উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর ঋণমান স্রোতের বিপরীতে

ডেস্ক: বিশ্বের উদীয়মান বাজারগুলোর ঋণমান বিপরীত দিকে চলতে শুরু করেছে। বুধবার মুডি’সের চীনের ঋণমান হ্রাস এবং আগামী মাসগুলোয় ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলোর ঋণমানের আরো সম্ভাব্য পতন এ ইঙ্গিতই দিচ্ছে। যদিও মুডি’সের ঋণমান কমানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে চীনের অর্থ মন্ত্রণালয়। খবর রয়টার্স ও সিনহুয়া।

২০১৪ সালের শুরু থেকে তিনটি বৃহত্ আন্তর্জাতিক ঋণমানকারী সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল, মুডি’স ও ফিচ দেড়শটির বেশি উদীয়মান বাজারের ঋণমান কমিয়েছে। অর্থাত্ সপ্তাহে গড়ে একটি করে বাজারের ঋণমানের পতন ঘটেছে। যদিও ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ও ভোগ্যপণ্যের মূল্যের চাপ প্রশমিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত এমনটি ঘটতে দেখা যাচ্ছে না।

ঋণমান কমানোর কার্যকর সতর্কবার্তাসহ ইতিবাচক পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি ঋণাত্মক পূর্বাভাস দিয়েছে এসঅ্যান্ডপি। ২৬টি ঋণাত্মক পূর্বাভাসের বিপরীতে পাঁচটি ইতিবাচক পূর্বাভাস। অন্যদিকে গত বছর ২০টি উদীয়মান বাজারের ঋণমান কমিয়েছে ফিচ। এরই মধ্যে চলতি বছরের এখন পর্যন্ত সাতটি দেশের ঋণমান হ্রাস করেছে সংস্থাটি। যার মধ্যে রয়েছে তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা ও সৌদি আরব। এছাড়া এল সালভাদরের ঋণমান দুই দফা কমেছে। এর মধ্য দিয়ে ১৩টি ঋণাত্মক পূর্বাভাস দিয়েছে ফিচ। অন্যদিকে ২৫টি দেশের ঋণমাণ নির্ধারণ এখনো বাকি রয়েছে মুডি’সের। বুধবার ৩০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো চীনের ঋণমান কমিয়েছে সংস্থাটি।

পিকটেট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপক গুইডো চামোরো বলেন, জিডিপির বিপরীতে ঋণের দিকে নজর দিলে দেখা যাচ্ছে, উদীয়মান বাজারের অধিকাংশ দেশেরই ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রবণতা আগামী কয়েক বছরেও ঘুরে দাঁড়াবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও প্রত্যাশার চেয়ে কম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও উদীয়মান বাজারগুলোর ঋণমান পতনের পেছনে প্রভাব রেখেছে। ইউবিএসের গবেষণা অনুসারে, উন্নত অর্থনীতিগুলোর প্রবৃদ্ধির তুলনায় ১৯টি বৃহত্ উদীয়মান বাজারের প্রবৃদ্ধি গড়ে ১ দশমিক ৬-এর ওপরে রয়েছে। ২০০৯ সালে এ হার ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। একই সময়কালে উদীয়মান বাজারগুলোর গড় ঋণমান প্রায় একধাপ কমেছে বলে এসঅ্যান্ডপির পরিসংখ্যানে দেখা যায়।

তবে হতাশার মধ্যে কিছু আশার আলো রয়েছে। গত সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়াকে বিনিয়োগ গ্রেডে নিয়ে এসেছে এসঅ্যান্ডপি। রাশিয়া ও ভারতের ঋণমান বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই আর্জেন্টিনার ঋণমান বাড়াতে পারে বলে জানিয়েছে মুডি’স। অন্যদিকে ফিচ জানুয়ারিতে যে কয়টি উদীয়মান বাজারের পূর্বাভাস কমিয়েছিল, তার দ্বিগুণ দেশের পূর্বাভাস বৃদ্ধি করেছে। কলম্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, ইরাক ও শ্রীলংকার পূর্বাভাস বৃদ্ধির বিপরীতে কমিয়েছে এল সালভাদর ও নাইজেরিয়ার। সম্প্রতি এক বক্তব্যে ফিচের কর্মকর্তা জেমস ম্যাককোর্মাক বলেন, ২০১৬ সালের শেষ দিকে উদীয়মান বাজারগুলোর ঋণাত্মক পূর্বাভাস শীর্ষ অবস্থায় ছিল। বর্তমানে এর হার কমতির দিকে। তবে এখনো অনেক দেশেই রাজনৈতিক ঝুঁকির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে বুধবার মুডি’সের ঋণমান কমানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে চীন। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘প্রো-সাইক্লিক্যাল’ রেটিং পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে ঋণমান কমানো হয়েছে, যা যথাযথ নয়।

ঋণ বৃদ্ধি এবং অর্থনীতি শ্লথ হওয়ায় আগামী বছরগুলোয় চীনের আর্থিক সামর্থ্য কমবে, এমন আশঙ্কা থেকে এ সিদ্ধান্ত  নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মুডি’স। বুধবার চীনের ঋণমান ডাবলএথ্রি থেকে কমিয়ে এওয়ান করে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। পাশাপাশি দেশটির পূর্বাভাস পরিবর্তন করে ‘নেতিবাচক’ থেকে ‘স্থিতিশীল’ করেছে।

চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঋণমান সংস্থাটির এ দৃষ্টিভঙ্গি অনেকাংশে চীনা অর্থনীতির সমস্যাকে অতিরঞ্জিত করে দেখছে এবং দেশটির অবকাঠামোগত সংস্কারের গভীরতা ও সামগ্রিক চাহিদা প্রসারণের সক্ষমতাকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।

চলতি বছর শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি দিয়ে শুরু করেছে চীন। বছরের প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি বেড়েছে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া চীন চলতি বছর সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। গত বছর শেষ প্রান্তিকে দেশটির প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।

যদিও ঋণের প্রতি ক্রমবর্ধমান আসক্তি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিটির প্রবৃদ্ধির জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। সম্প্রতি দেশটির ঋণ বার্ষিক উত্পাদনের ১৫ শতাংশের সমান হারে বাড়ছে। চলতি বছর শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি দিয়ে শুরু হলেও চীনের অর্থনীতিতে মন্থরতার লক্ষণ দেখা দিয়েছে।

এ মুহূর্তে চীনের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। গত মাসে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জোর দিয়ে বলেন, চীনের অর্থব্যবস্থার স্বাস্থ্য জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট বলেন, আধুনিক অর্থনীতির মূল হচ্ছে অর্থব্যবস্থা। একটি স্থিতিশীল ও স্বাস্থ্যকর অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আমাদের অবশ্যই আর্থিক খাতে ভালো কিছু করতে হবে। – বণিক বার্তা