হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে। ইতিহাসবিদরা ধারণা করেন এখানে এ মসজিদটি ১৫৬৮ সাল থেকে ১৫৭৫ সালের মধ্যে নির্মিত হয়। প্রাচীন এ মসজিদটির আয়তন সম্ভবত ১৮ থেকে ১৫ ফুট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেয়াল ৩ ফুট পুরো রয়েছে। এ মসজিদের ছাদে একটি মাত্র গম্বুজ রয়েছে। পশ্চিম দেয়ালে একটি মেহেরাব ও একটি মিম্বার রয়েছে। মসজিদের চার কোনে চারটি টারেট রয়েছে। টারেটের উপরে ছোট ছোট মিনার রয়েছে। একটি প্লাটফর্মের উপর মসজিটির অবস্থান। ২০০৩ সালের এপ্রিলে মসজিদটি পূর্বাংশে বৃদ্ধি করে দ্বিতল নির্মাণ করা হয়। পুরাতন মসজিদটি সংরক্ষণ করে মসজিদটির বর্তমানে সংস্কার করা হয়েছে।
সুয়াপাড়ার এ মসজিদটি নিয়ে বৃটিশ আমলে মামলা মোকদ্দমা হয়ে ছিল বলে গ্রামবাসী অভিমত প্রকাশ করেছেন। সেই সময়ে মসজিদটিকে বড় ধরণের একটি বটবৃক্ষ ঢেকে ফেলে। তখন হিন্দুরা এটি মন্দির বলে দাবী করে। আর তখন মুসলমানরা এটি মসজিদ বলে দাবী করেন। তখন হিন্দুদের পক্ষে আচার্য্য ও ব্যানার্জী বংশ যৌথভাবে ব্রিটিশের সময়ে কোলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে এ মসজিদটিকে মন্দির দাবী করে। সেই সময়ে মুসলমানদের পক্ষে এখানকার মৃধা বংশের লোকেরা মামলার বিবাদী হিসেবে মসজিদেও পক্ষে আদালতে জবাব দেয়। বেশ কয়েক বছর মসজিদ ও মন্দির নিয়ে এ মামলাটি চলে।
কোলকাতা কোর্ট হতে সরেজমিন তদন্ত করে মসজিদের মেহেরাব, মিম্বার ও গম্বুজ থাকায় এটিকে মসজিদ হিসেবে রায় দেয় সেই সময়ের আদালতের বিজ্ঞ বিচারকরা। সেই সময়ে প্রাচীন মসজিদটিতে ৩ কাতারে মোট ২৭ থেকে ৩০ জন মুসলমান এখানে নামাজ আদায় করতে পারতো। বর্তমানে সংস্কারের পর ১০০ থেকে ১৫০ জন মুসল্লীরা নামাজ আদায় করতে পারছে।