শ্রীলঙ্কায় মসজিদ ও মুসলমানদের ঘর-বাড়িতে বৌদ্ধদের আগুন

ডেস্ক: শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের কর্তৃক পবিত্র মসজিদে হামলা ও মুসলমানদের ঘর-বাড়ি, দোকান পুড়িয়ে দেয়ার জেরে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতা ঠেকাতে শ্রীলঙ্কার কান্ডিতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিশ্ব গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশ করা হয়।

পুলিশ বলছে, কান্ডি শহরে গত রোববার বৌদ্ধরা দাঙ্গা ছড়ায়। সেখানে মসজিদ ও মুসলমানদের দোকানপাটের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে।
সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি আরো খারাপের হাত থেকে বাঁচাতে কান্ডি শহরের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে মুসলিম মালিকানাধীন বিভিন্ন দোকানে অগ্নি সংযোগের পাশাপাশি দেশটির পূর্বাঞ্চলে মসজিদেও হামলার ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ ঘটনায় পুলিশ দুই ডজন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে। পুলিশের আচরণ নিয়ে সেখানে তদন্ত কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।

মানবাধিকার সংস্থা সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস শ্রীলঙ্কার নির্বাহী পরিচালক রজিত কার্থি টেন্নাকুন বলেছে, সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ চরম অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। যে কারণে দাঙ্গা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে পেরেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সিংহলিদের সকাল ১০টায় টেলডেনিয়া শহরে জড়ো করা হয়েছে। বেলা ১১ টায় সবাই জড়ো হলে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রবণতা তৈরি হয়। দুপুর ১টা থেকে মুসলমানদের সম্পদ ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ শুরু হয়।
দাঙ্গায় আহত হয়ে দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলীদের একজন নিহত হওয়ার পর সহিংসতা চরম মাত্রায় চলে যায়। সাম্প্রদায়িক ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতা শুরু হওয়া সর্বশেষ শহর হচ্ছে কেন্ডি।

শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ-মুসলিম সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা-
বৌদ্ধ ও মুসলিমদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মুখে আরও সহিংসতার আশঙ্কা করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিকভাবে ক্যান্ডিতে কারফিউ জারির পর ক্রমবর্ধমান সহিংসতার আশঙ্কায় সারাদেশে ১০ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। সহিংসতায় ইন্ধনদাতাদের কঠোর শাস্তি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সংঘাতকবলিত ক্যান্ডি শহরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের বিশেষ বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।

শ্রীলঙ্কা সরকারের মুখপাত্র দয়াসিরি জয়াসেকারা রয়টার্স’কে জানিয়েছে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেশের অন্যান্য স্থানেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে জরুরি অবস্থা জারির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছে, কিছু ব্যক্তি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে সহিংসতা উসকে দিতে চাইছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের ঘটনায় বছরখানেক ধরেই শ্রীলঙ্কায় মুসলিম বিদ্বেষ বাড়ছিল। জীবন বাঁচাতে কিছু রোহিঙ্গা মুসলিম শ্রীলঙ্কায় আশ্রয় নিলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে দেশটির উগ্রপন্থীরা। গত সেপ্টেম্বরে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের নেতৃত্বে রাজধানী কলম্বোতে জাতিসংঘের একটি সেফ হাউসে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ওপর হামলে পড়ে একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতা। সাম্প্রতিক সহিংসতায় গত কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত ছিল দেশটির জনপ্রিয় পর্যটন নগরী ক্যান্ডি। গত ফেব্রুয়ারি মাসেও সেখানে বৌদ্ধ ও মুসলিমদের মধ্যে এক সংঘর্ষে পাঁচজন গুরুতর আহত হয়। বেশ কয়েকটি দোকান ও মসজিদে হামলা চালানো হয়। ৫ মার্চ ২০১৮ সোমবার ক্যান্ডিতে নতুন করে মুসলিম মালিকানাধীন একটি দোকান জ্বালিয়ে দেয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলী বৌদ্ধরা। মূলত ওই অগ্নিসংযোগ থেকেই দাঙ্গার সূত্রপাত। দাঙ্গায় আহত এক বৌদ্ধের মৃত্যুর পর সংঘাত চরম আকার ধারণ করে।
বিভিন্ন স্থানে মুসলমানদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। একটি মসজিদেও হামলার খবর পাওয়া গেছে। সহিংসতা ঠেকাতে সোমবার রাতে ক্যান্ডিতে কারফিউ জারি করা হয়। তবে দেশজুড়ে সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সারাদেশে ১০ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে এর মেয়াদ আরও বাড়ানো হতে পারে। সেক্ষেত্রে পার্লামেন্টের অনুমোদন নিতে হবে।

মিয়ানমারে মুসলিমবিদ্বেষী প্রচারণার কারণে রক্তক্ষয়ী আলুথগামা দাঙ্গা শুরু হয়। ওই সময়ে শত শত মুসলমান গৃহহীন হয়ে পড়েন। তাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাথ্রিপালা শিরসেনা ২০১৫ সালে ক্ষমতা নেয়ার পর ওই ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো। কিন্তু ওই তদন্ত প্রতিবেদনের কোনও অগ্রগতি হয়নি। সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি, দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।