‘যমুনা সেতু তৈরির সময়েও ঝামেলা করেছিল বিশ্ব ব্যাংক’

নিউজ ডেস্ক:
অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী২০১১ সালে পদ্মা সেতু তৈরির সময় বাগড়া দেয় বিশ্ব ব্যাংক। এর ২০ বছর আগে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু তৈরির সময়েও ঝামেলা করেছিল এ প্রতিষ্ঠানটি।
জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, “আমরা যখন যমুনা সেতুর দরপত্র আহ্বান করতে যাবো সেই সময়ে বিশ্ব ব্যাংক আমাদের বলে, ‘এখন এটি কোরো না’ (হল্ট, ডোন্ট ফ্লোট দ্য টেন্ডার)।”
বুধবার (৬ মার্চ) রাতে জাপানি দূতাবাস আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
জামিলুর রেজা চৌধুরীকে জাপানের অন্যতম বেসামরিক ‘অর্ডার অব দ্য রাইজিং সান’ খেতাবে ভূষিত করতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জাপানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায়ে অবদান রাখায় তাকে এ সম্মান জানানো হয়।
অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী জানান, ১৯৮৫ সালে যমুনা সেতু তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর চার বছর পরে এর দরপত্র আহ্বান করার সময়ে এটি বন্ধ করে দেয় বিশ্ব ব্যাংক।
তিনি বলেন, ‘এর পরের চার বছর আমরা কোনও পদক্ষেপ নিতে পারিনি। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আমাকে খবর দিয়ে জানান, তিনি জাপান যাচ্ছেন এবং আমাকে তিনি সঙ্গে করে নিয়ে যেতে চান।’
অধ্যাপক জামিল জানান, অর্থমন্ত্রী তাকে নিতে চেয়েছিলেন, কারণ যমুনা সেতুর অর্থ সংস্থানের জন্য তিনি জাপানের সঙ্গে দর কষাকষি করছিলেন।
তিনি বলেন, ‘সেই সময়ে আমাদের ৬০০ মিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন ছিল। এর মধ্যে ২০০ মিলিয়ন ডলার বিশ্ব ব্যাংক, ২০০ মিলিয়ন ডলার এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং ২০০ মিলিয়ন জাপানের দেওয়ার কথা ছিল।’
তিনি জানান, ওই সফরে জাপানের পক্ষ থেকে যমুনা ব্রিজ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে চাওয়া হয় এবং তার যাওয়ার কারণে তাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিতে অনেক সুবিধা হয়।
যমুনা ব্রিজ তৈরির সময়ে যে ‘প্যানেল অব এক্সপার্ট’ গঠন করা হয় সেই প্যানেলের প্রধান হিসেবে ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৮ অর্থাৎ ব্রিজের কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত অধ্যাপক জামিল দায়িত্ব পালন করেন।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক জামিল সম্পর্কে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, ‘জামিলকে আমি তার জন্মের সময় থেকে চিনি, কারণ তার জন্ম হয়েছে সিলেটে। সে আমার থেকে দশ বছরের ছোট এবং আমি তার বাবাকে চিনতাম যিনি ১৯২৯ সালে প্রকৌশল পাস করেন।’ প্রকৌশল বিষয়ে জামিল তার শিক্ষক এবং পথপ্রদর্শক (গাইড) বলেও মন্তব্য করেন মুহিত।
জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোইয়াসু ইজুমি বলেন, ‘১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু যখন জাপান সফর করেন তখন যমুনা ব্রিজের বিষয়টি অবতারণা করে সহায়তা চান।’
তিনি জানান, ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত জাপানের একটি সংস্থা এর ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ করে বলে, এটি বানানো কোনোভাবেই লাভজনক হবে না। কিন্তু জামিলুর রেজা চৌধুরী এটি ভুল প্রমাণিত করে ব্রিজটি তৈরি করার ক্ষেত্রে বিরাট বড় অবদান রেখেছেন।
প্রসঙ্গত, ১৮৭৫ সালে জাপানের সম্রাট মেইজি ‘অর্ডার অব দ্য রাইজিং সান’ সম্মান চালু করেন। এখন পর্যন্ত জামিলুর রেজা চৌধুরীসহ মোট নয়জন বাংলাদেশি এই সম্মানে ভূষিত হলেন।