পশ্চিমবঙ্গের পাঠ্যপুস্তকে রংধনু, আসমানি, আম্মা শব্দে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ

ডেস্ক: এক পশলা বৃষ্টির পর রোদ উঠলে আকাশে যে সাতরঙা বর্ণচ্ছটা চোখে পড়ে  বাংলাদেশে তার যথাপোযুক্ত নাম ‘রংধনু’ বলা হলেও প্রতিবেশী অঞ্চল পশ্চিমবঙ্গে কিন্তু রামধনু শব্দটাই প্রচলিত।

কিন্তু সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকার ৬ষ্ঠ শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে স্পেকট্রাম বা বর্ণালির বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রংধনু শব্দটি ব্যবহার করেছে, আর তার পর থেকেই তা নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক।

rainbow_textbook

রামধনু থেকে রাম শব্দটি বর্জন করার মধ্যে অনেকে সাম্প্রদায়িকতা বা ইসলামী-করণের চেষ্টা দেখছেন – আর রংধনু শব্দটির ব্যবহার নিয়ে ভাষাবিদদের মধ্যেও মতভেদ দেখা যাচ্ছে।

রাজ্যের পাঠ্যপুস্তক কমিটি অবশ্য বলছে, এটা নিছকই নতুন একটা শব্দপ্রয়োগ, এতে সাম্প্রদায়িকতা খোঁজার চেষ্টা অনুচিত।

ওদিকে সরকারি পাঠ্যপুস্তকে রামধনুর বদলে কেন রংধনু শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে – তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে মূল ধারার গণমাধ্যম, সর্বত্রই চলছে তুলকালাম।

যদিও এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ পাঠ্যপুস্তক কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার বলেছেন, রংধনু শব্দটিই বেশি উপযুক্ত – কারণ সেটি এর বিজ্ঞানকে বেশি ভালভাবে ব্যাখ্যা করে – আর এতে রাজনীতি খোঁজাও অর্থহীন।

কিন্তু রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি বিষয়টিকে অত সাদামাটাভাবে দেখতে রাজি নয়, তারা মনে করছে রামধনু থেকে রাম শব্দটি ফেলে দেওয়ার পেছনে সরকারের একটা সাম্প্রদায়িক নকশা আছে।

বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যর আপত্তি আছে ওই একই বইতে আসমানি, আম্মা ইত্যাদি শব্দের ব্যবহারেও।

শমীক ভট্টাচার্য বলছেন, “এটা কিছুতেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা হতে পারে না, বরং এটা একটা বিভাজনের রাজনীতির প্রয়াস। রাম ভারতীয় সমাজে একটা মূল্যবোধের প্রতীক। সেখানে রাম শব্দটি পরিহার করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কী বার্তা দিতে চাইছে সেটা বোঝা মোটেও কঠিন নয়!”

বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত বহুল সমালোচিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনও এই প্রসঙ্গ টেনে টুইট করেছেন – তার ছেড়ে আসা মাতৃভূমির মতো এবার পশ্চিমবঙ্গেও পাঠ্যবইয়ের ইসলামিকরণ শুরু হয়েছে।

তবে কলকাতার প্রবীণ ভাষাবিদ পবিত্র সরকার রংধনু শব্দটার ব্যবহারকে সেই দৃষ্টিতে দেখতে রাজি নন – বরং তার মতে বাংলা ভাষায় রামধনু, রংধনু দুটোই অনায়াসে চলতে পারে।

“যদি রংধনু শব্দটায় অর্থটা ঠিকমতো প্রকাশ পায় এবং অর্থের কোনও অস্পষ্টতা না-থাকে তাহলে আমি তো তাতে কোনও অসুবিধা দেখি না। রংধনু শব্দটা তো আমার বেশ ভালই লাগছে, দুটো শব্দই পাশাপাশি থাকলে ক্ষতি কী?” বলছেন তিনি।

পবিত্র সরকার আরও জানাচ্ছেন, পূর্ব পাকিস্তান আমলে বেশ কিছু বাংলা শব্দ, যাতে রাম বা ইন্দ্র আছে সেগুলো পাল্টানো শুরু হয়েছিল। সেই চেষ্টা থেকেই রংধনু শব্দটার জন্ম – আর এটা এখন বাংলা ভাষার এক অপরিহার্য অংশ হয়ে গেছে বলেই তার অভিমত।

ফেসবুক-হোয়াটস্যাপে অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা প্রায় কেউই রংধনু শব্দটিকে অত উদারভাবে দেখতে রাজি নন, তারা রংধনু নিয়ে তাদের ক্ষোভ উগরে যাচ্ছেন অবিরাম।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের কমিটি অবশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছে পাঠ্যবইতে কোন শব্দ পাল্টানোর প্রয়োজন তারা দেখছেন না।