জন্ম বিতর্কে ক্রুজের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ

বারাক ওবামা দুবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। এখন দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ পর্যায়ে তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ না করায় ওবামা মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্যই নন—এমন অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও এখনো অনেক মার্কিনি ওই কথা বিশ্বাস করেন।
টেক্সাস থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ এখনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি। ওই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্যে দলের মনোনয়নের জন্য লড়ছেন তিনি। ওবামার মতো এবার তাঁকেও একই অভিযোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তবে ওবামার সঙ্গে ক্রুজের তফাত হলো—তিনি সত্যিই আমেরিকার বাইরে—কানাডায় জন্মগ্রহণ করেছেন।
মার্কিন শাসনতন্ত্র অনুসারে শুধু ‘জন্মগতভাবে মার্কিন’ নাগরিক প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য। ক্রুজের বাবা কিউবান। আর মাতা জন্মগতভাবে মার্কিন নাগরিক। সেই অর্থে কোনো কোনো শাসনতন্ত্র বিশেষজ্ঞের চোখে ক্রুজ জন্মগতভাবে মার্কিন নাগরিক।
ক্রুজ নিজেও সে কথা বলেছেন। কিন্তু যেহেতু তিনি নিজে দেশের মাটিতে জন্ম নেননি, তাই প্রেসিডেন্ট পদে তাঁর বৈধতা প্রশ্নাতীত নয়—এই যুক্তি দেখিয়ে ক্রুজের প্রার্থিতার চ্যালেঞ্জ এসেছে প্রেসিডেন্ট পদে রিপাবলিকান পার্টির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে।
ট্রাম্প অবশ্য বলেছেন, ক্রুজের ব্যাপারে তাঁর নিজের কোনো আপত্তি নেই। তিনি ও ক্রুজ খুব ভালো বন্ধু। তবে একবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তাঁর বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ হতে পারে। সে চ্যালেঞ্জের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্রুজ দায়িত্ব নিতে পারবেন না। তাই ট্রাম্পের নিরীহ প্রশ্ন, এমন বিতর্কিত লোককে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা কি খুব বুদ্ধিমানের কাজ হবে?
শাসনতন্ত্র বিশেষজ্ঞেরা মোটামুটি একমত যে ক্রুজ কানাডায় জন্মগ্রহণ করলেও তিনি জন্মগতভাবে মার্কিন নাগরিক। কিন্তু এই প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট কোনো মতামত দেননি। কারণ প্রশ্নটি আদালতের সামনে উত্থাপিত হয়নি।

ডেমোক্রেটিক পার্টির কোনো কোনো রাজনীতিক, যেমন—ফ্লোরিডা থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসম্যান এলেন গ্রেইসন ঘোষণা করেছেন, তাঁরা ক্রুজের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করবেন।
আগে দুই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সিনেটর জন ম্যাককেইন (জন্ম—পানামা) এবং মিট রমনি (জন্ম—মেক্সিকো) একই বিতর্কের সম্মুখীন হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি। এতে সে বিতর্ক আদালতে গড়ায়নি।

ক্রুজকে বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিলেও ট্রাম্প যে এখন তাঁর নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তার গূঢ় কারণ রয়েছে। আগামী মাসে আইওয়াতে অনুষ্ঠিত হবে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা নির্বাচনের প্রথম ভোট। জাতীয় পর্যায়ে এগিয়ে থাকলেও এই রাজ্যে ক্রুজের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। তিনি কিছুতেই প্রথম নির্বাচনী পরীক্ষায় ঠকতে চান না। সেটি তাঁর জন্য অশনিসংকেত বয়ে আনতে পারে। সে জন্য, ভোটে যাওয়ার আগেই তিনি আইওয়ার রিপাবলিকান নির্বাচকদের মনে ক্রুজের যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি করতে চান।

ক্রুজের যোগ্যতার ব্যাপারে এই প্রশ্ন ট্রাম্পের একার নয়। আরেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কেন্টাকি থেকে নির্বাচিত সিনেটর র‍্যান্ডও একই প্রশ্ন তুলেছেন। সিএনএনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এই সিনেটর বলেছেন, তিনি এই বিষয়ে নিশ্চিত যে, ক্রুজ অত্যন্ত যোগ্য প্রার্থী। তবে তা কানাডার প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য।