কার হাতে উঠছে শান্তির নোবেল?

একে একে ঘোষিত হয়েছে চিকিৎসা, পদার্থ, রসায়ন ও সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার। সেই ধারাবাহিকতায় ৬ তারিখ ঘোষিত হবে সবচেয়ে আলোচিত শান্তির নোবেল। চলতি বছর রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় অসাধারণ মানবিকতা প্রকাশও জাতিসংঘে এই সংকট মোকাবেলায় ৫ দফা প্রস্তাব করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামও আলোচিত হয়েছে। এছাড়া চলতি বছর শরণার্থী সংকট নিয়ে কাজ করা ব্যক্তি ও সংগঠনগুলোর নামই বেশি শোনা যাচ্ছে। নরওয়ে পার্লামেন্টের নিয়োগ করা প্যানেলে মনোনীত ৩১৮ জন ব্যক্তি ও সংগঠনের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেবেন। উল্লেখ্য, নিয়মানুযায়ী একমাত্র বিজয়ী ছাড়া মনোনয়ন  ৫০ বছর গোপন রাখে নোবেল কমিটি। তবে মনোনয়নের দায়িত্বে থাকা সাবেক নোবেল বিজয়ী, রাজনীতিবিদ ও একাডেমিকরা তাদের মনোনয়নের বিষয়টি প্রকাশ করেন। এই নিয়ে ভুয়া সংবাদও সাধারণ ঘটনা।
গার্ডিয়ান ও টাইমস অবলম্বনে চলতি বছরের শান্তি পুরস্কারের সম্ভাব্য ব্যক্তি ও সংগঠনের নাম তুলে ধরা হল:
অ্যাঙ্গেলা মার্কেল
সিরিয়া সংকটের কারণে ২০১৫ সালে ইউরোপে শরণার্থীর ঢল নামে। তখন জার্মান চ্যান্সেলর ঘোষণা দেন তিনি জার্মানিতে ১০ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দেবেন। তখন আভ্যন্তরীণভাবে তার জনপ্রিয়তা কমলেও মানবিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন, বিশেষ করে যখন ইউরোপসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীরা কড়া অভিবাসন নীতি প্রণয়ন করছে। আর এর ফলেই চলতি বছরের জার্মান জাতীয় নির্বাচনে পুনরায় নির্বাচিত হলেও জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে কমে গেছে। মার্কেল বলেছেন, এটা নিয়ে তার বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। এই বছরে তার শান্তিতে নোবেল জয়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি বলে মনে করছে টাইমস।
ইরান পারমাণবিক চুক্তির রূপকার জাভাদ জাফরি ও ফেদেরিকা মোঘেরিনি
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জাভাদ জাফরি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ফেদেরিকা মোঘেরিনি ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির প্রধান কারিগর বলে বিবেচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক যুদ্ধের উত্তেজনার মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়ন ও সমৃদ্ধকরণের এই আন্তর্জাতিক চুক্তিকে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে দেখতে পারে নোবেল কমিটির জুরি বোর্ড। যদিও সম্প্রতি ট্রাম্প এই চুক্তিকে ‘বিব্রতকর’ বলে অভিহিত করেছেন, এবং চুক্তিটি বর্তমানে ভেঙে যাওয়ার হুমকির সম্মুখীন।
সিরিয়ার হোয়াইট হেলমেট গ্রুপ
ছয় বছর ধরে চলমান সিরিয়া সংকটের মধ্যে মানবিক ও দাতব্য সহায়তা চালিয়ে যাওয়া সংগঠনটি নোবেলের জন্য মনোনীত হয়ে আসছে গত কয়েক বছর ধরে। ভয়াবহ সামরিক সংঘাত ও ধ্বংসলীলার মধ্যে নিপীড়িত জনগণকে সেবা দিয়ে যাওয়া সংগঠনটিকে শান্তিতে নোবেল দেয়া হলে সেটি হবে নিপীড়িত জনগণের সহায়তায় কাজ করে যাওয়া সংগঠনগুলোর জন্য অনেক বড় অনুপ্রেরণা।
তুর্কি সম্পাদক কান দুনদার ও সংবাদপত্র কুমহুরিয়েত
তুরস্কের কুমহুরিয়েত পত্রিকার সম্পাদক কান দুনদার রিসেপ তায়্যিপ এরদোয়ানকে হত্যাচেষ্টার অভ্যুত্থানের পর থেকে জার্মানিতে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। এই দৈনিকের অনেক সাংবাদিককে শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব কাজটি করার জন্য জঙ্গিবাদের অভিযোগের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। গার্ডিয়ানের মতে, এই পত্রিকা ও তার সম্পাদককে নোবেল পুরস্কার দেয়া হলে সেটি হবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এরদোয়ানের করা কর্মকাণ্ডের কঠিন জবাব।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন এর আগে দুই বার শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছে, সর্বশেষ পেয়েছে ১৯৮১ সালে। কিন্তু বিগত এক দশকে সিরীয় গৃহযুদ্ধ, মিয়ানমার, সোমালিয়াসহ বিশ্বজুড়ে ফিলিপ্পো গ্রান্ডি নেতৃত্বাধীন সংস্থাটিকে এক অভাবনীয় সংকট মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এই মুহুর্তে নোবেল দেয়া হলে শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করে যাওয়া সংগঠনটির জন্য হবে অনন্য এক স্বীকৃতি।
পোপ ফ্রান্সিস
এবারের শান্তি পুরস্কারে বেশ আলোচিত হচ্ছে ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রধান পোপ ফ্রান্সিসের নাম। এর আগে কোনো পোপ নোবেল পুরস্কার না পেলেও শরণার্থী, দারিদ্র, সামাজিক ন্যায়বিচার ও জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে জোরালো বক্তব্য রাখার কারণে পোপ ফ্রান্সিসের নাম শোনা যাচ্ছে । শোনা যাচ্ছে নরওয়েজিয়ান মেম্বার অব পার্লামেন্ট এবার তার নাম বিবেচনা করছে, কারণ তিনি বিরল ওই ব্যক্তিত্বদের মধ্যে যিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।