‘ইংল্যান্ড বিদেশীদের লুণ্ঠন করেছে, তাদের সভ্য বলতে পারেন না’ : প্রধান বিচারককে অ্যাটর্নি জেনারেল

ঢাকা: সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদ কর্তৃক বিচারকদের অপসারণে আনা সংশোধনীটি বাতিলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি (যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন) চলছে। শুনানির এক পর্যায়ে প্রধান বিচারক এসকে সিনহা ইংল্যান্ডের জুডিশিয়ারি নিয়ে একটি লেখা অ্যাটর্নি জেনারেলকে পড়তে দেন। পড়া শেষে প্রধান বিচারক বলে যে, ‘আপনি যে লিখিত যুক্তি দিয়েছেন, এ লেখা অনুসারে সেটি না জেনেই ইংল্যান্ডের ব্যাপারে দিয়েছেন। পৃথিবীতে একমাত্র সভ্য দেশ ইংল্যান্ড। অলিখিত সংবিধান পালনে চুল পরিমাণ এদিক-সেদিক হয়নি। বেক্সিটে হেরে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কী চেতনা, কী মানসিকতা।’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমি আপনার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি। ইংল্যান্ড বিদেশীদের লুণ্ঠন করেছে। তাদের সভ্য বলতে পারেন না।’ প্রধান বিচারক বলেন, ‘লুণ্ঠন অন্য জিনিস। আমেরিকাও লুণ্ঠন করছে।’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘তাদের (ইংল্যান্ড) আইনের শাসন ডেভেলপ করেছে- এটা বলতে পারেন।’ প্রধান বিচারক বলেন, ‘ইয়েস, তারা তাদের নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে পেরেছে।’ এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘অন্যদের লুণ্ঠন করে নিজের নাগরিকদের সুরক্ষা দিয়েছে।’

শুনানি চলাকালে বিচার বিভাগের ওপর বিচারপ্রার্থীদের ৯০ পার্সেন্ট প্লাস আস্থা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে প্রধান বিচারক। এ সময় সে অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আর আপনারা তো প্রধান বিচারককে পঙ্গু করে রাখার…।’ এরপর এই বক্তব্য আর শেষ করে সে।

প্রধান বিচারকসহ সাত বিচারকের বেঞ্চে আজ বুধবার শুনানি চলাকালে এসব কথা উঠে আসে। সকাল ৯টা ৯ মিনিটের দিকে শুনানি শুরু হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছে। রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরশেদ তার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন। আদালতের সুনামের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘কোর্টে যা হচ্ছে তা নিয়ে বিচারপ্রার্থী ও জনগণের একটা গণশুনানি নেন।’

তখন প্রধান বিচারক বলে, ‘বর্তমানে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা ৯০ ভাগের চেয়ে বেশি। চৌকি আদালত থেকে শুরু করে উচ্চ আদালত পর্যন্ত। আমি বাঁশখালীর চৌকি আদালতে গিয়েছি। ওখানে যতজন বিচারপ্রার্থী আসে, ডিসি অফিসেও এত আসে না। বাংলাদেশের যেকোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বিচার বিভাগ ১০০ গুণ ভালো। আপনারা তো প্রধান বিচারককে পঙ্গু করে রাখার…।’

তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আই এম নট টোটালি হ্যাপি।’

এ সময় প্রধান বিচারক বলে, ‘প্রধান বিচারক চেয়েছে যাদের লেখা পড়া আছে, যোগ্যতা আছে, তাদের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিতে। কিন্তু দেড় বছরেও নিয়োগ হয়নি। আপনারা যেটা চাচ্ছেন, আপনিও জানেন, সবাই জানে।’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘মার্শাল ল’তে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করা হয়েছে। এটা সংবিধানের বড় লজ্জা। সেখানে রিলিজিয়াস (রাষ্ট্রধর্ম) বিষয়টাও আছে।’

প্রধান বিচারক বলে, ‘ওখানে কম্প্রোমাইজ করলে এখানে নয় কেন?’।

শুনানির এক পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সমস্ত পা-িত্য আমাদের, আপনাদের। কিন্তু বাহাত্তরের সংবিধানে হাত দিতে পারেন না। যোগ করা যেতে পারে।’

আপিল বিভাগ বলেন, ‘জুডিশিয়াল ইমপ্রুভমেন্ট থাকবে না? জুডিশিয়াল রিভিউ থাকবে না? উঠিয়ে দেন। সংবিধানের এ টু জেড আমরা ব্যাখ্যা করব জনগণের অধিকার প্রশ্নে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে’।