বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চীন-ভারত যুদ্ধ

ডেস্ক: বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে প্রতিবেশী দেশ চীন এবং ভারতের মধ্যে প্রতিযোগিতা স্পষ্ট। সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়, নয়াদিল্লি এবং বেইজিং প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে একে অপরের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ভারত ও চীন দুই দেশই এশিয়া মহাদেশে তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে চাইছে। বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান আঞ্চলিক কৌশলগত ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের ভূ- কৌশলগত গুরুত্ব অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ভারতের গণমাধ্যম ‘হিন্দুস্থান টাইমস’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ চীন সাগরে আধিপত্য বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশের উপকূল একটি বড় বিষয়। তাই দুই দেশই ‘বে অব বেঙ্গল’ এ আধিপত্য রাখতে বাংলাদেশের সঙ্গে একাত্মতা বজায় রাখার আন্তর্জাতিক খেলা খেলছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং অক্টোবরে বাংলাদেশ সফরের সময় বাংলাদেশের সঙ্গে ২৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দেন এবং ২৭টি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। বাংলাদেশের উপর চীনের এমন প্রভাব পছন্দ করছে না ভারত। চীনের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের পর ভারত বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নিয়ে ক্রমশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। প্রতিরক্ষা সহায়তা ও উন্নয়ন বরাদ্দ দেয়ার মধ্য দিয়ে বেইজিংও ঢাকার সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন করতে চাইছে।

১১ই নভেম্বর বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকেই দুইটি সাবমেরিন ক্রয় করে। যা বাংলাদেশে নৌ-বাহিনীর শক্তিকে আরো দ্বিগুণ করবে। চীন থেকে সাবমেরিন ক্রয়ের পর ভূ-রাজনৈতিক নিরাপত্তার প্রশ্নে উদ্বিগ্নতা তীব্র আকার ধারণ করে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা এটিও বলেছেন বাংলাদেশের সাবমেরিনের প্রয়োজন পড়লো কেন? ভারত সফর বেশ কয়েক দফা পিছিয়ে দেয়ার পর এপ্রিলে দিল্লি সফরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সফরেই চুক্তি করতে চায় ভারত। ২৫ বছর মেয়াদী এই চুক্তি হলে ভারত অস্ত্র কেনার শর্তে বাংলাদেশকে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দেবে, যা দিয়ে ভারত থেকে অস্ত্র কিনতে হবে।

বাংলাদেশ ভারতসহ বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের সঙ্গে সামরিক চুক্তির বদলে সমঝোতা স্মারককে প্রাধান্য দিয়েছে। ভারত সফরেও এটি গৃহীত হতে পারে। এছাড়াও বাংলাদেশের সামরিক প্রতিরক্ষা মূলত চীনের সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত হয়েছে, বিশ্বের কুখ্যাত অস্ত্রবাজ দেশ ভারত থেকে অস্ত্র ক্রয় করে বাংলাদেশ চীনকেও নাখোশ করতে চাইবে না। অন্যদিকে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে পানি নিয়ে বরাবরই বাংলাদেশ অভিযোগ করে আসছে। ফারাক্কা ব্রিজের কারণে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বাংলাদেশ পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান শামসুল আরেফিন বলেন, কৃষিভিত্তিক দেশ হিসেবে নদীর পানি বাংলাদেশের কাছে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ভারত সফরে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক পানি চুক্তি আদায় করতে সচেষ্ট থাকবে। নয়তো শেখ হাসিনা ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলিয় অঞ্চলের বিদ্রোহীদের দমন এবং সেখানে দেশটির বাণিজ্যিক আদান প্রদানের ট্রানজিটের সুবিধায় সীমাবদ্ধতা আরোপ করতে পারে।