ভারতে গরুর গোশত রফতানীকারক শীর্ষ ১০ সংস্থার মালিক হিন্দু
![](https://i0.wp.com/newsnine24.com/wp-content/uploads/2017/03/beef-exporters-chart-india.png?fit=1194%2C804&ssl=1)
ডেস্ক: ভারতে গরু জবাই নিষিদ্ধ, উত্তরপ্রদেশে কসাইখানা বন্ধ করা নিয়ে যখন উত্তেজনা চলছে তখন দেশের শীর্ষ ১০ গোশত রফতানিকারক সংস্থার মালিকই হিন্দু বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংস্থা কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রফতানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত দেশের ৭৪ কসাইখানার মধ্যে ১০টির মালিক হিন্দু। এমনকি ভারতের সবচেয়ে বড় এবং আধুনিক কসাইখানার মালিকও হিন্দুরা।
দেশের সবচেয়ে বড় কসাইখানা তেলেঙ্গানার মেডক জেলার রুদ্রম গ্রামে অবস্থিত। কমপক্ষে ৪০০ একরজুড়ে থাকা ওই কসাইখানার মালিক সতীশ সভারওয়াল। এটি ‘আল কবীর এক্সপোর্টস প্রাইভেট লিমিটেড’ চালিয়ে থাকে। ভারতের মুম্বাইয়ের নরিম্যান পয়েন্টে অবস্থিত সদর দফতর থেকে তারা মধ্য-পূর্বের কয়েকটি দেশে গবাদি পশুর গোশত রফতানী করে।
‘আল কবীর’-এর দফতর দুবাই, আবুধাবি, কুয়েত, জেদ্দা, দাম্মাম, মদিনা, মাসকট, দোহা এবং অন্যত্র রয়েছে। সংস্থাটি ২০১৬ সালে কমপক্ষে ৬৫০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে।
‘অ্যারাবিয়ান এক্সপোর্টস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর মালিক সুনীল কাপুর। এদের সদর দফতর ভারতের মুম্বাইতে। সংস্থাটি বিফের (গরুর গোশত) পাশাপাশি ভেড়ার গোশতও রফতানী করে। এর পরিচালক বোর্ডে বিরনত নাগনাথ কুডমুলে, বিকাশ মারুতি শিন্দে এবং অশোক নারং রয়েছে।
‘এমকেআর ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টারস প্রাইভেট লিমিটডে’-এর মালিক মদন অ্যাবট। অ্যাবট কোল্ড স্টোরেজ প্রাইভেট লিমিটেডের কসাইখানা রয়েছে পাঞ্জাবের মোহালি জেলায়। এর পরিচালক সানি অ্যাবট। ‘আল নূর এক্সপোর্টস’-র মালিক সুনীল সুদ। কোম্পানিটির দফতর ভারতের দিল্লিতে। কিন্তু এর কসাইখানা এবং গোশত প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্ট রয়েছে উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগরের শেরনগর গ্রামে। এছাড়া মীরাট এবং মুম্বাইতেও তাদের প্ল্যান্ট রয়েছে। সংস্থাটির অন্য অংশীদার হলো অজয় সুদ। সংস্থাটি ১৯৯২ সালে তৈরি হয় এবং তারা ৩৫টি দেশে ‘গরুর গোশত’ রফতানী করে থাকে।
‘এওভি এক্সপোর্টস প্রাইভেট লিমিটেড’র কসাইখানার অবস্থান উত্তরপ্রদেশের উন্নাউতে। এদের গোশত প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্ট রয়েছে। এর পরিচালক ওপি অরোরা। সংস্থাটি ২০০১ সাল থেকে কাজ করছে। তারা মূলত গরুর গোশত রফতানি করে থাকে। কোম্পানির সদর দফতর নয়ডাতে। এওভি এগ্রো ফুডসের পরিচালক হলো অভিষেক অরোরা।
‘স্ট্যান্ডার্ড ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর কমল ভার্মা। কোম্পানিটির কসাইখানা এবং প্ল্যান্ট উত্তর প্রদেশের উন্নাউতে অবস্থিত।
‘পোন্নে প্রোডাক্টস এক্সপোর্টস’-এর পরিচালক এস স্বস্তি কুমার। এদের গরুর গোশতসহ মুরগির গোশত এবং ডিমের ব্যবসাও আছে। এদের প্ল্যান্ট রয়েছে তামিলনাড়ুতে।
‘অশ্বিনী এগ্রো এক্সপোর্টস’-এর কসাইখানা রয়েছে তামিলনাড়ুর গান্ধীনগরে। কোম্পানিটির পরিচালক কে রাজেন্দ্রন। তার মতে, ‘ধর্ম নিতান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। ব্যবসার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক থাকা উচিত নয়।’ মহারাষ্ট্র ফুড প্রসেসিং অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজের হলেন সানি খাট্টার। সেও মনে করে, ‘ধর্ম এবং ব্যবসা ভিন্ন জিনিস। দুটোকে মিশিয়ে ফেলা ঠিক নয়।’
সানি খাট্টার বলেছে, ‘আমি হিন্দু এবং গরুর গোশত ব্যবসা করি তাতে কী হয়েছে? এই ব্যবসা করে কেউ খারাপ হিন্দু হয়নি।’ কোম্পানিটির কসাইখানা মহারাষ্ট্রে অবস্থিত।
এসব ছাড়াও হিন্দুদের এমন কোম্পানি রয়েছে যারা গরুর গোশত রফতানী ক্ষেত্রে রয়েছে। এদের কসাইখানা না থাকলেও এরা গোশত প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে প্যাকেজিং করে তা রফতানী করে। কনক ট্রেডার্স এরকমই একটি প্রতিষ্ঠান। এর মালিক রাজেশ স্বামী বলেছে, ‘এই ব্যবসায়ে হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে কোনো বৈষম্য নেই। দুই ধর্মের মানুষজন একসঙ্গে কাজ করে থাকে। এতে কেউ হিন্দু হলেও তা কোনো ব্যাপার নয়।’ তার মতে, কসাইখানা বন্ধ হলে হিন্দু-মুসলিম উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ওই ব্যবসায়ে প্রচুর সংখ্যক হিন্দু সম্প্রদায় সরাসরি মালিক না হলেও তারা পরিচালক, গুণমান ব্যবস্থাপক, উপদেষ্টাসহ এ ধরনের বিভিন্ন পদে কাজ করে।