প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকের অনুকুলে নয়

শিক্ষানীতি ২০১০

মুহম্মদ জাহাঙ্গীর : সরকার শিক্ষানীতি-২০১০কে শিক্ষা আইন-২০১৬ রূপে জারি করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েসসাইটে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মাত্র ৭ দিন (১০ এপ্রিল-২০১৬ পর্যন্ত) সময় দেয়া হয়েছিল মতামত জানানোর জন্য। সরকার শিক্ষানীতির উপর জনগণের মতামত চেয়েছে, কিন্তু সময় মাত্র ৭ দিন? এর আগেও নাকি মতামত চেয়ে আরো ২বার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সাধারণ জনগণের কয়জন এই বিজ্ঞপ্তি এবং এই শিক্ষানীতি স¤পর্কে জানেন? শতকরা কয়জন? খুঁজলে হয়তো শতকরা ১ জনও পাওয়া যাবে না।

তাহলে সরকার কি একতরফাভাবে বিতর্কিত শিক্ষানীতি-২০১০-কে শিক্ষা আইন-২০১৬ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে নিবে? কিন্তু সরকার সেটাতো করেনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় নাকি এই নিয়ে ৩বার জনগণের মতামত চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। আগের বিজ্ঞপ্তিগুলো পত্র-পত্রিকায় দিয়েছিলো কিনা তা জানা যায়নি। তবে মতামত চেয়ে এবারের বিজ্ঞপ্তিটা শুধুমাত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছিল। সাধারণ জনগণের কয়জন প্রতিদিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইট ভিজিট করে? মতামত চেয়ে সেই বিজ্ঞপ্তি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দিয়ে রাখলে কতজন মতামত দিতে পেরেছেন বলে আশা করা যায়?

এরকম একটা জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করার বিকল্প ব্যবস্থা কেন নেয়া হলো না? সরকার যদি সত্যিই মতামত চাওয়ার ব্যাপারে আন্তরিক হতো, তাহলে এই শিক্ষানীতি কিংবা শিক্ষা আইনের উল্লেখযোগ্য দিক সম্পর্কে পত্র-পত্রিকায় টেলিভিশনে আলোচনা করে জনগণকে সচেতন করা হলো না কেন? অতীতে এর চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে যথেষ্ট বক্তৃতা, বিবৃতি, আলোচনা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম হতে দেখেছি। শিক্ষানীতির বা শিক্ষা আইনের ব্যাপারে আমরা এ জাতীয় কিছুই দেখিনি। তাহলে কি আমরা ধরে নেবো, জনগণের মতামত চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে শুধু দায়সারাভাবে? শুধুমাত্র ‘দায়িত্ব যথাযথভাবে পালিত হয়েছে’- এ কথাটা বলার জন্যই?

খসড়া শিক্ষানীতির পঞ্চম অধ্যায়, বিভিন্ন বিষয়াবলীর ৪৯-এর ১ ও ২ ধারায় বর্ণিত হয়েছে:
(১) শিক্ষার্থীর চরিত্রে মহৎ গুণাবলীর সঞ্চার এবং তাহাদিগকে সৎসাহস ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধকরণ, সামাজিক ও ধর্মীয় চেতনা এবং নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত করিবার লক্ষ্যে শিক্ষাক্রম নির্দেশিত পাঠ্যপুস্তকে সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত হইবে।
(২) ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্মের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অবহিত হওয়া, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পরিচালনা এবং ধর্মীয় বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের জন্য মানস¤পন্ন পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রদান করা হইবে।
৪৯-এর ২-এর ধারা মতে- জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব ধর্মের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টানের কৃষ্টি কালচারগুলো গণহারে ঢুকানে হবে যেটা আমরা বর্তমান পাঠ্যপুস্তকে দেখতে পাচ্ছি। এই শিক্ষানীতি শিক্ষা আইন আকারে পাস হয়ে গেলে আইনগতভাবে মুসলমানদের সন্তানদেরকে হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম, খ্রিস্টধর্ম ইত্যাদি শিখতে বাধ্য করা হবে।

এদেশের শতকরা ৯৮ ভাগ লোক মুসলমান। ‘ইসলাম’ হলো মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তষ্টিপ্রাপ্ত মনোনীত দ্বীন। দ্বীন ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। দ্বীন ইসলামে যারা পরিপূর্ণভাবে দাখিল হতে পেরেছে, তারা সর্বজনমান্য উত্তম চরিত্রের, মহৎ গুণাবলীতে পরিপূর্ণ এবং সর্বোত্তম নৈতিকতার অধিকারী হয়েছেন। হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী আজমেরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শাহজালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের নাম মুবারক এদেশের কে না জানে? ইসলামের ইতিহাসে এরকম লক্ষ লক্ষ উদাহরণ রয়েছে। তাই মুসলমানদের নৈতিকতা শিক্ষার জন্য ইসলাম ব্যতীত অন্য কোথাও কোনো কিছু তালাশ করতে হবে না। পক্ষান্তরে দেখা যাচ্ছে- হিন্দু, বৌদ্ধ কিংবা খ্রিস্টানদের ধর্মে, রীতি-নীতি, কৃষ্টি-কালচর অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও নৈতিকতা বিবর্জিত আচরণে পরিপূর্ণ।

এদেশের শতকরা ৯৮ ভাগ লোক মুসলমান। এটা এদেশের মুসলমানদের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটার উপর নির্ভর করছে আমাদের সন্তানদের এবং বাংলাদেশের জনগণের ভবিষ্যৎ। তাই আমাদের দাবি- ৪৯(২) ধারাকে নিম্নোক্তভাবে সংশোধন করা হোক-
(২) হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্মের ছাত্রদেরকেও ইসলাম ধর্ম এবং ইসলামের সুমহান ব্যক্তিত্বদের জীবনী সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের জন্য মানসম্পন্ন পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রদান করা হইবে।