এডিপির আকার দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে, রেকর্ড ৭ দশমকি ২৪ ভাগ প্রবৃদ্ধি

আসছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। আজ রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় জানানো হয়েছে, এ বছর দেশে রেকর্ড ৭ দশমকি ২৪ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, সরকার অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, সেজন্য এডিপির আকারও বাড়ানো হয়েছে। আমাদের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। রাজস্ব আদায়, আমাদানি-রপ্তানি ও রেমিট্যান্সসহ সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বেড়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল ২১ হাজার কেটি টাকা। এখন এটি দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলতেন, আমাদের জিডিপির তুলনায় বিনিয়োগ কম হচ্ছে, প্রবৃদ্ধিও ৬ শতাংশের ঘরে আটকে আছে। কিন্তু পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে চলতি অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ২৪ ভাগ। যা যে কোনো সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ। তিনি বলেন, একইসাথে মাথপিছু আয় এবছর বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১ হাজার ৬০২ ডলার, যা আগের বছর ছিল ১ হাজার ৪৬৫ ডলার। জিডিপির তুলনায় বিনিয়োগের পরিমাণ চলতি অর্থবছর বেড়ে হয়েছে ৩০ দশমিক ২৭ ভাগ। এদিকে বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ ভাগ হতে পারে। এবিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংককে ধন্যবাদ যে তারা এত বেশি হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। কেননা তারা সব সময় রক্ষণশীল প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়ে থাকে। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে তারা অনেক আশাবাদী এ কথাও প্রতিবেদনে বলেছে। এর আগে তারা যতগুলো পূর্বাভাস দিয়েছে প্রকৃত অর্জন তার থেকে বেশি হয়েছে। ৬ দশমিক ৮ শতাংশের পূর্বাভাস দিলেও ৭ দশমিক ২৪ ভাগ অর্জনে খুব বেশি ফারাক নেই।

তিনি বলেন, বিশ্বে একমাত্র ভারত ৭ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, আর বাংলাদেশ এই অর্জন করল। আমরা ৬ শতাংশের স্থবিরতা কাটিয়ে এখন ৭ শতাংশের উপর প্রবৃদ্ধি করছি। আসছে ২০১৭-১৮ অর্থবছর প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। আমরা এটিও অর্জন করব।

মন্ত্রী বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ৭ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি অর্জনের পেছনে সকলের অবদান রয়েছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল এটি। সরকারের ধারাবাহিকতার ফলে এ অর্জন হয়েছে। এখন আমাদের বিনিয়োগ করতে হবে অবকাঠামো খাতে, শিক্ষা ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে। কেননা এর মাধ্যমে আমরা কয়েকগুণ বেশি ফিরে পাবো। আমরা চাই, আগামী এক বছরের মধ্যে সকলের জন্য বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে। সকল বিনিয়োগকারীদের জন্য বিদ্যুত্ নিশ্চিত করতে।

রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে এমন তথ্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রী বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমেছে কিন্তু অপ্রাতিষ্ঠানিক ভাবে রেমিট্যান্স বেড়েছে। মোবাইল  ব্যাংকিং শুরু হওয়ার পর সাধারণ ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় কমে গেছে। হুন্ডি ছাড়া অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থায় যে রেমিট্যান্স আসছে তা হিসেবের আওতায় নিয়ে আসা হবে। বিকাশের মতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রেরণের জন্য আইনি কাঠামো তৈরি হবে। ফলে প্রকৃত রেমিট্যান্স বাড়বে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সম্প্রতি হাওরে ফসলহানির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, এ জন্য আমাদের প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব পরবে না। এটি আশঙ্কা মাত্র।