সাদা ভুট্টায় পুষ্টি ও অর্থ

[metaslider id=13175]ডেস্ক: চাল ও গমের উপর চাপ কমাতে সাদা ভুট্টা চাষের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। সাদা ভুট্টার দানা মিহি হওয়ায় পৃথিবীর বহু দেশে এ ভুট্টা অন্যতম প্রধান খাদ্য হিসেবে সমাদৃত। শুধু তাই নয়, এ ভুট্টা থেকে ৩০-৩৫ ধরনের খাদ্যদ্রব্য উদ্ভাবন করা হয়েছে। আর তাই তো শেরপুরের নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা, চরঅষ্টধর, পাঠাকাটা, বানেশ্বরদী ইউনিয়নের চাষিরা সাদা ভুট্টা চাষে ঝুঁকছে। এ ভুট্টা চাষে দ্বিগুণ লাভ দেখে অন্যসব ইউনিয়নের কৃষকও আগ্রহী হচ্ছে। কৃষক জানায়, অনুর্বর ও অনাবাদি জমিতে ভুট্টা চাষে একদিকে যেমন জমির সুষ্ঠু ব্যবহার হচ্ছে, অন্যদিকে মিলছে পুষ্টি ও অর্থ উপার্জনের সুগম পথ।
সরেজমিন জানা যায়, এবার উপজেলায় ২ হাজার ৫০ একর (৮২০ হেক্টর) জমিতে পাইওনিয়ার, এনকে-৪০, সুপার সাইন ও প্যাসিফিক জাতের ভুট্টার আবাদ করা হয়েছে, যার অধিকাংশই সাদা জাতের। তার মধ্যে রাজস্ব খাতের ৫৬টি ও পুষ্টি প্রকল্পের ৩টি প্রদর্শনী প্লট রয়েছে। প্রতি একর জমিতে ১০০ থেকে ১২০ মণ ভুট্টা উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষক। তাতে উপজেলায় প্রায় ৯ হাজার মেট্রিকটন ভুট্টা উৎপাদন হবে, যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা। আশানুরূপ ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় আগামীতে চাষির সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়বে বলে মনে করছে কৃষি কর্মকর্তারা। উপজেলার জালালপুর এলাকায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ভুট্টা উৎপাদন কলাকৌশলের উপর এক মাঠ দিবসে উপস্থিত হয়ে ভুট্টা গবেষকরা জানায়, এ দেশে চেলি, এ-ক্রস, আলাজুয়েলা, পোজারিকা, সাভার-১, বর্ণালী, শুভ্রা, সোয়ান-২, খই ভুট্টা, সিমিট কম্পোজিট ও সাদাসহ দেশীয় জাতের ভুট্টা বেশি চাষ হলেও সাদা জাতের ভুট্টা অধিক ফলনশীল ও পুষ্টিসমৃদ্ধ হওয়ায় কৃষক এ ভুট্টা চাষে আগ্রহী বেশি। তাছাড়া বিএআরআই গাজীপুরের গবেষণা বিভাগের পরিচালক ও আরএআরএস জামালপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জানায়, প্রত্যন্ত অঞ্চলে বারি উদ্ভাবিত হাইব্রিড সাদা ভুট্টার চাষ ছড়িয়ে দিতে সারা দেশের মতো বারির গবেষণা বিভাগ শেরপুর অঞ্চল এবং উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের গম ও ভুট্টার উন্নততর বীজ উৎপাদন এবং উন্নয়ন প্রকল্প-২য় পর্যায় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।
জানা যায়, ধান ও গম সি-থ্রি প্রজাতির শস্য কিন্তু ভুট্টা সি-ফোর প্রজাতির হওয়ায় ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার উৎপাদন অনেক বেশি। যেখানে প্রতি হেক্টরে গম ৩ থেকে ৪ টন, ধান ৫ থেকে ৬ টন উৎপাদন হয়, সেখানে ভুট্টা উৎপাদন হয় ৮ থেকে ১০ টন। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে এ দেশে বর্তমানে ৩ লাখ হেক্টর জমিতে ২২ লাখ টন অধিক ক্যারোটিন সমৃদ্ধ তথা কম স্বাদযুক্ত হলুদ ভুট্টা উৎপাদন হয়, যার অধিকাংশ মুরগি, মাছ ও গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পক্ষান্তরে সাদা ভুট্টার স্বাদ চাল ও গমের মাঝামাঝি হওয়ায় ভাত ও আটার পরিবর্তে সাদা ভুট্টার দিকে ঝুঁকছে অনেক দেশের মানুষ। তাই হলুদ ভুট্টার পরিবর্তে সাদা ভুট্টার চাষ বাড়ালে চাল ও গমের উপর চাপ কমবে। কোনো এক সময় এটি হতে পারে এদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল; বলছে পুষ্টিবিজ্ঞানী ও ভুট্টা গবেষকরা।
চাষীরা জানায়, অনুর্বর ও অনাবাদি জমিতে ভুট্টা চাষে একদিকে যেমন জমির সুষ্ঠু ব্যবহার হচ্ছে, অন্যদিকে আসছে পুষ্টি ও টাকা।