তুরস্ক মিশর হয়নি, বাংলাদেশ কি মিশর হবে?

ডেস্ক : বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতির মধ্যে সরকারের কৌশুলী পদক্ষেপের কারণে রাজনৈতিক স্থীরতা থাকলেও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অস্থীতিশীল। তারমধ্যে সন্ত্রাসী হামলা ও দেশের নিরাপত্তা ইসু্যটি বেশ জটিল আকার ধারণ করে আছে। সম্ভবত সরকারও তা সামলা দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

একসময় সরকারের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিবর্গদের মুখে বাংলাদেশ নিয়ে পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্রের কথা প্রকাশ্যে শোনা গেলেও এখন অনেকটা নিরব ভূমিকা পালন করছে।

যাই হোক দেশের সার্বিক পরিস্থিতি কেমন চলছে, কোন দিকে যাচ্ছে তা বুঝতে হলে এশিয়া মহাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বুঝতে হবে এবং সে আঙ্গিকে বিশ্লেষণ করতে হবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি।

এশিয়ার দেশগুলোর শাসকদের শক্তি প্রধানত দুটি শক্তিমান দেশের পক্ষপাতিত্বকে ঘিরে প্রকাশ পায়। একটি হচ্ছে আমেরিকা, অপরটি রাশিয়া। বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাশীন সরকার রাশিয়াপন্থী হওয়ায় যতো আপদ চেপে আসছে বাংলাদেশের উপর, যদিও বাংলাদেশের উপর রাশিয়ার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। তবে ভারতের মার্কিনপন্থী বিজেপি সরকারের প্রভাব আছে প্রচন্ডরকমের।

আমরা যদি এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর দিকে তাকাই, তাহলে বাংলাদেশের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারবো।

প্রথমেই ধরা যাক পাকিস্তান। দেশটিতে যখন জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ক্ষমতায় ছিলো  তখন অনেকেই তাকে আমেরিকার দালাল ভাবতো। এটা ছিলো সম্পূর্ণ ভুল। সেই ভুলটি ভাঙলো পারভেজ মোশাররফকে যখন ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো। চীনপন্থী বেনজির ভুট্টোকে হত্যা করা হলো। ক্ষমতায় আনা হলো নওয়াজ শরীফকে, যে শুধু মার্কিনপন্থী নয় বরং মার্কিনীদের হাতে গড়া পুতুল।

এরপর ধরি আফগানিস্তান। আগে ছিলো কমিউনিস্ট সরকার। সেটাকে দমন করার জন্য আমেরিকা স্থানীয়দের হাতে অস্ত্র দিলো। তাদের দিয়ে দমন করলো রাশিয়াকে। এরপর নিজেরাই আবার তাদের দমন করে নিয়ে এলো ১০০% মার্কিনপন্থী সরকার।

ভারত : বহুদিন ক্ষমতায় ছিলো রুশপন্থী কংগ্রেস সরকার। তাকে সরিয়ে ক্ষমতায় আনা হলো শতভাগ মার্কিনপন্থী বিজেপিকে। চায়ের দোকানদার হয়ে গেল প্রধানমন্ত্রী।

শ্রীলংকা : ক্ষমতায় ছিলো রাজাপাকসে। তাকে ব্যাকিং দিতো চীন, সাথে ছিলো রাশিয়া। রাজাপাকশেকে সরিয়ে ক্ষমতায় আনা হয়েছে মৈত্রীপালা সিরিসেনাকে। ইতিমধ্যে তামিল টাইগারদের দমনের জন্য রাজাপাকশেকে পশ্চিমারা যুদ্ধাপরাধী বলে গন্য করেছে এবং সম্ভবত রাজাপাকশের বিচার হতে চলেছে।

নেপাল : নেপালে এখন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি এবং রাষ্ট্রপতি বিদ্যা ভণ্ডারী। এরা একীকৃত মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য, তাদের পেছনে চীন-রাশিয়ার প্রভাব বিদ্যামান। এ কারণে বর্তমান মোদি সরকারের সাথে তাদের দ্বন্দ্ব চরমে। আমেরিকা ও মোদি চেয়েছিলো নেপাল হিন্দু রাষ্ট্র থাকুক, কিন্তু চীন-রাশিয়া চেয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ হোক। ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন ঠেকাতে নেপাল বাধ্য হয়ে সকল ভারতীয় টিভি চ্যানেল নিষিদ্ধ করে।

