প্রযুক্তি ব্যবহারে দুই বছরেই উপযুক্ত হবে গরু

ঢাকা: উৎপাদন বাড়াতে ব্রাজিল থেকে প্রযুক্তি এনে তা ব্যবহারের মাধ্যমে দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে গরু উপযুক্ত করে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে গোশতের ঘাটতি পূরণ হবে বলেও আশা করছেন মন্ত্রী।

প্রথমবারের মতো প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ পালন উপলক্ষে আজ বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মন্ত্রী ছায়েদুল।

মন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। আগে হালচাষ করা হতো গরু দিয়ে, এখন পাওয়ার টিলার ব্যবহার করা হয়। দেশের মানুষ আগের মতো গরু পালন করে না। আগে প্রতি বাড়িতে গরুর গোয়াল ছিল, এখন গ্রামে গোয়াল পাওয়া যায় না।

সম্প্রতি ব্রাজিল সফর করেছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মডার্ন টেকনোলজি ব্রাজিল থেকে নিয়ে আসবো। আমাদের গরু উপযুক্ত করতে ৬/৭ বছর লাগে, এই প্রযুক্তি নিয়ে আসলে দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে গরু সুপরিওর (উপযুক্ত) হবে।
‘আশা করি, এ উদ্যোগের ফলে জন্মহার বাড়বে এবং গোশতের যে ঘাটতি তা পূরণ হবে। এই প্রযুক্তি চীন নিয়েছে, জার্মানি ও রাশিয়া নিয়েছে।’ বলেন মন্ত্রী।

এই প্রযুক্তি ব্যবহারে বাজেটের জন্য অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, আশা করি আগামী মার্চ থেকে প্রযুক্তি ব্যবহারের কাজ শুরু করা যাবে। ব্রাজিলের প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তিনি বাংলাদেশে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী জানান, দেশে দুধের চাহিদা ১৪৬ দশমিক ৯১ লাখ মেট্রিক টন, উৎপাদন হচ্ছে ৭২ দশমিক ৭৫ লাখ মেট্রিক টন। ঘাটতি ৭৪ দশমিক ১৬ লাখ মেট্রিক টন। গোশতের চাহিদা ৭০ দশমিক ৫২ লাখ মেট্রিক টন, উৎপাদন ৬১ দশমিক ৫২ লাখ মেট্রিক টন এবং ঘাটতি ৯ লাখ মেট্রিক টন।
এক হাজার ৬৭৪ কোটি ৪০ লাখ ডিমের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে এক হাজার ১৯০ কোটি ২৪ লাখ ডিম, ঘাটতি আছে ৪৮৩ কোটি ১৬ লাখ ডিম।
২০১৬ সালে দেশে কুরবানিযোগ্য গরু মহিষের সংখ্যা ছিল ৪৪ লাখ ২০ হাজার। আর ছাগল-ভেড়ার চাহিদ ছিল ৭০ লাখ ৫০ হাজারটি। এই চাহিদার শতভাগ পশু দেশীয় উৎপাদন থেকেই মেটানো হয়েছিল।

মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের উদ্যোগের ফলে বিগত ৫ বছরে দুধের উৎপাদন ৩৪ কোটি ৬০ লাখ টন থেকে প্রায় ৭৩ কোটি টন, গোশত ২৩ কোটি ৩০ লাখ টন থেকে প্রায় ৬২ কোটি টন এবং ডিমের সংখ্যা ৭৩০ কোটি ৩৮ লাখ থেকে বেড়ে প্রায় এক হাজার ১৯২ কোটিতে উন্নীত হয়েছে বলে জানানো হয়।
পোল্ট্রি শিল্পে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। এই খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা।

দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও তফসিলী ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে এই খাতে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে যার মধ্যে ৬৭ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, মানুষের ধারণা ছিল ভারত থেকে গরু না এলে কুরবানী হবে না। কিন্তু আমরা গত দুইবার ভারত থেকে গরু আমদানি ছাড়াই কুরবানী সম্পন্ন করেছি। গোশত ব্যবসায়ী সমিতির চার দফা দাবিতে ধর্মঘটের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, তারা কোনো দাবি নিয়ে আসেননি।

‘নিরাপদ প্রাণিজ আমিষের প্রতিশ্রুতি, সুস্থ সবল মেধাবী জাতি’- স্লোগান নিয়ে প্রথমবার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদফতর যৌথভাবে ঢাকাসহ সারাদেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ২৩-২৭ ফেব্রুয়ারি প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ পালন করবে। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের সচিব মাকসুদুল হাসান খান, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আইনুল হক এবং কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উৎপাদন বাড়লেও দেশে দুধ-ডিমের ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক। মন্ত্রী বলেন, প্রাণিসম্পদ খাতে উৎপাদনশীলনতা বাড়ার ফলে গেলো দুই বছর দেশের মানুষের কুরবানীর পশুর চাহিদা শতভাগ দেশীয় উৎপাদন থেকে মেটানো সম্ভব হয়েছে।