সরকারের ঋণ: ব্যাংকে বাড়লেও কমেছে সঞ্চয়পত্রে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ বেড়েছে; যদিও তা বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম।

আর অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ঋণ কিছুটা বাড়লেও কমেছে সঞ্চয়পত্রসহ অন্যান্য খাত থেকে। এজন্য সরকারকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, এটি মূল্যস্ফীতির চাপ কমিয়ে আনতে সহায়তা করবে।

অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া সরকারের ঋণ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে এমন পরামর্শ আসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
ঋণ এখন কত?

বাজেট ঘাটতি মেটানোসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে সরকার ট্রেজারি বিল ও বন্ড, ওভার ড্রাফট, বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট সুকুক, বন্ড ও সঞ্চয়পত্র ইস্যু করে ঋণ নিয়ে থাকে।
চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে সরকারের নেওয়া নিট ঋণের পরিমাণ ২৬ হাজার ৭৭ কোটি টাকা; যা গত অর্থবছরের আলোচিত সময়ের চেয়ে ৫.১৬ শতাংশ বেশি।

গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে এই ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। এ সময়ে নেওয়া ঋণের পরিমাণ বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ২৩ শতাংশ।
এর মধ্যে আট মাসে ব্যাংক থেকে নিট ঋণ নিয়েছে ৮ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি সময়ে যা ছিল ঋণাত্বক ৮ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ ওই সময়ে সরকার আগের ব্যাংক ঋণ বেশি পরিশোধ করেছে নেওয়ার চেয়ে।

সবশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৫ মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক থেকে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ১৬০ কোটি টাকা।

এদিকে চলতি অর্থবছরে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিয়েছে ১৯ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা। অপরদিকে এই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করেছে ১১ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। এভাবে ব্যাংকিং খাত থেকে নিট ঋণ নিয়েছে আট হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। এটি জাতীয় বাজেটে নেওয়া লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১১.৪ শতাংশ।

এছাড়া সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ১৪ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকাসহ ব্যাংক বহির্ভূত অন্যান্য খাত থেকে এই আট মাসে মোট নিট ঋণ নিয়েছে ১৭ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা; যা গতবারের চেয়ে ১৪ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা বা ৪৫.১৬ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারিতে নিয়েছিল ৩১ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা।

চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মোট এক লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সরকার।

এরমধ্যে ব্যাংক থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা এবং ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ৩৭ হাজার কোটি টাকা; যার মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩২ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে গত ফেব্রুয়ারি শেষে ব্যাংকিং খাতে সরকারের মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের এ সময়ে যা ছিল এক লাখ ৬২ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। শুধু ব্যাংক থেকে এক বছরে সরকারের নিট ঋণ বেড়েছে ৪৪ হাজার ৩১২ কোটি টাকা।

আবার ব্যাংক বহির্ভূত খাতে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে চার লাখ দুই হাজার ৬৩১ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল তিন লাখ ৭২ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা।
ব্যাংক ও অন্যান্য খাত মিলিয়ে সরকারের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৯ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল পাঁচ লাখ ৩৪ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা। অর্থ্যাৎ এক বছরে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের নিট ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি:

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি থেকে সরকার ঋণ পেয়েছে ১৪ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ২৯ হাজার ৩১১ কোটি টাকা।
ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের আট মাসে নতুন করে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৭১ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। এ সময়ে ক্রেতাদের অর্থ ফেরত দিয়েছে ৫৬ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকার।
আর শুধু গত ফেব্রুয়ারিতে সঞ্চয়পত্র থেকে দুই হাজার ৫২২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার।