প্রতিদিন বাঁচার লড়াইয়ে বিপর্যস্ত ভেনিজুয়েলাবাসী

ডেস্ক: মনে করুন, আপনার বা আপনার কোনো প্রিয়জনের কঠিন অসুখ। তাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তার রোগী দেখলেন। কিন্তু, কোনো ওষুধপত্রের ব্যবস্থা করতে পারলেন না। বরং প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েই নিজের আয়ত্তাধীন শলাপরামর্শ দিয়ে রোগীকে সুশ্রুষা করার চেষ্টা করলেন। আপনি দেখলেন, বুঝলেন, কিন্তু কিছু করতে পারলেন না, কেমন লাগবে আপনার? অসুখ অল্প হলে তো কোনো কথা নেই, কিন্তু, কঠিন হলে অসুখ হলে তার ওষুধ না পেলে কেমন লাগবে!

ঠিক এমনই দিন চলছে এখন ভেনিজুয়েলায়। প্রাত্যাহিক প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিছুই নেই। হাসপাতালে ওষুধ নেই, বেকারিতে রুটি নেই, দোকানে প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী নেই, তার মধ্যেই তারা স্বাভাবিক এক জীবনযাপনের চেষ্টা করছে।

ভেনিজুয়েলায় এক যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গত কয়েক মাসের সংহসিতায় সেখানে মারা গেছে ৭৫ জন। গত বৃহস্পতিবারই এক পুলিশ অফিসার হেলিকপ্টার থেকে সুপ্রিম কোর্ট ভবনে গ্রেনেড হামলা চালান।

ভেনিজুয়েলায় সরকারি বিরোধী আন্দোলন প্রায় গৃহযুদ্ধের রূপ নিয়েছে। ভেনিজুয়েলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব দ্রব্যই বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তা আর সম্ভব হচ্ছে না। জনগণ চায় প্রেসিডেন্ট মাদুরোর পদত্যাগ। কিন্তু, মাদুরো বলছে, এটা সন্ত্রাসীবাহিনীর চক্রান্ত। সরকার এবং জনগণ একে অপরকে সন্ত্রাসী বলে গালাগাল করছে। সরকারি বাহিনী অস্ত্র হাতে বিদ্রোহী বাহিনীকে দমন করার চেষ্টা করছে। বিদ্রোহী বাহিনীর হাতেও কিছু অস্ত্রশস্ত্র এসেছে। সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠছে বিদেশী শক্তি তাদের দেশের ভিতর একটা গোলযোগ সৃষ্টি করার জন্য সন্ত্রাসীবাহিনীর হাতে অবৈধ অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। তাতে নাকাল হচ্ছে সাধারণ মানুষের জীবন। জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত। বেকারিগুলো শান্ত, শীতল। একটি বেকারির মালিক জাভির ডোমিংয়েজ বলছে, একদিন আমার বেকারির চুলায় সারাদিন আগুন জ্বলতো, ৬০ জন লোক এখানে কাজ করতো, প্রায় ৩ হাজার কিলোগ্রাম আটা লাগতো আমার প্রতিদিন, আজ তার কিছুই নেই, চুল্লিগুলো জ্বলছে না, লোকজনও সব ছাঁটাই করে দিয়েছি। সরকার আমাদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

ডা. ক্রিস্টান রামোস বললো, প্রয়োজনীয় ওষুধ নেই। খারাপ কোনো রোগী এলে আমি আমার সাধ্যানুযায়ী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা যতটুকু পারি করি। ওষুধ ছাড়াই রোগীকে উপশম করার চেষ্টা করি। এ এক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি। অনেক কঠিন অসুখ নিয়ে অনেক রোগী ওষুধ পাচ্ছে না। তাদের চিকিৎসা হচ্ছে না।

খাদ্য ও ওষুধের তুলনায় চুল কাটাটা সাধারণ ব্যাপার। তারপরও অনেক পুরুষকে প্রাত্যাহিক এ কাজটা করতে হয়। ২২ বছর বয়সি নাপিত জেসাস লোপেজ বললো, সপ্তায় আমরা একদিন দুদিন পানি পাই। তা দিয়েই সারা সপ্তাহের কাজ চালাই। সেভিং ক্রিমের অভাবে অনেকে দাড়ি কাটতে আসে না। আমার সেলুনটা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।

এগুলো বাইরের দৃশ্য। ঘরের ভিতর নিত্যদিনের দৃশ্য আরো ভয়ঙ্কর। গৃহিণীরা বলছে, বাইরে থেকে দেখে কেউ কল্পনাও করতে পারবে না আমরা কীভাবে বেঁচে আছি। আমরা আমাদের সন্তানদের পর্যাপ্ত খাদ্য দিতে পারছি না। যতটুকু আমাদের খাদ্য দরকার তারচেয়ে অনেক কম খাদ্য খাচ্ছি। প্রায় দুর্ভিক্ষের মতো এক পরিস্থিতি আমরা মোকাবেলা করছি। দ্রুত এ পরিস্থিতির অবসান না হলে আমাদের ধ্বংস অনিবার্য।