যুক্তরাষ্ট্রে দেড় মাসেই ১৮টি স্থানীয় ‘শিক্ষা সন্ত্রাস’ হামলা

ডেস্ক: নতুন বছরের মাত্র দেড় মাস পার হয়েছে। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের দ্বারা ১৮টি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ প্রতি ৬০ ঘণ্টায় একটি করে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে যুক্তরাষ্ট্রে।

বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মার্জরি স্টোনম্যান ডগলাস হাইস্কুলে স্থানীয় ছাত্র সন্ত্রাসীর গুলিতে ১৭ জন মারা গেছে। ছাত্র সন্ত্রাসী নিকোলাস ক্রুজের বয়স মাত্র ১৯।

স্কুল-কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বারা যেসব সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে, বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, সন্ত্রাসী শিক্ষার্থীরা উগ্রতায় আক্রান্ত। হিং¯্র নেশায় গুলি করে মারে অন্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের। তবে কিছু কিছু পরিসংখ্যানে দেখা গেছে শিক্ষা সন্ত্রাস হামলার ঘটনা অবস্থার প্রেক্ষিতে অনেক বেশি হচ্ছে। ২০১১ সালের চেয়ে ২০১৪ সালে স্থানীয় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা তিন গুণ বেড়েছে। হার্ভার্ডের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রতি ৬৪ দিনে একবার করে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর আগে ২৯ বছর ধরে এই গড় ছিল ২০০ দিনে একবার।

তবে বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বারা সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে আসছে। সিএনএন অনলাইন সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরে তারা। দেখা যায়, ১৯৯৬ থেকে ২০১২ সাল এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে নিজস্ব সন্ত্রাসীদের দ্বারা হামলার ঘটনা ঘটেছে ৯০টি। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে ইউনিভার্সিটি, নাইট ক্লাব ও বিভিন্ন স্থানে এই সন্ত্রাসীপনাগুলো ঘটছে। ১৯৯৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বিশ্বে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে মোট ২৯২টি, যার মধ্যে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রেই ৯০টি। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ বাস করে, অথচ বিশ্বের ৩১ শতাংশ ‘শিক্ষা সন্ত্রাস’ হামলার ঘটনা ঘটছে এখানে।

অনেক গবেষক মনে করছে, এই ধরনের ঘটনা সংক্রমক রোগের মতো। একটা ঘটনার পর আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আরেকটি ঘটনা ঘটার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এই সংক্রমণ বা ‘ইনফেকশন’ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায় প্রায় ১৩ দিন। আর এই প্রকোপ যুক্তরাষ্ট্রেই বেশি। কারণ, অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় দেশটিতে অস্ত্রের সহজলভ্যতা বেশি। পৃথিবীর যেকোনো দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্রের সংখ্যা বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রায় ২৭ থেকে ৩১ কোটি অস্ত্রের সরবরাহ আছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা ৩২ কোটি। অর্থাৎ প্রায় প্রত্যেকেই একটি অস্ত্র রাখতে পারে। গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্যমতে, প্রতি এক-তৃতীয়াংশ পরিবারে অন্তত একজন অস্ত্র বহন করে।

অল্পবয়সী কিশোর ও যুবকদের এমন সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটানোর পেছনে খ্যাতির লোভও কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্রের কিশোরেরা খ্যাতির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বড় হতে থাকে। এবং দেখা যায়, অস্ত্র হামলার ওই সব ঘটনা ব্যাপক মিডিয়া কভারেজ পায়। আর এটা খ্যাতি অর্জনের পথ মনে করে তারা।