দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন মেরুকরণ, স্নায়ুযুদ্ধের শত্রু ইসলামাবাদকে কাছে টানছে মস্কো

মস্কো: ইসলামাবাদের উপর আমেরিকার প্রভাব যখন কমছে, তখন পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলছে পুরনো শত্রু রাশিয়া। এই নতুন সম্পর্ক যেমন দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে ঐতিহাসিক মিত্রতার বন্ধনকে আমূল বদলে দিতে পারে, তেমনই মস্কোর জ্বালানি কোম্পানিগুলির জন্য খুলে দিতে পারে একটি দ্রুত-বিকাশমান গ্যাস রপ্তানি বাজার।

আফগান যুদ্ধকে ঘিরে আমেরিকার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কে এখন টানাপোড়ন চলছে। ঠিক এই সময়েই পাকিস্তানকে কাছে টেনে নিতে এগিয়ে এসেছে রাশিয়া। বর্তমান পরিস্থিতি ১৯৮০-র দশকের সম্পূর্ণ উল্টো। সেই সময় সোভিয়েত সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আফগান জঙ্গিদের কাছে অস্ত্র পাঠাতে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছিল ইসলামাবাদ।

সেই ইতিহাসকে আর সামনে আনতে চাইছে না মস্কো। এই প্রসঙ্গে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খুররম দস্তগির খান বলেছেন, ‘শুরু হয়েছে মাত্র। দু’দেশকেই অতীতের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতের জন্য দরজা উন্মুক্ত করতে হবে।’

মস্কো-ইসলামাবাদ উষ্ণ সম্পর্ক এখনও পর্যন্ত আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইরত তালিবানকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। তালিবানের সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। মস্কো বলছে তারা শান্তি আলোচনাকে উৎসাহ দিচ্ছে।

আসলে আফগানিস্তানে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের উপস্থিতি নিয়ে পাকিস্তান ও রাশিয়া-উভয়েই উদ্বিগ্ন। মস্কো উদ্বিগ্ন আইএস মধ্য এশিয়া হয়ে তার দোরগোড়ায় পৌঁছে যেতে পারে বলে। আইএস ইতিমধ্যে পাকিস্তানে বেশ কয়েকটি বড় আকারের হামলা চালিয়েছে। গত মাসে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী খাজা আসিফ মস্কো সফর করেন। সফরে আইএসের হুমকি মোকাবিলায় সামরিক সহযোগিতার জন্য একটি কমিশন গঠনের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করে দুই দেশ। পাকিস্তান-রাশিয়া প্রতিবছর যৌথ সামরিক মহড়া চালিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গেও সহমত হয়। ২০১৬ সাল থেকে এই মহড়া শুরু হয়েছে। পাকিস্তান তার জেএফ-১৭ জঙ্গি বিমানের জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে ইঞ্জিন কিনবে, যেগুলি নিজেদের দেশে সংযোজন করবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।

জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগে পাকিস্তানের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করেছে পশ্চিমের দেশগুলি। ফলে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক কূটনৈতিক অঙ্গনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির জন্য বিপুল স্বস্তি এনে দিতে পারবে। পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী আসিফ বলেন যে, পশ্চিমীদের প্রতি ১০০ শতাংশ ঝুঁকে গিয়ে তার দেশ একটি ঐতিহাসিক ভুল করেছে। তাই এখন চীন, রাশিয়া ও তুরস্কের মতো দেশগুলির সঙ্গে মিত্রতা তৈরিতে আগ্রহী। আমেরিকার সঙ্গে শীতল সম্পর্ক ইতিমধ্যে পাকিস্তানকে চীনের কোর্টে ঠেলে দিয়েছে। তবে, কূটনীতির ক্ষেত্রে বেজিংয়ের উপর অতিনির্ভরতা নিয়েও বিশ্লেষকদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে।

তবে রাশিয়ার সঙ্গে এই সম্পর্ককে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছে পাকিস্তানের প্রতিবেশী ও স্নায়ুযুদ্ধের সময় রাশিয়ার শিবিরে থাকা নয়াদিল্লি। গত দুই দশকে রাশিয়ার কাছ থেকে ভারত বিপুল পরিমাণ অস্ত্র কেনে। নয়াদিল্লিকে কৌশলগত অংশীদারের মর্যাদাও দেয় মস্কো। দিল্লির অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ সুশান্ত সারিন বলেন, রাশিয়া যদি রাজনৈতিক পর্যায়ে পাকিস্তানকে ব্যাপকভাবে সমর্থন দিতে শুরু করে, তাহলে তা আমাদের জন্য সমস্যা তৈরি করবে।