ভারতীয় অর্থনীতির পতন আসন্ন! ইঙ্গিত ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রীর

ডেস্ক: এখন থেকে তিন বছর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচন শেষে ভারতে যখন বিজেপি’র সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মূল শ্লোগান ছিল ‘আচ্ছা দিন আগায়ে’। মোদি এও বলেছিলো যে, ২০২০-এর মধ্যে এক ‘নয়া ভারত’ দেখবে বিশ্ব। ভারতীয়দের মোদি ও আরএসএস পরিবার ভবিষ্যত সুসময়ের স্বপ্নে ভাসিয়েছিল– বিশেষত তরুণদের।
কিন্তু সেই শাসক দলেরই অন্যতম সিনিয়র নেতা ৮০ বছর বয়সী যশোবন্ত সিনহা, যে দেশটিতে দুইবার অর্থমন্ত্রীও ছিলো এবং যার এক পুত্র কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভারও সদস্য–গত ২৭ সেপ্টেম্বর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় মোদির অর্থনৈতিক নীতি কৌশলের সমালোচনা করে যে লেখাটি লিখেছে তা এ পর্যন্ত ৯৭ হাজারের অধিক শেয়ার হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনীতি বিষয়ক কোন লেখা তাতক্ষণিকভাবে পাঠের এটা একটা রেকর্ড। বলা বাহুল্য, ভারতীয় রাজনৈতিক পরিমন্ডলে লেখাটি ছোটখাটো ভূমিকম্পতুল্য প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। পুরো ভারতে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয় বাদ দিয়ে এখন প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে অর্থনীতি।
‘আমার এখন কথা বলা প্রয়োজন’ (আই নিড টু স্পিক আপ নাউ) শিরোনামের ঐ লেখায় যশোবন্ত সিনহা ভারতীয় অর্থনীতির সর্বশেষ বিবরণ দিয়ে বলেছে,
(১) ভারতীয় অর্থনীতি বর্তমানে এক নৈরাজ্যকর অবস্থায় পড়েছে; সরকারের অর্থনৈতিক পদক্ষেপগুলো লাখ লাখ বেকার তৈরি করেছে; (২) বিগত দশকগুলোর মধ্যে ভারতে বেসরকারি বিনিয়োগ বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে; প্রবৃদ্ধিও ক্রমে নীচুমুখী; (৩) দেশের অন্তত ৪০টি বড় কোম্পানি দেউলিয়া হওয়ার পথে আছে; (৪) ভারতীয় অর্থনীতির একটি কষ্টকর পতন আসন্ন।
লেখার শেষ পর্যায়ে ভারতীয় অর্থনীতির উদ্ধারকে দুইবারের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী আরেকটি ‘মহাভারত যুদ্ধ’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন।
যশোবন্ত সিনহা’র এই লেখার ১০ দিন আগে বিজেপি’র আরেক প্রভাবশালী নেতা অর্থনীতিবিদ এবং পরিকল্পনা কমিশনের প্রাক্তন সদস্য সুব্রানিয়াম স্বামী এক সাক্ষাতকারে মোদি সরকারের অর্থনৈতিক নীতির তীব্র সমালোচনা করে ভবিষ্যতবাণী করেছে যে, ‘মন্দা আসন্ন।’ বিজেপির আরেক প্রাক্তন মন্ত্রী এবং অর্থনীতিবিদ অরুণ সুরি ৩ অক্টোবর এনডিটিভিকে এক সাক্ষাতকারে সিনহা ও সুব্রানিয়ামের উত্থাপিত মন্দার শঙ্কার সঙ্গে একমত পোষণ করে এর জন্য মুখ্যত গত বছর নভেম্বরে নেয়া নরেন্দ্র মোদির মুদ্রারহিতকরণ উদ্যোগকে দায়ী করেছে–যখন ভারতে গান্ধী সিরিজের সকল ৫০০ এবং ১০০০ রুপির নোট নিষিদ্ধ করা হয়। অরুণ সুরি ঐ ঘটনাকে ইতিহাসের বৃহত্তম ‘মানি লন্ড্রারিং’ ইভেন্ট হিসেবেও অভিহিত করেন।
বলাবাহুল্য, খোদ আরএসএস পরিবারের অভ্যন্তর থেকে এইরূপ বিবরণ ভারত জুড়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ তাঁদের সরকারের সমালোচকদের ‘হতাশ রাজনীতিবিদ’ হিসেবে অভিহিত করে অর্থনীতির অধোগতি মূলত স্বল্পস্থায়ী ‘টেকনিক্যাল’ কারণে হচ্ছে বলে উল্লেখ করলেও ৪ অক্টোবর রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ঘোষণা দিয়ে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্র ৭.৩ থেকে ৬.৭-এ নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে। রিজার্ভ অব ইন্ডিয়ার ঘোষণা সিনহা-সুব্রানিয়াম-অরুণ সুরির বক্তব্যকেই ন্যায্যতা দেয় এবং ভারতের অর্থনীতির অধোগতির উদ্বেগকে বাস্তব ঘটনা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। স্বভাবত এখন প্রশ্ন উঠেছে, ভারতীয় অর্থনীতির অবস্থা কতটা খারাপ? মন্দা কী আসন্ন?