নীলফামারীতে ৬ মণ ধানে ১ কেজি ইলিশ!

সৈয়দপুর (নীলফামারী) সংবাদদাতা: নবাব শায়েস্তা খাঁর আমলে এক টাকায় ৮ মণ চাল পাওয়া যেত। সেই নবাবি আমল চলে গেছে। পরিস্থিতিও পাল্টে গেছে। এখন ১ কেজি ইলিশ মাছ কিনতে কৃষকদের গুণতে হচ্ছে ৬ মণ ধান।
শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরের প্রতিটি বাজারে ইলিশের দাম ও ধানের দামের এ চিত্র পাওয়া যায়। কারণ হিসেবে জানা যায় আসন্ন ফসলী সনের পহেলা বৈশাখ।
পহেলা বৈশাখকে উপলক্ষ করে নীলফামারীতে ইলিশ মাছের ব্যবসা হঠাৎ বেড়ে যাওয়া কারণ হিসেবে মৎস ব্যবসায়ীরা জানান, মাছের চালান কম, তাছাড়া মোকামে দামটাও একটু বেশি। সে কারণে বেশি দামে বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
এদিকে উপজেলার হাটবাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে মাত্র সাড়ে ৩শ’ টাকায়। ফলে একজন কৃষককে এক কেজি ইলিশ মাছ কেনার জন্য ৬ মণ ধান বিক্রি করতে হচ্ছে।
উপজেলার বাঙালিপুর ইউনিয়নের কৃষক রেজাউল করিম জানান, পরিবারের চাপে ইলিশ কেনার জন্য বাজারে এসেছিলাম কিন্ত যে দাম কেনা সম্ভব নয়। ছেলে-মেয়েরা বেশি বায়না ধরলে ২/৩শ’ টাকার মধ্যে জাটকা কিনে বাড়ি নিয়ে যাবো।
পহেলা বৈশাখে হুজুগে মাতা বাঙালির ইলিশ খাওয়ার নতুন প্রথা প্রসঙ্গে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ বিভাগের শিÿক প্রফেসর ড. কাজী আহসান হাবীব জানান, পহেলা বৈশাখে ইলিশ মাছ খাওয়ার এই প্রথা আমাদের দেশের ইলিশ সম্পদের জন্য শুধু ক্ষতিকরই নয়, এই প্রথা ধ্বংস করে দিতে পারে আমাদের গর্বের এই সম্পদ।
এ ব্যাপারে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম ইমামুল হক বলেন, বৈশাখের এ সময়টি হচ্ছে রূপালী ইলিশের প্রজণনের মৌসুম। আর এ সময়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপনে রূপালী ইলিশ খাওয়া মানে হচ্ছে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করা। গত বুধবার (৬ এপ্রিল) সকাল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন উপাচার্য। তিনি পহেলা বৈশাখে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পান্তা-ইলিশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
বিশেষজ্ঞরা জানায়, ইলিশ খাওয়ার এই রীতি আমাদের বাংলাদেশী ঐতিহ্য তো নয়-ই, উপরন্তু এই অর্বাচীন প্রথা আমাদের ইলিশ সম্পদের ধ্বংসের কারণ। ফসলী বর্ষবরণ যে কয়টি জিনিস এখন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তার মধ্যে একটি জঘন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে পান্তা-ইলিশ খাওয়া।