‘বিশ্বজুড়ে বেকার মানুষের সংখ্যা আরো বাড়বে’

আগামী দু’বছর বিশ্বে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বাড়বে আশঙ্কাজনক হারে। জেনেভাভিত্তিক আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বুধবার সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব মান কি মুনের মুখপাত্র ফারহান হক।

মহাসচিবের মুখপাত্র আইএলও প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেন, ‘বিদায়ী ২০১৫ সালে অর্থনেতিক মন্দার প্রভাবে ২০১৬ সালে বিশ্বজুড়ে বিদ্যমান বেকার মানুষের সংখ্যার সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হবে আরো ২ দশমিক ৩ মিলিয়ন, ২০১৭ সালে যুক্ত হবে আরো ১ দশমিক ১ মিলিয়ন।

কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরিতে আরো সচেষ্ট হতে জাতিসংঘ মহাসচিব সদস্য রাষ্ট্রপ্রধান এবং ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরাম বৈঠকে আলোচনা করেন। আলোচনায় চাকরির সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রে যুব সম্প্রদায়কে প্রাধান্য দিতে নেতাদের অনুরোধ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। ফোরামের বৈঠক হচ্ছে সুইজারল্যান্ডে।

আইএলও পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বিদায়ী ২০১৫ সালে বিশ্বজুড়ে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯৭ দশমিক ১ মিলিয়ন যা ২০১৪ সালের চেয়ে ১ মিলিয়ন বেশি। বেকার মানুষের এ সংখ্যা ২০০৮ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার আগের হিসাবের চেয়ে ২৭ মিলিয়ন বেশি।

চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা ২০১৫ সালে মূলত বেশি ছিল উদীয়মান এবং উন্নয়ণশীল অর্থনীতির দেশগুলোয়। আগামী দু’বছরেও এসব দেশে নতুন চাকরিপ্রার্থী মানুষের সংখ্যা বেশি থাকবে। বিশেষত এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা, পণ্য উৎপাদনকারী মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে নতুন চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা বাড়বে বলে উল্লেখ করা হয়েছে আইএলও’র ওই প্রতিবেদনে।

বলা হয়েছে, আগামী দু’বছরে ব্রাজিল এবং চিনে চাকরিপ্রার্থী মানুষের সংখ্যা বাড়বে অস্বাভাবিকহারে। ব্রাজিলে সম্ভাব্য নতুন চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা হতে পারে ৭ লাখ এবং চীনে এ সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ৮ লাখে।

আইএলও মহাপরিচালক গাই রাইডার মঙ্গলবার জেনেভায় বলেছেন, ‘ভোগ্যপণ্যের দাম আস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়া এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির সূচক কমায় বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।’

এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে গাই রাইডার বলেন, ‘অন্যথায় সামাজিক অস্থিরতা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

আইএলও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নত বিশ্বের অনেকে দেশে  বেকারত্বের হার কমেছে এবং উদীয়মান অর্থনীতির অনেক দেশে কর্মসংস্থান বাড়তে শুরু করেছে। বিশ্বজুড়ে কম বেতন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চাকরি করা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে বলে উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।

বিশ্বজুড়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চাকরি করা মানুষের সংখ্যা ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন, যা মোট চাকরিজীবী মানুষের ১৬ শতাংশ। প্রতিবেদনের বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলের ৭০ শতাংশ মানুষ চাকরি করছেন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে।

আইএলও প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, আগামী বছরগুলোতে বিশ্বে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে করা মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে ৪৬ শতাংশ। কর্মপরিবেশে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকব উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো। এসব দেশে উনুন্নত কর্মপরিবেশে কাজ করা মানুষের সংখ্যা আগামী বছরগুলোতে ২৫ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে বলে উল্লেখ করা হয় আইএলও প্রতিবেদনে।