হাঁড়িভাঙ্গা আমে শত কোটি টাকার স্বপ্ন

ডেস্ক: রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আমের সুখ্যাতি এখন দেশজুড়ে। সুমিষ্ট এ আম উৎপাদন করে রংপুরের চাষি একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে, অন্যদিকে জাতীয় অর্থনীতিতেও রাখছে অবদান। এ বছর রংপুরের চাষি হাড়িভাঙ্গা আমকে ঘিরে শত কোটি টাকার স্বপ্ন দেখছে। রংপুরের মিঠাপুকুর ও বদরগঞ্জ উপজেলায় অধিক পরিমাণে এ হাঁড়িভাঙ্গা আম উৎপাদিত হচ্ছে। এর সুতিকাগার মিঠাপুকুরের তেকানি গ্রামে। এরই মধ্যে এ আমের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে বিদেশেও।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুসারে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে হাঁড়িভাঙ্গা আম উৎপাদিত হয়েছে ১৫ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে উৎপাদন ছিল ১৫ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন। সে হিসাবে এ বছর আমের উৎপাদন বাড়ার কথা। প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রংপুর জেলায় ২ হাজার ৯৭৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আম উৎপাদিত হয়। আর হাঁড়িভাঙ্গা উৎপাদিত হয় ১ হাজার ৪২৩ হেক্টরে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে হাঁড়িভাঙ্গার আবাদকৃত এলাকা বেড়ে ১ হাজার ৪৫০ হেক্টর হয় আর উৎপাদন হয় ১৫ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন, যা থেকে মোট আয় হতে পারে প্রায় ৯০ কোটি টাকা।

জানা যায়, ১৯৯২ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে মিঠাপুকুরে এ আমের উৎপাদন শুরু করে আলহাজ আবদুস সালাম সরকার। প্রথম বছরেই আসে সাফল্য। বাড়তে থাকে হাড়িভাঙ্গা আমের চাষ। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি সালামকে।
হাঁড়িভাঙা আমের নামকরণ প্রসঙ্গে মিঠাপুকুরের খোঁড়াগাছ ইউনিয়নের তেকানি গ্রামের আমজাদ হোসেন জানায়, প্রায় ৮০ বছর আগে তার বাবা নফল উদ্দিন মাসিমপুর এলাকার কুমোরবাড়ির পাশে জঙ্গল থেকে একটি আমগাছ কেনে। গাছের আম খুবই সুস্বাদু হওয়ায় সেই গাছের ১০০ আম আনেন নিজ বাড়িতে এবং আম খাওয়ার পর আমের আঁটি থেকে একটি চারা গজায়। কুমোরবাড়ির পাশে ভাঙা হাঁড়ির টুকরোর মাঝখানে গাছটি জন্মেছিল বলে গাছটির নামকরণ করা হয় হাঁড়িভাঙা। তখন থেকেই এ অঞ্চলে হাঁড়িভাঙা আমের যাত্রা শুরু হয়।

হাঁড়িভাঙা আমের সম্প্রসারক সালাম জানায়, ১৯৯২ সাল থেকে সে হাঁড়িভাঙা আমের চাষ শুরু করে। তার দেখাদেখি এখন রংপুরে অনেকে হাঁড়িভাঙা আমের বাগান করছে। এরই মধ্যে কয়েক লাখ হাঁড়িভাঙা আমের গাছ হয়ে গেছে। তার ২৫টি আমের বাগান রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক জানায়, হাঁড়িভাঙা রংপুরের ঐতিহ্য। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে হাড়িভাঙার চাষ হচ্ছে, এর মধ্যে বেশিরভাগ মিঠাপুকুর এবং বদরগঞ্জ উপজেলায়। কিছুটা সদর উপজেলায় চাষ হয়।