নোয়াখালীতে নির্যাতিত নারীর পরিবারকে নিরাপত্তা দিতে নির্দেশ

নির্যাতিত নারীর পরিবারকে নিরাপত্তা দিতে নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে নিজ ঘরে সম্ভ্রমহানী চেষ্টা ও বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজ অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সরিয়ে নিতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে, ভিডিওটি সিডি বা পেনড্রাইভে কপি করে বিটিআরসিকে সংরক্ষণে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে এসব নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

একইসঙ্গে, ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ভিকটিমের পরিবারকে সব ধরনের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে নোয়াখালীর পুলিশ সুপারকে (এসপি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এছাড়াও ওই ঘটনায় করা ফৌজদারি মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে প্রতিবেদন চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ২৮ অক্টোবর বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ওই প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

একইসঙ্গে, ঘটনার বিষয়ে ভিকটিমের বক্তব্য গ্রহণে পুলিশের কোনো অবহেলা আছে কি না- তা অনুসন্ধান করতে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (এডিসি) নেতৃত্বে জেলা সমাজ সেবা অফিসার এবং সেখানকার স্থানীয় চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজের অধ্যক্ষকে ওই ঘটনা সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছে। অনুসন্ধান শেষে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করতে হয়েছে।

কয়েকটি আদেশের পাশাপাশি রুলও জারি করেছেন হাইকোর্ট। রুলে ওই নারীকে রক্ষায় এবং দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অবহেলার কারণে বেগমগঞ্জের ওসি ও বেগমগঞ্জ থানার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়েছেন আদালত।

আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও বেগমগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদেশের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

এর আগে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এসব প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও আব্দুল্লাহ আল মামুন।

ঘটনাটি আদালতের নজরে আনা ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে এ সংক্রান্ত বিষয়ে করা আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার (৫ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ (ভার্চুয়াল) স্বঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ এসব আদেশ দেন।

আদালতে আজ শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন ও সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, ইয়াদিয়া জামান, তানজিম আল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এ এম জামিউল হক ফয়সাল ও রাশিদা চৌধুরী নিলু।

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ রাসেল চৌধুরী।

গত ২ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার ৩২ দিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর রোববার (৪ অক্টোবর) বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এ ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার নূর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে গৃহবধূর বসতঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রাখে স্থানীয় বাদল ও তার সহযোগীরা। এরপর গৃহবধূকে সম্ভ্রমহানীর চেষ্টা করে তারা। এ সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তাকে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে তারা মোবাইলে ভিডিও চিত্র ধারণ করে।

সোমবার দুপুর ২টায় র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম সংবাদ সম্মেলনে জানান, ৫ অক্টোবর রাত আড়াইটায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন চিটাগাং রোড এলাকা থেকে বিশেষ অভিযান চালিয়ে মো. দেলোয়ার হোসেনকে (২৬) একটি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও দুই রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করা হয়। পরে দেলোয়ারের দেয়া তথ্যানুযায়ী ৫ অক্টোবর ভোর সাড়ে ৫টায় ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের ফাঁড়ির গলি এলাকা থেকে ঘটনার প্রধান আসামি নূর হোসেন বাদলকে (২০) গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় আসামিরা ঘটনা ঘটানোর কয়েক দিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে নির্যাতিতার কাছে টাকা দাবি করে।

নোয়াখালীতে গৃহবধূকে নির্যাতনসহ সারাদেশে সংঘটিত সম্ভমহাণী-নিপীড়নের ঘটনায় বিচারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন সম্মিলিত ছাত্র-জনতা। এদিকে রাজধানীর উত্তরা ও নারায়ণগঞ্জে বিক্ষোভ কর্মসূচির খবর পাওয়া গেছে।

শাহবাগের কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ‘দীর্ঘদিনের বিচারহীনতায় নারী-শিশু সম্ভ্রবহানী, নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির ঘটনা বেড়েই চলেছে। এসব ঘটনায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা লোকজন জড়িত। নোয়াখালীর ওই ঘটনা ৩২ দিন আগের। এতদিন রাষ্ট্র, এই সরকার কী করেছে? এভাবে আর চলতে পারে না। এবার রাস্তায় নেমে আসতে হবে।’