ইউক্রেনে উৎকণ্ঠায় দেড় হাজার বাংলাদেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দু’টি রুশপন্থি অঞ্চলকে মস্কো ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়ার পর ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। পরিস্থিতি আসলে কোন পথে যায় তার দিকে চোখ গোটা বিশ্বের।

ইউক্রেন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মতো দুই পরাশক্তি যদি যুদ্ধে জড়িয়েই পড়ে তাহলে বিশ্ব পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা নিয়ে চলছে নানা সমীকরণ। এদিকে এরই মধ্যে বিপজ্জনক পরিস্থিতি এড়াতে বেশ কিছু দেশের নাগরিকদের ইউক্রেন ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

নাগরিকদের ইউক্রেন ছাড়তে বলা দেশগুলোর তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, ইসরায়েল, নেদারল্যান্ডস, জাপান ও ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশের নামও আছে।

১৫ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবিলম্বে ইউক্রেন ছাড়ার পরামর্শ দেয় পোল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাস। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবিলম্বে ইউক্রেন ত্যাগ করার পরামর্শ দেওয়া হলো। অন্য কোনো দেশে যেতে না পারলে তারা বাংলাদেশে যেতে পারেন। ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তীতে দূতাবাসের পক্ষ থেকে পরামর্শ হালনাগাদ করা হবে।

পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ইউক্রেনে আনুমানিক প্রায় এক থেকে দেড় হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন এবং তারা উৎকণ্ঠিত অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, তারা পুরো ইউক্রেনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এবং ইস্টার্ন ইউক্রেনের যেসব এলাকায় সমস্যা রয়েছে, সেখানেও অনেক বাংলাদেশি আছেন, স্টুডেন্ট আছেন।
তিনি বলেন, যদিও শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের জন্য বিভিন্ন কারণে ইউক্রেন ছাড়ার ব্যবহারিক নানা অসুবিধা আছে, কিন্তু পরিস্থিতির কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে ইউক্রেন ছাড়ার কথা ভাবছেন এবং ছাড়ছেনও। ইউক্রেনে বসবাসরত প্রায় ৫০০ বাংলাদেশি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং তারা চলে যেতে চাইলে তাদের কী ধরনের সহায়তা দেওয়া যাবে, তা নিয়ে তারা ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করেছেন।

পোল্যান্ড ইউক্রেনের সাথে তাদের সীমান্ত খুলে দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন সুলতানা লায়লা হোসেন।

তিনি বলেন, পোল্যান্ড সরকার এক ব্রিফিংয়ে আমাদের জানিয়েছে, ইউক্রেনে থাকা তৃতীয় দেশের নাগরিকরা সেদেশ ছাড়তে চাইলে, পোল্যান্ড ১৫ দিনের জন্য তাদের ট্রানজিটে থাকার অনুমতি দেবে।

ইউক্রেনে থাকা বাংলাদেশিদের দেশে ফিরতে সহায়তা করবে সরকার বাংলাদেশি নাগরিকদের যেদিন ইউক্রেন ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া হয় সেদিনই ররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান ইউক্রেনে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকরা দেশে ফিরতে চাইলে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা অন্য যেকোনো সময় যেটা করি, কোনো দেশে বা কোনো অঞ্চলে খারাপ পরিস্থিতি হলে সেখানে থাকা নাগরিকদের সাবধান করে দিই। এ ক্ষেত্রেও সেটাই করা হয়েছে। আমরা কাউকে ছাড়তে বাধ্য করতে পারি না। এটা ব্যক্তিগতভাবে যারা আছেন তাদের ওপর নির্ভর করছে। কিন্তু তারা ফেরত আসতে চাইলে বাংলাদেশ সহায়তা করবে সবক্ষেত্রে।

শাহরিয়ার আলম বলেন, অনেক দেশের নাগরিক চলে গেছেন, অনেকে এখনও যাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে বাঙালি যে কেউ সহায়তা চাইলে আমাদের নিকটবর্তী পোল্যান্ড দূতাবাস বা অন্য দূতাবাস থেকে সহায়তা করা হবে।

অতীতে ইয়েমেন ও লিবিয়ার অভিজ্ঞতা টেনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইয়েমেনে যখন সমস্যা হয়েছিল তখন আমরা বলেছিলাম, তারা বেশিরভাগই চলে আসতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু এর আগে লিবিয়ায় দেখেছি, নোটিশ করার পরও অনেকে আসেননি।