জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাইয়ু শিপবিল্ডিং, চাকুরীচ্যূত হবে ৫০ হাজার লোক

ডেস্ক: জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে দাইয়ু শিপবিল্ডিং অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। জাহাজনির্মাণ খাতে বিশ্বের বৃহত্তম এ কোম্পানি নতুন ঋণ না পেলে এক সপ্তাহের মধ্যেই মারা পড়বে। খবর ব্লুমবার্গ।

দক্ষিণ কোরিয়ার ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে দাইয়ুর ১৪০ কোটি ডলার (১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি ওন) মূল্যের বন্ড রয়েছে। এ বন্ডের কিছু অংশ চলতি মাসেই ম্যাচিউর হচ্ছে। কিন্তু বন্ড গ্রহীতাদের দেয়ার মতো অর্থ দাইয়ুর তহবিলে নেই। লোকসানি কোম্পানিটি তাই বন্ডগুলোকে ইকুইটিতে রূপান্তরের প্রস্তাব দিয়েছে। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে দাইয়ুর ঋণদাতারা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বৈঠক করবে। এ বৈঠকে নির্ধারকের ভূমিকা রাখবে দক্ষিণ কোরিয়ার ন্যাশনাল পেনশন স্কিমের (এনপিএস) অবস্থান।

সিউলে এইচআই ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটিজ কোম্পানির বিশ্লেষক চই গুয়াং-শিক বলেছে, এনপিএস যদি ঋণ পুনর্গঠনের প্রস্তাবে সম্মত না হয়, তাহলে দাইয়ু শিপবিল্ডিং আর থাকবে না।

দাইয়ুর সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার কোরিয়া ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (কেডিবি)। গত বছর কেডিবি হানজিন শিপিং কোম্পানির ঋণ পুনর্গঠনে সম্মত না হওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম শিপিং কোম্পানিটি মৃত্যুমুখে পতিত হয়। হানজিনের পর দক্ষিণ কোরিয়ার ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হয়ে উঠেছে দাইয়ু।

হানজিনের মৃত্যুর কারণে বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে কন্টেইনারবাহী প্রায় ১০০ জাহাজ আটকা পড়েছিল। এতে করে বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে ছন্দপতনের আশঙ্কা দেখা গিয়েছিল। পাশাপাশি ঝুঁকিতে পড়েছিল আনুমানিক ১১ হাজার মানুষের জীবিকা।

দাইয়ু বন্ধ হওয়ার পরিণতি হানজিনের মৃত্যুর চেয়ে ভয়াবহ হবে। বিশ্বে জাহাজ নির্মাণ খাতের বৃহত্তম কোম্পানিটির পতন ৫০ হাজার মানুষের চাকরিচ্যুতির কারণ হবে। এছাড়া ডেনমার্কের এপি মোলার-মার্স্ক, নরওয়ের স্টাট অয়েলসহ বিভিন্ন কোম্পানির মোট ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের জাহাজ নির্মাণের কার্যাদেশও মুখথুবড়ে পড়বে।

দাইয়ুর ঋণদাতাদের বৈঠকে কেডিবির সঙ্গে এনপিএসের এক ধরনের শোডাউন হতে পারে। কেডিবি দাইয়ুর ৭৯ শতাংশের শেয়ার মালিক। অন্যদিকে এনপিএস নিজেই একটি কেলেঙ্কারির ঘটনায় সংকটে পড়েছে। স্যামসাং গ্রুপের দুটি কোম্পানির একীভবনে প্রভাব সৃষ্টির অভিযোগে এনপিএস চেয়ারম্যান বর্তমানে কারান্তরীণ রয়েছেন।

কেডিবি ও কোরিয়ার এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক গত মাসে দাইয়ুকে ২৫৩ কোটি ডলার (২ লাখ ৯০ হাজার ওন) ঋণ দিতে নিজেদের সম্মতির কথা জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি দাইয়ুর ১৩৯ কোটি ডলার ঋণ ইকুইটিতে রূপান্তরেও সম্মতি জানিয়েছে। তবে কেডিবি ও এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অব কোরিয়া শর্ত দিয়েছে, দাইয়ুর অন্য ঋণদাতা ও বন্ড মালিকরা তাদের প্রাপ্য অর্থের ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ইকুইটিতে রূপান্তর এবং অবশিষ্ট ঋণের পরিণতিকাল (ম্যাচিউরিটি) পাঁচ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে সম্মত হলেই তারা দাইয়ুকে নতুন ঋণ দেবে।

এনপিএসের পক্ষ থেকে কেডিবি ও এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের এ প্রস্তাব সংশোধনের আহ্বান জানানো হয়েছে। কেডিবি এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে বলে প্রতিষ্ঠানটির করপোরেট রিস্ট্রাকচারিং বিভাগের প্রধান জং ইয়ুং-সুক জানিয়েছে।