রোহিঙ্গা গণহত্যার নতুন শুনানিতে সু চির জায়গা নেবে মিয়ানমার জান্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ নিয়ে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতে ফের শুনানি শুরু হতে যাচ্ছে। গত সোমবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) শুরু হয় এই শুনানি। আগের শুনানিতে মিয়ানমারের পক্ষে দেশটির নেত্রী অং সান সু চি অংশ নিলেও এবার সেই জায়গা নিতে যাচ্ছে দেশটির ক্ষমতা দখলকারী জান্তা সরকার।

২০১৭ সালে রোহিঙ্গা নিপীড়নের ঘটনায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আইসিজে আদালতে মামলা দায়ের করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। ওই নিপীড়নের কারণে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। মামলা দায়েরের পর থেকে জাতিসংঘের তদন্তকারীরা বলে আসছেন মিয়ানমার সেনাবাহিনী ‘গণহত্যার উদ্দেশ্য’ নিয়ে অভিযান চালিয়েছে।

এর আগে হেগের আদালতে মিয়ানমারের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেয় দেশটির সাবেক নেতা অং সান সু চি। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছিলো সে। সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে বর্তমানে আটক রয়েছে সে। গত বছরের সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় সু চি। তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে বেশ কয়েকটি অভিযোগ।
গতকাল সোমবার আইসিজের শুনানিতে মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব কে করবে তা নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। অভুত্থানের পর দেশটির নির্বাচিত আইনপ্রণেতাদের নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যের সরকার জানায় তারা আদালতে মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করার কথা। এছাড়া তারা এই মামলা থেকে প্রাথমিক আপত্তি প্রত্যাহার করে নিয়েতে চায়। এরপর আশা করা হচ্ছে সেনাবাহিনী জাতিসংঘের আদালতে দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।

বিভিন্ন মানবাধিকার গ্রুপ ও আইনজীবীরা এই ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মিয়ানমার অ্যাকাউন্টিবিলিটি প্রজেক্ট বলেছে এটা স্পষ্ট যে, জাতিসংঘের কোনও ফোরামে, আইসিজে বা কোনও আন্তর্জাতিক সংস্থায় মিয়ানমার রাষ্ট্রকে প্রতিনিধিত্ব করার ভিত্তি জান্তা সরকারের নেই।

বাংলাদেশের কক্সবাজার শিবিরে অবস্থান করা রোহিঙ্গা স্টুডেন্ট নেটওয়ার্কের এক প্রতিনিধি বলেছে, এই মামলা কেবল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিচার পাওয়ার আশা নয়। এই মামলা মিয়ানমারে কেন্দ্রীয় গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আশাও বটে। এই প্রতিনিধি বলেন, মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমানে যারা লড়াই করছে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগও এই মামলা।
সেনা অভ্যুত্থান এবং এরপর নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক সহিংসতার পর মিয়ানমারে সংখ্যালঘুদের নিয়ে মনোভাবে পরিবর্তন এনেছে। আগে রোহিঙ্গাদের প্রতি খুব কম সহমর্মিতা দেখা গেলেও অভ্যুত্থানের পর অনেক বিক্ষোভকারী রোহিঙ্গাদের পক্ষে না দাঁড়ানোর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।

এই সপ্তাহে আইসিজে আদালত মিয়ানমারের তোলা প্রাথমিক আপত্তির বিষয়ে শুনানি করবে। আগে মিয়ানমার সরকার বেশ কয়েকটি আপত্তি উত্থাপন করে। তাদের দাবি ছিল গাম্বিয়ার মামলা করার অধিকার নেই কারণ তারা অভিযোগকৃত নিপীড়নে কোনও ভাবে আক্রান্ত হয়নি।