পাটের বিকাশে প্রধান বাধা বিশ্বব্যাংকের প্রেতাত্মা, বিপক্ষে অর্থমন্ত্রীও : পাট প্রতিমন্ত্রী

ঢাকা: বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেছেন, পাট নিয়ে অর্থমন্ত্রী নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। অর্থমন্ত্রীর এ নেতিবাচক মনোভাবের প্রভাব অর্থ মন্ত্রণালয়েও পড়েছে। ফলে পাটের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘পাটের উন্নয়ন: গণমাধ্যমের ভাবনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ আলোচনার আয়োজন করে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয় বিশ্বব্যাংকের কিছু প্রেতাত্মা এখনও অর্থ মন্ত্রণালয়ে বসে আছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার পরও পাটকে কৃষিজাত পণ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির ফাইল এখনও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলে আটকে আছে। অর্থমন্ত্রী পাটকে পছন্দ করেন না, যার কারণে তিনি এটাকে এখনও কৃষিপণ্যে অন্তর্ভুক্ত করছেন না।

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, পাটের উন্নয়নে পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থ মন্ত্রণালয় অনেক ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাটের কোনো ফাইল গেলেই এর গতিমন্থর হয়ে যায়। পরিকল্পনা কমিশনে একটি প্রকল্প তিনবার উঠার পরেও পাস হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয়ে এখনও পাটকে কৃষিপণ্যে অন্তর্ভুক্তির ফাইল আটকে আছে। অথচ আমার বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে ফাইল গেলে তা ঠিকই পাস হয়ে আসে।

তিনি বলেন, পাট থেকে বর্তমানে চা তৈরি হচ্ছে, আর তা বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। কয়েক বছর ধরেই পাটখড়ি থেকে তৈরি চারকোল বিদেশে রফতানি হচ্ছে। মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় রফতানি বন্ধ ছিল। তবে তা আবারো শুরু হয়েছে। পাটের বহুমুখীকরণের ফলে প্রতিনিয়তই এ খাতে উদ্যোক্তা বাড়ছে। আমরা আইনটি এমনভাবে করেছি পণ্যে ৫০ শতাংশ পাটের ব্যবহার থাকলেই তা কৃষিজাত পণ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে। এতে উদ্যোক্তারা পণ্য রফতানিতে নগদ ২০ শতাংশ অর্থ সহায়তা পাবে।

তিনি আরো বলেন, চলতি বছরের মধ্যেই সরকার দেশে ভিসকস ফ্যাক্টরি স্থাপন করবে। পাট নিয়ে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। সময় আসবে একসময় আমরা আর কোনো কাঁচাপাট রফতানি করব না। দেশেই সমস্ত পাট দিয়ে বহুমুখীকরণ পণ্য উৎপাদন করা হবে।

পাটের নতুন উদ্যোগের প্রধান বাধা বিশ্বব্যাংকের প্রেতাত্মা-
বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের প্রেতাত্মার কারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সত্ত্বেও পাট এখনো প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের তালিকাভুক্তি হচ্ছে না। এ কারণেই পাট মন্ত্রণালেয় যেকোনো নতুন উদ্যোগ অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে গেলেই দীর্ঘসূত্রিতায় পড়ে যায়।

মির্জা আজম বলেন, আমাদের দেশে উৎপাদিত পাটের ৯০ ভাগ বীজ ভারত থেকে আমদানি করতে হয়। বিভিন্ন সময় পাটকল বন্ধ হওয়ার কারণে বীজ উৎপাদনে কৃষককে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এর ফলে বর্তমানে পাটের বীজের ক্ষেত্রে আমদানি নির্ভরতা রয়ে গেছে।

তিনি বলেন, পাটের বিরুদ্ধ ষড়যন্ত্র নতুন নয়। এক সময় পাট ছিল প্রধান অর্থকারি ফসল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে পাটের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সময় পাটকলকে আধুনিক করার পরিবর্তে বন্ধ করে দেয়ার মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সর্বশেষ ২০০২ সালে বিএনপি আমলে দেশের ও এক সময়ের বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাটকল আদমজিকে বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শে গোল্ডেন হ্যান্ডসেকের মাধ্যমে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অথচ ওই একই সময়ে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ভারতে নতুন নতুন পাটকল স্থাপন করা হয়েছে।

বিশ্ব ব্যাংকের পেতাত্মা এখনও রয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ কারণে হয়ত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সত্ত্বেও পাট এখনো প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের তালিকাভুক্তি হচ্ছে না। অথচ প্রক্রিয়াজাত কৃষি পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেলে পণ্য রপ্তানিতে ২০ শতাংশ ইনসেন্টিভ পাওয়া যেত। এর ফলে পাটের বহুমুখী পণ্য উৎপাদন বেড়ে যেত। বিশ্ব ব্যাংকের প্রেতাত্মার কারণেই পাট মন্ত্রণালেয় নতুন উদ্যোগ অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে গেলেই আটকে যায়। দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে পড়ে যায়। এক সময়ে বাংলাদেশ শুধু কাচাঁপাট উৎপাদনকারী দেশছিল, বর্তমানে ২৪০ ধরনের পাটজাতীয় পণ্য উৎপাদন হচ্ছে।