ডলারের বিপরীতে দাম বেড়েছে বাংলাদেশের টাকার

ঢাকা: আন্তর্জাতিক মুদ্রা ডলারের বিনিময়ের মূল্যমান ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে সক্রিয় হওয়ার পরও গত এক বছরে মার্কিন মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশের টাকার মান বেড়েছে  প্রায় ৫ শতাংশ।

গত সপ্তাহের শেষের দিকে আন্তঃ ব্যাংক পর্যালোচনায় জানাযায়,টাকার বিপরীতে মুদ্রা বাজারে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য পাওয়া গেছে ৮০ টাকা ৫০ পয়সা। বিগত দশ দিনে প্রায় প্রতি দিনই ডলারের মূল্য ১০ থেকে ১৫ পয়সা করে কমেছে।

চলতি ২০১২ অর্থবছরের জানুয়ারিতে ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে ৮৪ টাকা ৫০ পয়সায় পৌঁছায়, যা যে কোন সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদসহ  বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারকগন বলছেন, প্রবাসীদেও রেমিটেন্স ও বৈদেশিক ঋণ-সহায়তা বৃদ্ধি এবং অন্য বছরের তুলনায় আমদানি ব্যয় হ্রৃাস পাওয়ায় বাজারে ডলার প্রচুর পরিমাণে সরবরাহ রয়েছে। এ কারণেই ডলারের বিপরীতে টাকার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ডলারের এই মূল্যমান বিপরীতমূখী হওয়ার কারণে যাতে প্রবাসীদের রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ে যেন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সেজন্য অনেকদিন যাবত সক্রিয় ভূমিকায় রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে ১২০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করে নিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাসান জামান  বলেন, ‘‘রেমিটেন্স, রপ্তানী আয় ও বিদেশি সহায়তা প্রাপ্তির পাশাপাশি আমদানি চাহিদা কমেছে। এ কারণে সম্প্রতি বাজারে ডলারের সরবরাহ আগের যে কোন তুলনায় অনেক বেশী।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা বাজারে কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করছে না বলে দাবি করলেও এ অর্থনীতিবিদ জানান,ব্যাপক দরপতন এড়াতে বাজার থেকে প্রচুর ডলার কেনা হচ্ছে। টাকার বিপরীতে ডলারের মান কমে আসায় সার্বিক অর্থনীতিতে মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ইতিবাচক বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস)পরিচালক জায়েদ বখত বলেন, ডলারের মূল্য বেশি কমে গেলে রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় কমে যাবে। সে কারণেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনছে।

‘ডলারের মূল্য ঠিক রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক প্রকার বাজারে হস্তক্ষেপ করছে বলা যায়।’’

ডলারের বিপরীতে তুলনামূলকভাবে আগের চেয়ে বেশি টাকা পাওয়া যায় বলে গত কিছুদিন ধরে প্রবাসীরা বেশি বেশী অর্থ দেশে পাঠা’’’ছন বলেও মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তার মতে, রপ্তানি আয়েও এটি ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবার ১২ বিলিয়ন (১২ শ’ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে গেছে। গত বৃহস্পতিবার রিজাভের্র পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার। এর আগে গত ১৮ অক্টোবর প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। তবে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ আবার কিছুটা নিচে নেমে আসে।

গত একমাসে তা আবার বেড়ে ১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেণ রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহা-ব্যবস’াপক কাজী সাইদুর রহমান বলেন, ‘‘মূলত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ায় রিজার্ভ বেশ কিছুদিন ধরে সন্তোষজনক অবস’ায় রয়েছে। এছাড়া বিদেশি সাহায্য বৃদ্ধি এবং আমদানি ব্যয় কমার কারণেও রিজার্ভ বেড়েছে।’’

বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে যে ডলারের মজুদ আছে, তা দিয়ে প্রায় পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব বলে জানান তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ৬১২ কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি।

চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম সাত দিনে রেমিটেন্স এসেছে ৩০ কোটি ডলার। কোরবানির ঈদ ও দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে প্রবাসীরা বেশি টাকা পাঠানোয় অক্টোবর মাসে ১৪৫ কোটি ডলারের রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স দেশে আসে। এর আগে এক মাসে অন্য যে কোন সময়ে বেশি রেমিটেন্স কখনো আসেনি।

বর্তমান অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মোট বিদেশি সাহায্যের পরিমাণ ১৭৫ শতাংশ বেড়েছে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জানিয়েছে।

বর্তমান অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি আয় বেড়েছে ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং জুলাই-অক্টোবর সময়ে আমদানি ব্যয় কমেছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে আমদানি ব্যয় বেড়েছিল ২৩ দশমিক ১৩ শতাংশ।