নির্বাচনকে সামনে রেখে অর্থপাচার বেড়েছে

ঢাকা: আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে নানা উপায়ে অর্থপাচার বেড়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের ভাষ্য, অর্থপাচার যে হচ্ছে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়াই তার প্রমাণ। বিশ্ববাজারে এখন ডলারের দাম কমতির দিকে। কিন্তু বাংলাদেশে ডলারের দাম বেড়েই চলেছে। তারা বলছেন, প্রতি নির্বাচনের বছরেই এমনটি হয়।

এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুরও বলেন, বিশ্ববাজারে যখন ডলারের পতন হচ্ছে, ঠিক ওই সময় বাংলাদেশের বাজারে ডলারের দাম বাড়ছে। এর পেছনে বড় কোনও দুর্বলতা আছে। আমদানির আড়ালে কিছু থাকলেও থাকতে পারে। নির্বাচনের বছরে এমনটি হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনের বছরে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থপাচার বেড়ে যাওয়ার কারণে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে চলেছে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, কানাডায় চলে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থ। অনেকে ভুয়া এলসি (ঋণপত্র) অথবা ওভার ইন-ভয়েসের মাধ্যমেও অর্থপাচার করছেন বিভিন্ন দেশে।

দেশ থেকে প্রতিবছর বিভিন্নভাবে বিশাল অঙ্কের অর্থ দেশের বাইরে পাচার হয়ে থাকে। যেসব মাধ্যম ও পথ ব্যবহার করে বিদেশে অর্থপাচার হচ্ছে, এবার সেসব পথ বন্ধ করতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এজন্য বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সঙ্গে একটি চুক্তি করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থপাচারের মাধ্যমগুলো শনাক্ত ও বন্ধ করার পাশাপাশি এ চুক্তির লক্ষ্য হলো আমদানি-রফতানির আড়ালে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা। পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে বিএফআইইউ’র কর্মকর্তারা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গেও কাজ শুরু করেছেন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নানান কড়াকড়ির পরও প্রত্যেক নির্বাচনি বছরেই অর্থপাচার বেড়ে যায়। এবার কি সত্যিই তা বন্ধ হবে?

গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া অসৎ ব্যবসায়ী ও অর্থপাচারকারীদের সতর্ক করেন। তিনি দেশ থেকে পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ শনাক্ত এবং তা উদ্ধারে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার কথাও জানান।

মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, আর্থিক অনিয়ম বা অর্থপাচার ধরতে সরকারের গঠন করা বিএফআইইউ’র সঙ্গে আগামী সপ্তাহ নাগাদ একটি চুক্তি করতে যাচ্ছে এনবিআর। অর্থপাচার বন্ধে ও পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে বিএফআইইউ’র সঙ্গে সমন্বয় করে এনবিআর কাজ করবে। এর মাধ্যমে অর্থপাচারের ঘটনাগুলোর তদন্ত করবো। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যোগাযোগ এবং তথ্য আদান-প্রদান করবো। পাচার করা অর্থ চিহ্নিত হলে তা ফিরিয়ে আনা হবে। একইসঙ্গে পণ্যের চালান কোথায় যায়, তাও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিধি-নিষেধের আওতায় আনা হবে।’ তিনি আরও বলেন, অসৎরা যাতে বুঝতে পারে ধরা পড়লে খবর আছে।

এর আগে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান জানিয়েছিলেন, পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে যাদের নাম এসেছে, তাদের বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গত ২১ নভেম্বর তিনি আরও জানান, পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারসে নাম আসা ব্যক্তিদের বিষয়ে বিএফআইইউ’র সঙ্গে এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের গোয়েন্দারা নিবিড়ভাবে কাজ করছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিএফআইইউ’র উপদেষ্টা দেবপ্রসাদ দেবনাথ বলেছে, বিদেশে অর্থপাচারের বিষয়ে অনেক দিন ধরে বিএফআইইউ কাজ করছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনা শনাক্ত করা হয়েছে। আরও অধিক তদন্তের জন্য অর্থপাচারের কয়েকটি ঘটনা ইতোমধ্যে দুদকেও পাঠানো হয়েছে।’ তিনি বলেন, বিদেশে অর্থপাচার হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথ্য পেলে নিজ উদ্যোগে তদন্ত করছে। সরকারের অন্য সংস্থা থেকে তথ্য পেয়ে বিএফআইইউও কাজ করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে একবছরে ডলারের দাম বেড়েছে চার টাকা। গত বছর ১৭ জানুয়ারি এক ডলারের দাম ছিল ৭৮ দশমিক ৯০ টাকা, আর এ বছরের ১৭ জানুয়ারি তা বিক্রি হয়েছে ৮২ দশমিক ৮৪ টাকায়। বাংলাদেশ ব্যাংকে বৃহস্পতিবার ডলার বিক্রি হয়েছে ৮২ দশমিক ৯০ টাকায়। দেশের অন্য ব্যাংকগুলোতে ৮৪ টাকায় ডলার বিক্রি হয়েছে। কার্ব মার্কেটে দাম আরও চড়া। খোলাবাজারে গত বৃহস্পতিবার মার্কিন ডলার ৮৫ থেকে ৮৬ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে।