এসপিএম প্রকল্প: ফের হাজার কোটি টাকা খরচ মেয়াদ শেষ হওয়া প্রকল্পে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বছরের জুনে মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপ লাইন শীর্ষক প্রকল্পের। আমদানি করা জ্বালানি তেল খালাস সহজীকরণ এবং দেশে ক্রমবর্ধমান জ্বালানি তেলের চাহিদাপূরণ ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এখন সেই একই প্রকল্পে চতুর্থ সংশোধনীর নামে ফের খরচ বাড়ানো হচ্ছে হাজার কোটি টাকারও বেশি। যার প্রস্তাবের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে খোদ পরিকল্পনা কমিশন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় সংশোধনীতে আলোচ্য প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এবং ব্যয় নির্ধারণ করা ছিল ৭ হাজার ১২৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। জুন পর্যন্ত ভৌত কাজের অগ্রগতি ৯৭ শতাংশ। খরচ হয়েছে ৬ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। অর্থাৎ, আর্থিক অগ্রগতি ৮৬.৭৭ শতাংশ। এবার চতুর্থ সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে মোট অনুমোদিত ব্যয়ের চেয়ে ১ হাজার ৯৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। একই সঙ্গে আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হয়েছে। চতুর্থ সংশোধনী অনুমোদন পেলে এই প্রকল্পের ব্যয় গিয়ে দাঁড়াবে ৮ হাজার ২২২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। আর তিন বছরের প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে দাঁড়াবে ৯ বছরে।

গত মঙ্গলবার ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপ লাইন শীর্ষক প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিভিন্ন খাতে ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগ। প্রশ্ন তুলে এসপিএম প্রকল্পে ৯৭ শতাংশ কাজ হওয়ার পরও নতুন করে আরও এক বছর এবং হাজার কোটি টাকার বেশি বৃদ্ধির কারণ জানতে চওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ দিয়ে ব্যয় যৌক্তিকীকরণ করার কথা বলা হয়েছে।

শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) আবদুল বাকী বলেন, পিইসি সভায় অনেকগুলো পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সবগুলো বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। ওদের কিছু ক্লেইম ছিল সেগুলোর কিছু সেটেল করেছে, বাকিগুলোর কী অবস্থা সেগুলোর কাগজপত্র সব জমা দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যয় যৌক্তিকীকরণ করতে বলা হয়েছে। কাগজ পত্রসহ ব্যয় যৌক্তিকীকরণ করে ফের ডিপিপি সংশোধন করে পাঠাতে বলা হয়েছে। সেগুলো দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কাগজপত্র আসলে তখন হয়তো আরও বিস্তারিত বলা যাবে।

তিনি আরও বলেন, তাদের বক্তব্য অনুযায়ী ডলার রেট ওঠানামার কারণেই অনেক বড় একটা টাকা বাড়ছে। আর পরামর্শকদের কিছু ক্লেইম ছিল, সেগুলো সেটেল করতে হচ্ছে। এ ছাড়া প্রকল্পের ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হলেও পেমেন্ট হয়েছে ৮৬ শতাংশের মতো। কাগজপত্র আসলে তখন হয়তো আরও বিস্তারিত বলা যাবে।

চতুর্থ সংশোধনী প্রস্তাবে মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বৃদ্ধি, ইপিসি ঠিকাদার ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের উত্থাপিত বিভিন্ন দাবির বিপরীতে অতিরিক্ত ব্যয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সা¤প্রতিক সার্কুলার অনুযায়ী আয়কর হিসেব করা এবং প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ার কারণে ব্যয় বৃদ্ধি করার প্রয়োজন। প্রকল্প প্রস্তাবনা সূত্রে জানা গেছে, শুধু ডলার রেট বাড়ার কারণে যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম, নির্মাণ ও পূর্ত এবং পরামর্শ সেবা খাতে মূল ব্যয়ের চেয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে ৫৩৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, কমিশনিংসহ অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় প্রয়োজন। এ ছাড়া বাস্তবায়ন কাজ শেষে এমপ্লয়ারের পক্ষ থেকে কাজ বুঝে নেওয়া, ঠিকাদারের বিল পরিশোধসহ এ—সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক বিষয়াদি শেষ করতে বেশ কিছু সময় প্রয়োজন হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের মেয়াদ জুন ২০২৪ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রয়োজন হচ্ছে।

এসপিএমের প্রজেক্ট ম্যানেজার মনজেদ আলী শান্ত বলেন, ডলার রেট পরিবর্তন এবং কমিশনিংসহ কিছু কাজ বাকি থাকায় প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

চীনের এক্সিম ব্যাংকের ঋণে চীনের সঙ্গে জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটি ২০১৫ সালে একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রথমে বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয় নভেম্বর—২০১৫ হতে ডিসেম্বর—২০১৮ পর্যন্ত। প্রকল্পটি কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরশেনের (বিপিসি) আওতাধীন ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)।

খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারের মহেশখালীতে নির্মাণাধীন ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপ লাইনের কমিশনিং আগামী আগস্টের শেষ দিকে শুরু হবে। এরপরই উদ্বোধন করা হবে প্রকল্পটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কমিশনিং শেষে আগামী সেপ্টেম্বর অথবা অক্টোবরে এসপিএম প্রকল্পটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।