বৃহত্তম সেনা অস্ত্রাগার বিস্ফোরণে অপূরণীয় ক্ষতির মুখে ভারত

নিউজ নাইন, ডেস্ক: গত সোমবার দিবাগত রাতে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের ওয়ারধা জেলায় অবস্থিত ভারতের সবচেয়ে বড় অস্ত্রাগারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এই অস্ত্রাগার ভারতের সবচেয়ে বড় সামরিক মজুদাগার। এশিয়ায় এটি দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ।

ভারতের এনডিটিভির সংবাদে জানা গেছে, অগ্নিকাণ্ডের পর ভয়াবহ বিষ্ফোরণ শুরু হয় এবং বিষ্ফোরণের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ ছিলো যে অস্ত্রাগারের বাইরে ৫-১০ কিলো দূরের এলাকাতেও শক্তিশালী ভূমিকম্পের মত কাপুনি সৃষ্টি হয় এবং ঘরবাড়ি ভেঙ্গে যায় এবং সমস্ত কাচের জানালা ভেঙ্গে পরে।

শক্তিশালী ভূমিকম্পের মত কাপুনি সৃষ্টি হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলেন, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আগ্নেয়াস্ত্র এবং বোমা মাটির নিচে রাখা হয়, যাতে কখনো বিস্ফোরণ ঘটলে মাটির উপরে বড় ধরণের ক্ষতি না হয়। যেহেতু আগ্নেয়াস্ত্রসহ উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বোমাগুলো মাটির নিচে ছিলো তাই, ভূমিকম্পন সৃষ্টি হয়েছে। এসব অস্ত্রবিস্ফোরণ মাটির উপরে হলে কয়েকটি এলাকা ধ্বংস হয়ে যেতো।

এদিকে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিশ্লেষকরা সন্দেহ পোষণ করছেন। তাদের মতে, এত বড় একটি অস্ত্রের গুদাম ২০-৫০ জন লোক দিয়ে চলে না। এই ঘটনার ভারতীয় সেনাবাহিনী মিথ্যা দাবি করছে, এতে নাকি মাত্র ২০ জন নিহত হয়েছে। আপনি যে কোন সেনা কর্মকর্তার সাথে কথা বললে জানতে পারবেন- এ ধরনের বড় কোন অস্ত্র গুদাম নিয়ন্ত্রণ ও সিকিউরিটির জন্য বিশাল জনবল ও আর্মি ফোর্স লাগে। সেখানে শত শত উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা ও সহস্রাধিক সৈনিক সম্ভার প্রয়োজন। এ কারণে সিকিউরিটির কথা বিবেচনা করে অস্ত্রের ডিপোগুলো সাধারণত সেনা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরেই স্থাপন করা হয়। সে হিসেবে এশিয়ার সবচেয়ে অস্ত্র ডিপো নিয়ন্ত্রণে কত হাজার সেনা কর্মকর্তা ও সৈন্য সম্ভার ছিলো তার হিসেব ভারতীয় সেনাবাহিনী এখন পর্যন্ত দেয়নি।

ঘটনার পর, অস্ত্রাগারের বাইরের এলাকা থেকে ১৭ জন আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়। তারা জানায়- তারা কিছুই স্মরণ করতে পারছে না। ডাক্তাররা জানায়- প্রচণ্ড বিষ্ফোরণের কারণে এত ভয়াবহ কম্পন তৈরী হয় যে, তারা তৎক্ষণাত অজ্ঞান হয়ে পড়ে, এ কারণে তাদের কিছুই মনে পড়ছে না। এ ঘটনা থেকে বোঝা যায়, ঘটনা পর বিষ্ফোরণের কারণে অস্ত্রাগার থেকে পালানো বা ভেতরে কোন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।যদিও প্রাথমিক খবরে দাবি করা হয়েছিলো, অস্ত্রগার থেকে মাত্র দুইজন ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিদের অবস্থা জীবিত না মৃত সে সম্পর্কে কোন খবর ভারতীয় মিডিয়া প্রকাশ হয়নি।

উল্লেখ্য, অস্ত্রাগারটি মহারাষ্ট্রের পুলগাঁওয়ে অবস্থিত। অ্স্ত্রাগারটি শুধু ভারতের সবচেয়ে বড় অস্ত্রের ডিপো নয়, বরং পুরো এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্রের ডিপো। এর আয়তন প্রায় ১০ হাজার একর বা ৪০ বর্গ কিলোমিটার। এর নাম রাখা হয়েছিলো- ‘সামরিক সম্ভারের মক্কা’ বা ‘Mecca Of Ammunition’। এতে সব ধরনের সামরিক সরঞ্জাম ও অস্ত্রের মজুদ ছিলো- ট্যাংক বিধ্বংসী মাইন, ট্যাংক শেল, আর্টিলারি শেল, মর্টার শেল এবং শক্তিশালী এক্সপ্লোসিভ। এ অস্ত্রের ডিপো থেকে দেশটির ১১ লক্ষ সেনাবাহিনীর মূল অস্ত্র সরবারাহ করা হতো। দেশের বিভিন্ন কারখানায় অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর এখানে এনে মজুত করা হয়। পরে সেসব অস্ত্রশস্ত্র বিভিন্ন এলাকায় বণ্টন করা হয়। এজন্য এটিকে ভারতের ১৪টি ফিল্ড অস্ত্রের ডিপোর ‘মাদার’ বা ‘মা’ বলে ডাকা হয়।

Explosions At Mecca Of Ammunition

ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে বিশ্লেষকরা বলছেন, সাধারণ একটি অস্ত্র গুদাম, যেমন জম্মু-কাশ্মীরে অবস্থিত খুন্দ্র অস্ত্রের ডিপোতে ২০০৭ সালে অস্ত্রের মজুদ ছিলো প্রায় ২২ হাজার মেট্রিক টন। তাহলে ভারতের বৃহত্তম ‘মাদার’ ডিপোতে যে অগ্নিকাণ্ড ঘটলো সেখানে কত লক্ষ মেট্রিক টন অস্ত্রের মজুদ ছিলো সেটার সঠিক তথ্য প্রকাশ না  করলেও অনুমান করে নেয়া যায়।