রাজনৈতিক সমাধানের আশ্বাসে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নিয়ে আইনি নোটিশ প্রত্যাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক:  জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সমাধানের আশ্বাসে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নিয়ে আইনি নোটিশ প্রত্যাহার করেছে নোটিশকারি অশোক কুমার।

বুধবার ( ১৯ আগস্ট) নোটিশকারি অশোক কুমার ঘোষের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।  

কি কারনে নোটিশ প্রত্যাহার করা হয়েছে জানতে চাইলে নোটিশকারি বাংলাদেশ মাইনোরিটি সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অশোক কুমার সাহা বলে, সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ লেখার দাবিতে রিট করার জন্য জুলাই মাসের শেষের দিকে আইনী নোটিশ দেই। নোটিশ দেওয়ার পর বিশিষ্ট লেখক, সাংবাদিক ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাসগুপ্ত, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সামাজিক সংগঠন থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন।

তিনি আরও জানান, অনেকের কাছ থেকে আমরা আশ্বাসও পেয়েছি। তারা বলেছেন, রাজনৈতিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে একটি সমঝোতায় আসা সম্ভব। এক্ষেত্রে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই বিষয়টি সমাধান হবে বলেও অনেকে জানিয়েছেন। সেই কারণে নোটিশ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিষয়টি আদালত কর্তৃক  নিস্পত্তিকৃত হলেও একটি মহল দেশে আবার সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা তৈরীর চেষ্ঠায় এরকম নোটিশ পাঠানো হয়ে থাকতে পারে মনে করছেন সচেতন মহল। গত ২৮ মার্চ ২০১৭ রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দুটি রিট  খারিজ করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখেন উচ্চ আদালত।

এই বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ একজন আইনজীবি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের চার মূলনীতিতে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ কথাটা ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। এর ব্যাখ্যা বঙ্গবন্ধু নিজেই দিয়ে গেছেন। সে ব্যাখ্যা মেনে নিলে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ সংবিধানে ‘ইসলাম’ থাকলে আপত্তি থাকার কথা নয়। গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ লিখেছেন : “বাংলাদেশের যে ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ ঘোষিত হলো, তা ইসলামহীন সেক্যুলারিজম নয়। কারণ মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ইসলামসংক্রান্ত অনুষ্ঠান একটু বেশিই যেন প্রচারিত হতো। হিন্দু-বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে বিশেষ কিছুই হতো না। কিন্তু কেন তা হতো? তা হতো এই জন্য যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান শ্রোতার কাছে ইসলামী অনুষ্ঠানের বিশেষ আবেদন ছিল। যার বিশেষ আবেদন থাকে, তার প্রয়োজন অস্বীকার করা যায় না। বাংলাদেশ কি সেদিন ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ হতে চেয়েছিল, নাকি অসাম্প্রদায়িক হতে চেয়েছিল? সেদিন বাংলাদেশের ধর্মাবলম্বী-নির্বিশেষে বাঙালি জনগণ চেয়েছিল অতীতের সাম্প্রদায়িক বিষ ধুয়ে-মুছে একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিপূর্ণ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে—সেক্যুলার হতে নয়।” (সলিমুল্লাহ খান সম্পাদিত বেহাত বিপ্লব ১৯৭১, আগামী প্রকাশনী, দ্বিতীয় সংস্করণ, দ্বিতীয় মুদ্রণ, ডিসেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ২২৮)