দুর্নীতি ও সিস্টেম লস কমেছে বিদ্যুতে: নসরুল হামিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি ও সিস্টেম লস কমে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে সিপিডি আয়োজিত পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি সেক্টরের চ্যালেঞ্জ শীর্ষক সংলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি কমে যাচ্ছে। বিএনপি-জামায়াতের সময়ে সিস্টেম লস ছিল ৪৪ শতাংশ। এখন অনেক ক্ষেত্রে সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে এসেছে। চট্টগ্রাম ও ডেসকোতে ৭ শতাংশ সিস্টেম লস। উন্নত দেশেও ৭ শতাংশ সিস্টেম লস থাকে।

তিনি বলেন, আমাদের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সাশ্রয়ী ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা। উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই, আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সময় লাগবে। কোরিয়ার মতো দেশের সময় লেগেছে ৩০ বছর।

নসরুল হামিদ বলেন, ‘ভুল ধরার জন্য অনেক লোক পাওয়া যাবে। নির্দিষ্ট করে কাজ করা বড় কঠিন। অনেকে অনেক পরামর্শ দেন আমরা কনফিউজড হয়ে যাই। এখানেই একেকজন একেকরকম মত দিয়েছেন। সিপিডির তথ্য আরো আপডেট হতে হবে। তারা অনেক তথ্য দিয়েছে পুরনো। আপনাদের সবাইকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। অনেকে প্রশ্ন করেছেন গভীর সমুদ্রে কেন দেরি হলো।।’

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘মাথায় কত প্রশ্ন আসে উত্তর পাওয়া যায় না। ২০০৯ সালে উৎপাদন ক্ষমতার ৪৯ শতাংশ ব্যবহার হতো। এখন ব্যবহার হচ্ছে মাত্র ৪০ শতাংশ। শীতকালে ৭৮টি পাওয়ার প্লান্ট বন্ধ ছিল, বসিয়ে রেখে খরচ দিতে হচ্ছে। এতে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাচ্ছে। ভারত ৬ ডলার দিয়ে এলএনজি কিনতে পারলে আমরা কেনো ১০ ডলার দিয়ে কিনব।’

তিনি বলেন, বিইআরসি কেন আইন মেনে গণশুনানি করতে পারছে না। আমরা বলেছি তারা নিরপেক্ষ নয়। ১০টি মামলা ঝুলছে তাদের নামে। ১ হাজার এমএমসিএফডি এলএনজি আসবে তখন ঘাটতি দাঁড়াবে ৩১ হাজার কোটি টাকা এমন হিসেব দিয়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ যখন ৫০০ এমএমসিএফডি আসে তখন বলা হয়েছিল ঘাটতি সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। ভোক্তার ঘরে না দিয়েই কোনো যুক্তিতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির শুনানি হচ্ছে।

ঘাটে ঘাটে দুর্নীতি হচ্ছে উল্লেখ করে শামসুল আলম বলেন, ‘আমি প্রতিমন্ত্রীকে অনুরোধ করব দুর্নীতির বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার। আসুন আমরা আরেকটি যুদ্ধ করি দুর্নীতির বিরুদ্ধে। হয় তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবেন, না হলে পদত্যাগের ঘোষণা দেবেন।’

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, ‘অনেক দিন হলো সমুদ্রসীমা বিজয় অর্জন করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেভাবে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান হয়নি। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কথা বলা হচ্ছে। অনেকগুলো চুক্তি করা হয়েছে, সেখানে মাত্র দুটির কাজ চলছে। আর অন্যগুলো আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এখান থেকে দ্রুত বের হয়ে আসতে হবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সিপিডির পক্ষ থেকে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষণা ডিরেক্টর খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অন্যতম সাফল্য হচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। বিদ্যুতের ঘাটতি তারা সফলতার সঙ্গে মেটাতে সক্ষম হয়েছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘পেট্রোবাংলার লাইব্রেরিতে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত। কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। বিদেশি কোম্পানি কেন আগ্রহী হবে। এসব বেরিয়ার তুলে ফেলতে হবে।’

তিনি বলেন, স্বচ্ছতা, দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। দুর্নীতি রোধ করতে হবে। সময় এসেছে বিশেষ আইন বিলুপ্ত করার। মনোযোগ বাড়াতে হবে দেশীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও কয়লা উত্তোলনের দিকে। কয়লা নীতি পরিষ্কার ও দ্রুত চূড়ান্ত হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।