মায়ানমার : ক্ষমতায় ছিলো চীনপন্থী সামরিক জান্তা। তারা গিয়ে ক্ষমতায় এখন চলে এসেছে অং সাং সুকি, যে শতভাগ মার্কিনপন্থী।

ভুটান : ভুটানকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বলা যায়। তাই ভারতে যে পন্থী সরকার হোক ভুটান তার বাইরে নয়। তাই ভুটানকে এখন মোদিপন্থী বা মার্কিনপন্থী বললে সমস্যা হবে না। উল্লেখ্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে লেখাপড়া করা এবং জাতিসংঘ থেকে সনদপ্রাপ্ত।

মালদ্বীপ : ক্ষমতায় আব্দুল্লাহ ইয়ামিন আব্দুল গাইয়ুম, মার্কিনপন্থী। দুই বছর আগে ইয়ামিন সরকার একজন রাশিয়ান এজেন্ট গ্রেফতার করে এবং মার্কিন ঘাটি গুয়ামে পাঠিয়ে দেয়। উল্লেখ্য মালদ্বীপ মার্কিন-সৌদি বলয়ে সংযুক্ত থাকার কারণে ইরানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।

প্রসঙ্গক্রমে মিশর-তুরস্কের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। তিন বছর আগে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একজন প্রেসিডেন্টকে যখন সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করা হয়েছিল তখন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অভ্যুত্থানকারীদের সমর্থনে রাস্তায় নেমে এসেছিল। ঘটনাটি মিশরের এবং এর মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম মিশরীয় প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির অমানবিক পতন ঘটেছিল।

মুরসির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মিত্র ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগানও জানতেন যে, তার নিজ দেশের সেনাবাহিনীও যেকোনো মুহূর্তে একই ঘটনা ঘটাতে পারে।

কিন্তু সত্যিই যখন অভ্যুত্থানকারীরা সরকার উৎখাতে ইস্তাম্বুল ও আঙ্কারার রাস্তায় নেমে আসলো তখন এরদোগানের প্রতিক্রিয়া হলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। এরদোগানের ডাকে ঘোষিত কার্ফ্যু অমান্য করে হাজার হাজার সাধারণ জনগণ রাস্তায় নেমে এসে অভ্যুত্থানকারীদের প্রতিরোধ করে।

এবার আসি বাংলাদেশে। বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগ সরকার রাশিয়াপন্থী। সঙ্গতকারণেই আমেরিকা বাংলাদেশকে শান্তিতে থাকতে দিবেনা। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইএস নামধারী সন্ত্রাসবাদের উত্থান, সহিংসতার ঘটনা ইত্যাদি হচ্ছে কিছু অশান্তির নমুনা। এসব ঘটনা ততক্ষণ পর্যন্ত স্থায়ী হবে, যতক্ষণ না মার্কিনপন্থী কোন দল ক্ষমতায় না আসে। বাংলাদেশ ও নেপাল বাদে বাকিদেশগুলোর দিকে খেয়াল করলে দেখা যাবে সেগুলো যখন মার্কিন গ্রিপের বাইরে ছিলো তখন সেখানে নানা ধরনের যুদ্ধ, সহিংসতা, বোমা হামলা হয়েছে। কিন্তু যেই মার্কিনপন্থী ক্ষমতায় এসেছে, ব্যস সব চুপ। কিন্তু দেশ চলে গেছে সাম্রাজ্যবাদী মার্কিনীদের নিয়ন্ত্রণে।

তাই বাংলাদেশের ক্ষমতায় মার্কিন পছন্দের কেউ না বসা পর্যন্ত আপাতত বাংলাদেশ স্থিতিশীল হচ্ছে না। তবে এটা নিশ্চিত যে, মার্কিন পছন্দের মধ্যে আওয়ামী-বিএনপি কোনটাই নেই। তাই আবারো মাইনাস টু হওয়ার অপেক্ষায় দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট।

কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দের ড. ইউনুস বা ফজলে আবেদের মত কেউ ক্ষমতায় আসলে হয়ত দৃশ্যত বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা আসতে পারে, কিন্তু বাস্তবে সেটা বাংলাদেশের জন্য ভয়ঙ্কর কোন ভবিষ্যত ডেকে আনতে পারে। হতে পারে সেটা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের মত। সেটা হয়ত বাংলাদেশীদের জন্য আরো অন্ধকার কোন কিছু বয়ে আনবে।