কলকাতার নামি হাসপাতালগুলোতে প্রতারণার শিকার অসংখ্য রোগী

ডেস্ক: কলকাতার নামি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা করাতে এসে চিকিৎসক ও কর্তৃপক্ষের যৌথ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন রোগীর পরিবার। আর্থিকভাবে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন তারা। বহু নামি চিকিৎসকও এই প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত। আর তাই তিনি বিদেশে থাকলেও তার নামে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নির্দ্বিধায় একাধিক দিনের মোটা অঙ্কের ভিজিটিং চার্জ আদায় করেছেন।
কিছুদিন আগেই পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দপ্তরের এক কর্তার ঘনিষ্ঠ স্বজনকেও এই প্রতারণার শিকার হতে হয়েছে। প্রতিদিনই কলকাতার বিভিন্ন নামি বেরসকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে নানা ধরনের প্রতারণার অভিযোগ জমা পড়ছে স্বাস্থ্য দপ্তরে। এমনকি অনেকে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলাও করছেন। হাসপাতালগুলোর এই প্রতারণার খবর ফাঁস হওয়ার পর সবাই দক্ষিণের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা করাতে ছুটছেন।

কলকাতার হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশি রোগীদের অভিযোগ ভূরি ভূরি। এই সব হাসপাতালের আবার অনেক এজেন্টও রয়েছে বাংলাদেশে রোগী ধরার উদ্দেশ্যে। তবে বাংলাদেশের রোগীদের পক্ষে প্রতিবাদ জানানোর সুযোগ কম হলেও কলকাতার অনেক রোগীর পরিবার বিক্ষোভও করছেন এই প্রতারণার বিরুদ্ধে। সেই সব ক্ষেত্রে চাপে পরে বিলের অঙ্ক কমিয়ে দেয়া হলেও বিল নানা অছিলায় বাড়ানোর কাজটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করে চলেছে সুচতুর ভাবে। সেই সব জালিয়াতিও ধরা পড়ছে রোগীর পরিবারের কাছে। কিছুদিন আগেই কসবার এক মহিলা বাইপাসের ধারের একটি বিখ্যাত হাসপাতালে অর্তি হয়েছিলেন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে। হাসপাতালে ১০ দিন থাকার পর তিনি মারা যান। মৃতদেহ নিতে গিয়ে পরিবার জানতে পারে তার চিকিৎসার বিল হয়েছে ১৩ লাখ রুপি।

এই বিলের মধ্যে রয়েছে রোগীকে দেখেনই নি এমন চিকিৎসকের নামে ভিজিটিং চার্জ থেকে শুরু করে যেসব পরিষেবা দেয়া হয়নি তারও বিল করা হয়েছে। রোগীর পরিবার তীব্র প্রতিবাদ করায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৫ লাখ রুপিই বাদ দিতে রাজি হয়ে যায়। সম্প্রতি প্রয়াত নাট্যকার শম্ভু মিত্রের এক ঘনিষ্ঠ অধ্যাপকের চিকিৎসা নিয়েও ভুয়ো বিল ও অযথা কিছু চিকিৎসা করিয়ে মোটা অঙ্কের বিল করার অভিযোগ করেছেন তার পরিবার। তাদের অভিযোগ, বিলে এমন একজন চিকিৎসকের নামে বিল করা হয়েছে যিনি সেই সময় নেপালে ছিলেন। তিনি রোগীকে দেখেননি। বরং পরিবারের অভিযোগ বিনা কারণে দীর্ঘদিন ভেন্টিলেশনে রাখার ফলেই সংক্রমণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃতের পরিবার মুকুন্দপুরের সেই বেসরকারি হাসপাতাল ও সেখানকার দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে শুধু রাজ্য মেডিকেল কাউন্সিল ও স্বাস্থ্য দপ্তরেই অভিযোগ জানিয়েই ক্ষান্ত হননি। তারা অভিযোগ নিয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও। মৃত্যুর পরেও অনৈতিকভাবে কয়েকদিন ভেন্টিলেশন বা আইসিসিইউতে রেখে অর্থ আদায় কিংবা জেনারেল বেড না থাকার মিথ্যা অজুহাতে বিনা প্রয়োজনে আইসিসিইউতে অতিরিক্ত কয়েকদিন রেখে দিয়ে মোটা অঙ্কের বিল করার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। তবে ভুয়া বিল দেখা বা জানার পরও অনেক শোকগ্রস্ত পরিবারই তা নিয়ে আর মাথা ঘামাতে চায় না। একই ঘটনা ঘটছে রাজ্যে বিভিন্ন বেসরকারি নার্সিং হোমেও।

সেখানে জালিয়াতি হচ্ছে আরো মারাত্মক ধরনের। তবে প্রতিবাদের ঢেউ উঠতে শুরু করেছে। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে নিয়ন্ত্রণের কোনো অতিরিক্ত আইন নেই তাদের হাতে। তবে মেডিকেল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার এথিক্স কমিটির সদস্য এবং রাজ্য মেডিকেল কাউন্সিলের পেনাল ও এথিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান সুদীপ্ত রায়ের মতে, মিথ্যা বিল করে অর্থ নেয়া শুধু অনৈতিকই নয়, বেআইনিও। তিনি অবশ্য ভুক্তভোগীদের ক্রেতা সুরক্ষা আদালত বা মেডিকেল কাউন্সিলের কাছে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দিয়েই দায় সেরেছেন।