প্রতারণার কথা স্বীকার করল বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ব্যাংক

নিউজ নাইন২৪ডটকম, ডেস্ক: সর্বশেষ বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম ব্যাংক ওয়েলস ফার্গো। প্রতিষ্ঠানটি মার্কিন সরকারকে ১২০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হয়েছে। এ-সংক্রান্ত সমঝোতা অনুযায়ী, ক্ষতিপূরণ আদায় হলেও মার্কিন বিচার বিভাগ এ বিষয়ে যেকোনো সময় ওয়েলস ফার্গোর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে পারবে। খবর রয়টার্স।

যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন খাতে সবচেয়ে বড় ঋণদাতা ওয়েলস ফার্গো। স্যান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি ২০০১-০৮ সাল পর্যন্ত ইজারাধীন আবাসন সম্পত্তির ঋণঝুঁকির কথা গোপন করেছিল। ফলে ওইসব আবাসন ঋণের বীমা দাবি বাবদ ফেডারেল হাউজিং অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএইচএ) বিপুল পরিমাণ অর্থ পরিশোধে বাধ্য হয়েছিল।

মার্কিন বিচার বিভাগের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির সমঝোতা অনুযায়ী, ওয়েলস ফার্গো ২০০১-০৮ সাল পর্যন্ত তাদের দেয়া অনেকগুলো আবাসন ঋণ এফএইচএর বীমাকরণের উপযুক্ত বলে মিথ্যা সনদ দেয়ার কথা ‘স্বীকার করছে, মানছে ও এ-সংক্রান্ত দায়দায়িত্ব স্বীকার করছে’।

ওয়েলস ফার্গো একই সঙ্গে ২০০২-১০ সাল পর্যন্ত ভুলভাবে অবলিখিত ও ত্রুটিযুক্ত কয়েক হাজার ঋণ সম্পর্কে এফএইচএকে যথাসময়ে অবহিত করতে ব্যর্থ হওয়ার কথাও স্বীকার করেছে। ওয়েলস ফার্গোর সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কুর্ট লোফরানো এ কাজ তদারক করতেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানিয়েছে, ওয়েলস ফার্গোর অসদুপায় ও ব্যর্থতার কারণে ত্রুটিপূর্ণ ঋণগুলো শনাক্ত হওয়ার পর এফএইচএকে বিপুল অর্থের বীমা দাবি পরিশোধ করতে হয়েছিল। ফলে কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের করদাতা নাগরিকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ওয়েলস ফার্গোর সমঝোতা অনুযায়ী, কুর্ট লোফরানোর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগেরও নিষ্পত্তি ঘটেছে।

নব্বইয়ের দশকের শেষার্ধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন খাতে বিপুল পরিমাণ দায়িত্বহীন পুঁজি সঞ্চার হয়েছিল। ফলে সম্পত্তি বাজার ফুলেফেঁপে একপর্যায়ে বিরাট বুদ্বুদ সৃষ্টি হয়। ২০০৮ সালের দিকে ওই বুদ্বুদ বিস্ফোরণের কারণে সে দেশের অনেক বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ডুবতে বসেছিল। সংকটাপন্ন প্রতিষ্ঠান, আতঙ্কিত বিনিয়োগকারী ও দ্রুত সংক্রামক অনাস্থার কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে বিরাট তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছিল।

দায়িত্বহীন আচরণ ও অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগ নিষ্পত্তিতে ক্ষতিপূরণ দিয়ে মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা করেছে ব্যাংক অব আমেরিকা করপোরেশন, জেপি মরগান চেস অ্যান্ড কোম্পানি ও ডয়েচে ব্যাংক। কিন্তু ওয়েলস ফার্গো এত দিন এ ব্যাপারে সমঝোতায় রাজি হচ্ছিল না।

মার্কিন অ্যাটর্নি প্রীত ভারারা বলেছেন, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ সমঝোতা ওয়েলস ফার্গোয় বহু বছর ধরে চলে আসা দায়িত্বহীন অবলেখনের শাস্তি।

প্রীত ভারারা আরো বলেন, ঋণ ব্যবসা থেকে ওয়েলস ফার্গো বিরাট মুনাফা করেছে। অন্যদিকে কুঋণের বোঝা বেড়ে যাওয়ার পর থলি হাতে দাঁড়াতে হয়েছে সরকারকে।

সর্বশেষ এ সমঝোতায় আমেরিকান মর্টগেজ নেটওয়ার্ক এলএলসির বিরুদ্ধে উত্থাপিত মিথ্যা ঋণ সনদ প্রদানের অভিযোগও নিষ্পন্ন হয়েছে। ২০০৯ সালে ওয়েলস ফার্গো আমেরিকান মর্টগেজ নেটওয়ার্ক কিনে নিয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ায় ফেডারেল কৌঁসুলিরা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মিথ্যা ঋণ সনদ বিতরণের অভিযোগ তদন্ত করছিলেন।

বিচার বিভাগ ওয়েলস ফার্গোর বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে সমঝোতায় বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে এ বিষয়ে মামলার দরজা সরকারের জন্য খোলা থাকবে।

এক বিবৃতিতে ওয়েলস ফার্গো হোম লেন্ডিংয়ের প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাংকলিন কোডেল বলেছেন, এ সমঝোতা আইনি প্রক্রিয়াকে পেছনে রেখে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেবে। ফলে নিজেদের কাজে আরো বেশি সম্পদ ও শক্তি বিনিয়োগ করতে পারব আমরা।