কলম্বাস নয়, আমেরিকা আবিষ্কার করেছেন চীনারা

ডেস্ক: ইউরোপের দেশ ইতালির জেনোয়ার নাগরিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস। ১৪৯২ সালে তিনিই আমেরিকা আবিষ্কার করে বলে ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে। তবে এ নিয়ে চেপে রাখা ইতিহাস প্রকাশিত হয়েছে। কলম্বাস আমেরিকা আবিস্কার করেছে এ ইতিহাসটি দুটি সূত্রে ভুল প্রমাণিত হয়।
প্রথম সূত্র:
বিগত ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাচীন এক শিলালিপি আবিষ্কৃত হয়েছে। এ  নিয়ে গবেষণা করে দেখা গেছে, কলম্বাস ওই অঞ্চলে পৌঁছানোর ২৮০০ বছর আগে আমেরিকা আবিষ্কৃত হয়েছিল। আর সেটা করেছিলেন বর্তমানে আমেরিকার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের মুসলিম নাগরিকরা।

মার্কিন অবসরপ্রাপ্ত রসায়নবিদ ও অপেশাদার এপিগ্রাফ গবেষক জন রাসক্যাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর শহর আলবুকোর্য়াকের জাতীয় মনুমেন্টের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পাথরে খোদাই করা একটি বিশেষ বস্তু দেখতে পান।

তিনি এটি নিয়ে শুরু করেন গবেষণা। এরপর তিনি দাবি করেন, ১৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আমেরিকায় এশিয়ার মানুষ বসবাস করতেন, যা কলম্বাস সেখানে যাওয়ার প্রায় ২৮০০ বছর আগের ঘটনা। ইউরোপীয়রা ওই অঞ্চলে পৌঁছানোর অনেক আগে চীনারা আমেরিকা আবিষ্কার করেন।

রাসক্যাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘চীনের এই পান্ডুলিপি এতই পুরনো যে তা ভুয়া হওয়া অসম্ভব। তাছাড়া পাথরে খোদাই করা যে লিপি তিনি খুঁজে পেয়েছেন, তা প্রাচীনকালে চীনে ব্যবহৃত হতো।’

ওই গবেষক আরো দাবি করেছেন, ‘ওই তথ্যের ভিত্তি ধরে বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ায় গেছে, প্রাচীন চীনের লোকেরা আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন এবং প্রায় ২৫০০ হাজার বছর আগে সেখানকার স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে তারা ইতিবাচক মিথস্ক্রিয়া করেছিলেন।’

আলবুকোর্য়াকের শিলার মধ্যে থেকে আবিষ্কৃত পিক্টোগ্রাম (ছবি দিয়ে কোনো কিছু বোঝানো) একটি সুপ্রাচীন লিপি হিসেবে মনে করা হচ্ছে, যা শাঙ রাজতন্ত্রের অবসানের পর চীনারা ব্যবহার করতেন।

তিনি আরো বলেন, ‘খোদাই করে লেখা প্রতীক থেকে এটা নিশ্চিত যে, শাঙ ও জোহো রাজতন্ত্রের সময় চীনা রীতি-নীতিতে এগুলো ব্যবহৃত হতো। চীনারা দেবতাদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পশু, জীবজন্তু (হাতি, কুকুর) উৎস্বর্গ করতেন, এরও বেশ প্রমাণ পাওয়া গেছে।’

তিনি দাবি করেন, এর আগে অ্যারিজোনার একটি পার্ক থেকে ৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের হাতির একটি পিক্টোগ্রাম উদ্ধার করা হয়েছে, যা থেকে বোঝা যায় এক সময় বহু এশীয় ছিলেন আমেরিকায়।

এর আগে নেভেদা অঙ্গরাজ্যের গ্রাপিভাইন ক্যানিয়ন থেকে আরো একটি পিক্টোগ্রাম উদ্ধার করা। এ থেকেও বোঝা যায়, আমেরিকায় আগে এশীয় মানুষ বাস করতেন।

