ট্রেইলর ধর্মঘট: অর্থনীতিকে ‘জিম্মি’ করে দাবি আদায়ের অপকৌশল

Image result for ট্রেইলর ধর্মঘট
চট্টগ্রাম: আমদানি-রফতানী পণ্যের কনটেইনার, বিলেট, স্টিল কয়েল ও ভারী যন্ত্রপাতি পরিবহনে অপরিহার্য প্রাইমমুভার ট্রেইলর ধর্মঘটকে দেশের অর্থনীতির চাকাকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের কৌশল হিসেবে অভিহিত করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। শিগগির ধর্মঘট প্রত্যাহার করে ব্যবসা-বান্ধব সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বানও জানিয়েছেন তারা। বুধবার সকালে প্রাইম মুভার ট্রেইলর ধর্মঘট নিয়ে কথা বলেন ব্যবসায়ী নেতারা।
শতবর্ষী বাণিজ্য সংগঠন চিটাগাং চেম্বার ও পোর্ট ইউজার্স ফোরামের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হচ্ছে বন্দর, শিল্পকারখানা, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। এখন কনটেইনার পরিবহনের অপরিহার্য মাধ্যম হচ্ছে ট্রেইলর। ২০-৪০ ফুট দীর্ঘ কনটেইনার কিংবা ভারী যন্ত্রপাতি আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে টেইলরের বিকল্প নেই বললেই চলে। মহাসড়কে ৩৩ টনের বেশি ওজন নিয়ে টেইলার চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে না এ অজুহাতে সব ধরনের কনটেইনার পরিবহন বন্ধ ঘোষণার অর্থ হচ্ছে অর্থনীতিকে জিম্মি করে দাবি আদায়। যা অনাকাঙ্খিত ও দুঃখজনক। শিগগির ধর্মঘট প্রত্যাহার করে সংশ্লিষ্টরা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার জন্যে আমি আহ্বান জানাচ্ছি।
টেইলর ধর্মঘটের কারণে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন তৈরি পোশাক শিল্পের (আরএমজি) উদ্যোক্তারা। তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মঙ্গলবার রাতে ট্রেইলর মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে অফডক থেকে রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার বন্দরে পৌঁছানো হবে। এটি আশার আলো হলেও সমস্যা হচ্ছে আমদানি পণ্য ভর্তি কনটেইনার যদি বন্দর থেকে কারখানায় নিয়ে যেতে না পারি তবে হাজার হাজার শ্রমিক অলস বসে থাকবে। যথাসময়ে শিপমেন্ট হবে না। অর্ডার বাতিল হবে। সব মিলে ভয়াবহ ঝুঁকিতে পড়তে হবে আরএমজি খাতকে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলের পোশাক কারখানাগুলো হয়তো বেশি ভাড়ায় ট্রাক-কাভার্ডভ্যান দিয়ে বন্দর থেকে আমদানি পণ্য কারখানায় নিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু এখানে ১৫ শতাংশ গার্মেন্টসের কথা বিবেচনায় নিলে তো হবে না। সারা দেশের বিশেষ করে ঢাকা-সাভার-গাজীপুরের বড় বড় কারখানাগুলোর এফসিএল কনটেইনার যদি সঠিক সময়ে না পৌঁছায় তবে সাপ্লাই চেনে বিঘœ ঘটবে। ইতিমধ্যে জাহাজ রপ্তানি পণ্য ভর্তি কনটেইনার না নিয়ে চলে যাওয়ার প্রবণতা শুরু হয়েছে। একটি জাহাজ যদি একদিন বেশি অবস্থান করে তবে ১০ হাজার ডলার মাশুল গুনতে হয়। তাই ধর্মঘটের মাধ্যমে তৈরি পোশাক শিল্পকে জিম্মি না করে স্থায়ী সমাধান করা উচিত। আজ তিন দিন হলো ধর্মঘট চলছে, কোনো উদ্যোগ নেই অথচ আরএমজি খাতে তিন মিনিটও হিসাব করতে হয়।
৪০ ফুট দীর্ঘ কনটেইনারের ওজন ৩৩ টনের বেশি হলে দাউদকান্দি ও মেঘনা সেতুর সামনে বসানো স্কেল পার হওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে ধর্মঘট শুরু করে প্রাইমমুভার ট্রেইলর মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুরোধে মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত অফডক থেকে রপ্তানি পণ্য পরিবহনের সিদ্ধান্ত নেয় ঐক্য পরিষদ।
এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের ১৬টি অফডক (কনটেইনার ডিপো) থেকে ৩ হাজার ৪২৫টি রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার বন্দরে পৌছানো গেছে বলে জানিয়েছেন বিকডার সচিব রুহুল আমিন সিকদার।
তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দর কেন্দ্রিক প্রায় আট হাজার ট্রেইলর রয়েছে। এর মধ্যে ৭০০ ট্রেইলর অফডক কর্তৃপক্ষের মালিকানায়। কিন্তু এসব গাড়িও চালানো যাচ্ছে না চালক ও শ্রমিকরা প্রাইমমুভার ট্রেইলর মালিক-শ্রমিক সমিতিভুক্ত হওয়ায়। একপ্রকার জিম্মি করে ফেলেছে ট্রেইলর খাতকে। এ ধর্মঘটের কারণে শুধু রপ্তানি পণ্যের কনটেইনারই ঝুঁকিতে পড়েনি একই সঙ্গে অফডক থেকে যে ৩৭ ধরনের আমদানি পণ্য খালাস করা হয়ে থাকে সেগুলোতেও সময়ক্ষেপণ বাড়ছে। জট লেগে যাচ্ছে।
ট্রেইলর ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জটের সৃষ্টি হয়েছে। ২০ ফুট দীর্ঘ ৩৬ হাজার ৩৫৭টি কনটেইনার ধারণক্ষমতার বন্দরে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় কনটেইনার ছিল ৩৬ হাজার ৬১৭টি। এর মধ্যে ২৫ হাজার ৯৮১টি আমদানি পণ্য ভর্তি কনটেনার ধারণক্ষমতার বিপরীতে ছিল ৩০ হাজার ৬৮৭টি। বন্দর জেটিতে ৯টি কনটেইনার জাহাজে কাজ হলেও বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ ছিল আরও ১৯টি জাহাজ। চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম বলেন, প্রাইমমুভার ট্রেইলর ধর্মঘটের কারণে ধীরে ধীরে কনটেইনার বাড়ছে বন্দরের জেটিতে। এভাবে চলতে থাকলে অচলাবস্থা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাতে বন্দরের অনুরোধে অফডক থেকে রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার পরিবহনের যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা অস্থায়ী উদ্যোগ। ট্রেইলরের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিবহন নিরবচ্ছিন্ন চলাচলের সুবিধার্থে স্থায়ী সমাধান হওয়া উচিত।