মিরপুর ডিওএইচএসে কুরবানীতে বাধা দেয়ায় আইনি নোটিশ

মিরপুর ডিওএইচএসে কুরবানীতে বাধা দেয়ায় আইনি নোটিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত ১১ই জুলাই মিরপুর ডিওএইচএস পরিষদের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মিরপুর ডিওএইচএস এর অভ্যন্তরে পশু জবাই তথা কুরবানি না করার সিদ্ধান্ত নেয়ায় মিরপুর ডিওএইচএস পরিষদের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন ডিওএইচএস এর বাসিন্দা মাশহুদা আফরোজ চৌধুরী।

আজ বুধবার বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি ব্যারিষ্টার এবিএম গোলাম মোস্তফা তাজের মাধ্যমে নোটিশটি পাঠানো হয়েছে। নোটিশের বিষয়টি আইনজীবী নিজেই নিশ্চিত করেছেন।

নোটিশে বলা হয়, গত ১১ জুলাই ২০২১ তারিখে “মিরপুর ডিওএইচএস পরিষদ”-এর পক্ষ থেকে স্বাক্ষরিত ফ্ল্যাট মালিকদেরকে প্রদত্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে ৩ নং অনুচ্চেদের খ উপ অনুচ্ছেদের পশু কোরবানী অংশে বলা হয়েছে: বর্তমান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে মিরপুর ডিওএইচএস এর সম্মানিত ……….. এ বছর মিরপুর ডিওএইচএস অভ্যন্তরে পশু জবাই (কোরবানী) না করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে ইত্যাদি বক্তব্য বিজ্ঞপ্তি আকার প্রকাশ করেন। যেহেতু পবিত্র ঈদুল আযহা্ মুসলমানগণের একটি দ্বীনি উৎসব এবং পশু কুরবানী একটি দ্বীনি ইবাদাত। পবিত্র ঈদুল আযহায় সাধ্যমতো পশু কুরবানী করা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিমগণের একটি ওয়াজিব (বাধ্যতামূলক) আমল। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরবানী সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন- “আপনার মহান রব তায়ালা উনার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কুরবানী করুন।” (পবিত্র সূরা কাওছার শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২) । আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র কুরবানীর গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে ইরশাদ করেন, “সামর্থ্য থাকার পরও যে ব্যক্তি পবিত্র কুরবানী করে না; সে যেন ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়।” অর্থাৎ সামর্থ্য থাকার পরও যারা পবিত্র কুরবানী করে না, তাদের উপর খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা কঠিন অসন্তুষ্ট হন। তিনি কুরবানী সম্পর্কে আরও ইরশাদ করেন- “আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য পবিত্র কুরবানী এই উদ্দেশ্যে নির্ধারিত করেছি, যেনো তারা ওই নির্দিষ্ট গৃপালিত পশুগুলির উপর (যবেহ করার সময়) মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক উচ্চারণ করে যা তিনি তাদেরকে রিযিক হিসেবে দান করেছেন। (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৪)। অতঃপর তিনি (হযরত ইসমাইল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম) যখন উনার সম্মানিত পিতা হযরত ইব্রাহিম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হে আমার সম্মানিত আওলাদ! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি আপনাকে যবেহ করছি, এখন বলুন, আপনার অভিমত কী? হযরত ইসমাইল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে আমার সম্মানিত পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তাই করুন, মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। (পবিত্র সূরা আছ-ছফফাত শরীফ, আয়াত ১০০-১১০)। পবিত্র দ্বীন ইসলামে প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমান লোকের জন্য কোরবানী করা ওয়াজিব। পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাসের ১০ তারিখের ছুবহে ছাদিক হতে ১২ তারিখের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হিসেবে আদায় করিতে হয়। উপরোক্ত কারনে যুগ যুগ ধরে মুসলমানগণ জিলহ্জ্জ্ব মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ পশু কোরবানী দিয়া থাকেন। কোরবানীর ওয়াজিব আমল পালন করা প্রত্যেক মুসলমানগণের ধর্মীয় অধিকার যাহা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত যাহা হইতে বিরত রাখা কিংবা কোনরুপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকরা আইনানুগ নহে।

নোটিশে আরো বলা হয়, যেহেতু তথাকথিত করোনাভাইরাস সংক্রমণের সাথে পশু কুরবানী করা কিংবা কুরবানীর পশুর কোনো সম্পর্ক নেই। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কিংবা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন আসন্ন ঈদুল আযহায় পশু কুরবানী করা কিংবা হাউজিং কমপ্লেক্সে পশু প্রবেশ করানোর ক্ষেত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি,বরং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশু কুরবানীর ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। এমনি সরকার আসন্ন কোরবানী উপলক্ষে সকল প্রকার বিধি নিষেধ শিথিল করেছেন। যাহা দ্বারা ইহাই প্রমানিত হয় যে, সবাই সকল স্থানে কোরবানী দিতে পারবে। এমন অবস্থায় মিরপুর ডিওএইচএস পরিষদ এর কোনো আইনগত এখতিয়ারই নেই যে, তারা মিরপুর ডিওএইচএস এর অভ্যন্তরে পশু প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে একটি বেআইনি নির্দেশনা জারি করবে। সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম দ্বীন ইসলাম, সুতরাং দ্বীন ইসলামী আক্বীদাসমূহ রাষ্ট্র দ্বারা সুরক্ষিত। বাংলাদেশের সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রত্যেক নাগরিকের নিজ নিজ দ্বীন পালনের অধিকার রয়েছে। সুতরাং পবিত্র ঈদুল আযহায় পশু কুরবানী করা বাংলাদেশের প্রত্যেক মুসলমানের সাংবিধানিক অধিকার। অথচ মিরপুর ডিওএইচএস এ বসবাসরত মুসলমানগণকে তাদের সাংবিধানিক অধিকার পালনে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। মিরপুর ডিওএইচএস এ কুরবানীর পশু প্রবেশে বাধা দেওয়ার এবং কোরবানী না করার সিদ্ধান্ত পবিত্র দ্বীনি অধিকারে হস্তক্ষেপ করা এবং দ্বীনি অনুভূতিতে আঘাত করা—যা বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ২৯৫(ক) ধারা মোতাবেক একটি ফৌজদারী অপরাধ।

নোটিশে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে মিরপুর ডিওএইচএস পবিত্র কুরবানীর পশু প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত এবং কোরবানী না করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা আহবান জানানো হয়েছে। অন্যথায় শক্ত আইনি পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন।