ডিম ও পোল্ট্রি ফিড রপ্তানির করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ

ডিমের দামে খামারে স্বস্তি বাজারে অস্বস্তি

ঢাকা: বাংলাদেশ পোল্ট্রি শিল্প অ্যাসোসিয়েশন ডিম ও পোল্ট্রি ফিড রপ্তানির করতে যাচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। এজন্য অ্যাসোসিয়েশন বিশ্ববাজারে জোর লবিং শুরু করেছে।

সূত্র জানায়, নতুন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ২০২১ সালের মধ্যে বছরে ১ হাজার ২০০ কোটি ডিম ও ১০০ কোটি ব্রয়লার উৎপাদনের স্বপ্ন দেখছে এই শিল্পটি। একই সময়ের মধ্যে দেশে প্রতিদিন সাড়ে ৪ কোটি ডিম ও প্রায় ৪ হাজার টন মুরগির গোসের প্রয়োজন হবে। বর্তমানে এর চাহিদা এবং উৎপাদন প্রায় সমান সমান।

সূত্র জানিয়েছে, ২০০৫ সালের আগেও দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিপুল পরিমান ডিম বিদেশে রপ্তানি হতো। কিন্তু ২০০৭ ও ২০০৯ সালে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জাতে (বার্ড ফ্লু) আক্রান্ত হওয়ায় পোলট্রি শিল্পে বিপর্যয় নেমে আসে। বার্ড ফ্লু আঘাত হানায় ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন ফর অ্যানিমেল হেলথের (ওআইই) শর্তের কারণে পোল্ট্রিজাত পণ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়।

সুখবর এটাই বর্তমানে এ বিপর্যয় কাটিয়ে উঠছে এ খাতের উদ্যোক্তারা। এই চাহিদা পূরণ করতে এ খাতে কমপক্ষে ৫০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন। এই বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে ব্যাংক ঋণের সুদ হার কমানো, বীমার আওতায় পোল্ট্রি খাতকে নিয়ে আসা ও সরকারি সহায়তা দেয়ার সুপারিশ এ খাত সংশ্লিষ্টদের। এখন দিনে উৎপাদন হয় প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ থেকে ২৫ লাখ ডিম।

জানা গেছে, আমিষ ও পুষ্টি চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশে দিন দিন বেড়ে চলছে পোল্ট্রি শিল্প। বর্তমানে এ শিল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ১৯৮০ সালের দিকে বাণিজ্যিকভাবে পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশ ঘটতে থাকে। গত তিন দশকে তা দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পখাতে রূপ নিয়েছে। প্রায় ৬০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এখন এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। এ খাতে কর্মরতদের প্রায় ৪০ ভাগই নারী। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ ও নারীর ক্ষমতায়নে কৃষির পরই সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প। বাংলাদেশের মোট প্রাণিজ আমিষের শতকরা ৪০/৪৫ ভাগই জোগান দেয় পোল্ট্রি শিল্প।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি শিল্প সমন্বয় কমিটির (বিপিআইসিসি) মিডিয়া উপদেষ্টা সাজ্জাদ হোসেন জানান, বাংলাদেশে ডিমের যে চাহিদা তা অনেকটাই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের পোল্ট্রি উদ্যোক্তারা আবারো পোল্ট্রি পণ্য রপ্তানির প্রস্তুতি নিচ্ছে। তার মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে গরুর গোস্তের ওপর থেকে ভর্তুকি তুলে নেয়া হচ্ছে। মুরগির ওপর থেকেও সাবসিডি ধীরে ধীরে তুলে নেয়া হবে। এতে তাদের উৎপাদন খরচ বেশ কিছুটা বাড়বে। তবে ওই সব দেশে বিলিয়ন ডলারের মার্কেট উন্মুক্ত হতে পারে।

পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চার সাপ্তাহিক উৎপাদন প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ। সক্ষমতা আছে ১ কোটি ৩৫/৪০ লাখের। আগে ডিম এবং ব্রয়লার মুরগি আমদানি করতে হতো। এখন তা শূন্যের কোঠায়। এ খাতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির বর্তমান হার প্রায় ১৫ শতাংশ। দেশের জিডিপিতে পোল্ট্রি শিল্পের অবদান ২.৪ থেকে ৩ শতাংশ।

বিপিআইসিসি সূত্র জানায়, আগে হ্যাচিং ডিম আমদানি করতে হতো। এখন বাংলাদেশে ৭টি গ্রান্ড প্যারেন্টস্টক (জিপি) ফার্ম আছে। প্যারেন্টস্টক বা পিএস ফার্মের সংখ্যা ছোট-বড় মিলে প্রায় ৮০টি। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন দিয়েই দেশের হ্যাচিং ডিমের শতভাগ চাহিদা পূরণ হচ্ছে।