ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজে মাত্র ৮ দিন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুমানার

গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া ট্রাম্প মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সাত দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নির্বাহী আদেশ দেওয়ার পরদিন ২৮ জানুয়ারি পদত্যাগ করেন রুমানা।

পদত্যাগের প্রায় এক মাস পর বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যম ‘দ্য আটলান্টিক’-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে ‌‘মুসলিম প্রবেশে বাধার’ ওই আদেশের প্রতিবাদে পদত্যাগ করার কথা জানান সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলে কাজ করা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই নারী।

তবে ইতোমধ্যে সাত দেশের নাগরিকদের প্রবেশে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেওয়া ট্রাম্পের ওই নির্বাহী আদেশ আদালতে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে সাময়িকভাবে আটকে গেছে।

রুমানা লেখেন, “যে প্রশাসন আমাকে ও আমার মতোদের (মুসলিমদের) যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ভাবার বদলে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে, সেখানে আমার পক্ষে কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।”

যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসী বাংলাদেশি বাবা-মায়ের সন্তান রুমানা লেখায় তার বাবা-মায়ের বাংলাদেশি পরিচয়ও তুলেন।

১৯৭৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যান রুমানার বাংলাদেশি বাবা-মা। তারা ওয়াশিংটন ডিসির কাছে ম্যারিল্যান্ডে উঠেছিলেন, যেখানে জন্ম হয় তার। শুরুতে রুমানার মা ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করেন। তার বাবা ব্যাংক অব আমেরিকায় কাজ শুরু করে ব্যাংকটির একটি কার্যালয়ের সহকারী উপপ্রধান পদে উন্নীত হয়েছিলেন।

তবে ‘আমেরিকান স্বপ্ন’ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া রুমানার বাবা পিএইচডি করার সময় ১৯৯৫ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান।

কলেজ শেষ করে ২০১১ সালে হোয়াইট হাউজের চাকরিতে যোগ দেওয়া রুমানা বারাক ওবামার সময়ের প্রশাসনে মুসলিম হিসেবে স্বচ্ছন্দপূর্ণ কাজের পরিবেশ পাওয়ার কথা বলছেন তার লেখায়।

নিজেকে ‘হিজাব’ পরা মুসলিম নারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে রুমানা বলছেন, “ওয়েস্ট উইংয়ে (হোয়াইট হাউজের এক্সিকিউটিভ অফিস ভবন) আমিই ছিলাম একমাত্র হিজাবি।

২০১৫ সালে হোয়াইট হাউজে বারাক ওবামার সঙ্গে রুমানা। ছবি: হোয়াইট হাউজ

“ওবামা প্রশাসন আমাকে নিজেদের করে নিয়ে সব সময় স্বচ্ছন্দ অনুভূতি দিয়েছে।”

গত বছরের নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয়ের পর ব্যক্তিগতভাবে অস্বস্তিবোধ করলেও নিরাপত্তা কাউন্সিলে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জানিয়ে রুমানা লিখেছেন, কিন্তু ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর আটদিনের বেশি তার পক্ষে সেখানে থাকা সম্ভব হয়নি।

কেন পদত্যাগ করছেন, সে কথা জানতে চাইলে নিরাপত্তা কাউন্সিলের যোগাযোগ উপদেষ্টা মাইকেল এন্টনকে রুমানা বলেছিলেন, ট্রাম্পের মুসলিম আগমন নিষিদ্ধ ঘোষণার পর কাজ চালিয়ে যাওয়া তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠেছে।

রুমানা লিখেছেন, “আমি তাকে জানাই, (এই ঘোষণার পর) দেশের সবচেয়ে ঐতিহাসিক এই ভবনে প্রতিদিন প্রবেশ করা আমার জন্য রীতিমতো অপমানজনক একটি ব্যাপার হয়ে উঠেছে। একজন আমেরিকান ও মুসলিম হিসেবে আমি যা বিশ্বাস করি, এই প্রশাসন তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।”