কলম্বাসই আমেরিকার আবিষ্কারক কি না, এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কয়েক মাস আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান দাবি করেন, তুর্কিরা আমেরিকা আবিষ্কার করেন। তথ্যসূত্র : ডেইলি মেইল, টাইমস অব ইন্ডিয়া

দ্বিতীয় সূত্র:

১১৭৮ সালে সং শাসনামলে (Sung Dynasty) সারকা (Circa) নামে একজন চাইনিজ লেখক কর্তৃক লিখিত একটি দলীল সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে, যা সুং দলীল (Sung Document) নামে পরিচিত। সুং দলীল থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়- ১১৭৮ ঈসায়ী সনে চীন থেকে যাত্রা শুরু করে একদল মুসলমান নাবিক উনারা  Mu-Lan-Pi (বর্তমান ক্যালিফোর্নিয়া) নামক আমেরিকার একটি অঞ্চলে পৌঁছায়। সে মোতাবেক কলম্বাসের(১৪৫১-১৫০৬) তিন শতাব্দী আগে মুসলমান উনারাই প্রথম আমেরিকা আবিষ্কার করেন।

Image result for Voyages_of_Zheng_He_1405-33

ব্রিটিশ নৌ ইতিহাসবিদ গ্যাভিন মানজিস (Gavin Maûies) তার লিখিত বই “1421: The Year China Discovered the World” এ উল্লেখ করেছে- ১৪২১ ঈসায়ী সনে ঝেং হি (Zheng He) নামে একজন চাইনিজ মুসলমান তিনি কলম্বাসেরও ৭১ বছর পূর্বে আমেরিকায় গমন করেন। ঝেং হি উনার নৌ অভিযান পরিচালনা করার জন্য ফুজিয়ান, গুয়াংডোং এবং ঝেজিয়াং (Fujian, Guangdong and Zhejiang) প্রদেশ থেকে বাছাই করে দক্ষ মুসলমান নাবিক সংগ্রহ করেন। অতঃপর ঝেং হি চুয়াঝৌ (Quayhou) প্রদেশে গমন করেন এবং সুন্দর ও নিরাপদ ভ্রমণ প্রার্থনায় স্থানীয় মসজিদে নামায আদায় করেন। সেখান থেকেই ঝেং উনার দলবল নিয়ে নৌ অভিযান শুরু করেন এবং আমেরিকায় পৌঁছতে সক্ষম হন।

সুং ডকুমেন্ট এবং ব্রিটিশ লেখক গ্যাভিন মানজিসের লেখার বিষয়বস্তু এখনো বিষদভাবে আলোচিত হয়নি, যদিও অনেক ইতিহাসবিদ তখনকার সার্বিক অবস্থা মূল্যায়ন করে ঘটনা দুটি সত্য হিসেবে প্রতিপাদন করেছে। কোনোনেল কেন্নোন (Colonel Kennon) নামক একজন নৌ ইতিহাসবিদ বলেছে, “এশিয়া থেকে আমেরিকার গতিপথ যতটুকু আমি জানি এবং জাপানিজ ও চাইনিজদের আমি যতটুকু দেখেছি, তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই- অনেক গোড়া থেকেই মুসলমানরা মাঝে মাঝে আমেরিকা উপকূল ভ্রমণ করতেন। (From what I know of the track across from Asia to America, and from what I have seen of the Japanese and Chinese, I have no doubt whatever that from very early times they occasionally visited our American shores (Kennon, 2005)”

উপরন্তু তখনকার সময়ে মুসলমান উনারা ছিলেন শিক্ষা দীক্ষাসহ সর্বেক্ষেত্রে অগ্রগামী। সমুদ্রে জাহাজ পরিচালনায় মুসলমান উনাদের ছিল অসামান্য দক্ষতা। সে হিসেবেও ঘটনা দুটিকে সত্য প্রতিপাদন করা যায়।