চাহিদার বেশি উৎপাদন, তবুও খাদ্য আমদানি

ঢাকা: দেশে খাদ্যের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি। যদিও সরকারী তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন বেশি খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে। সে হিসাবে খাদ্য রফতানী করার কথা। কিন্তু রফতানী না হয়ে বছরে প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য আমদানি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন সঠিক জনসংখ্যা, দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন ও খাদ্যের চাহিদা নিরূপণের ত্রুটি রয়েছে এ জন্য খাদ্য পরিস্থিতির সঠিক চিত্রটি উঠে আসছে না। আর এ সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী, সহযোগিতা করছে কিছু আমলা।

খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে লোক সংখ্যা ছিল প্রায় ১৫ কোটি ৯১ লাখ। বিআইডিএসের সমীক্ষা-২০১২ অনুযায়ী জনপ্রতি দৈনিক চালের চাহিদা প্রায় ৪৬২ গ্রাম ও গমের চাহিদা প্রায় ৪৬ দশমিক ২১ গ্রাম। সে হিসেবে মোট খাদ্যশস্যের চাহিদা প্রায় দুই কোটি ৯৩ (চাল ও গম) লাখ মেট্রিক টন। দেশে খাদ্যশস্যের (চাল ও গম) উৎপাদন প্রায় ৩ কোটি ৮ লাখ মেট্রিক টন। উক্ত হিসাব অনুযায়ী খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত হওয়ার কথা প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু প্রতিবছর বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য আদমানি করা লাগছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে চাল আমদানি হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন। একই সময়ে গম আমদানি হয়েছে ৩০ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চাল আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৪২ হাজার মেট্রিক টন; একই সময়ে গম আমদানি হয়েছে ৩৭ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৫ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন; এবং গম আমদানি হয়েছে ২৭ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আরএম দেবনাথ এ বিষয়ে বলেছে, দেশের সঠিক জনসংখ্যা কত তা নিয়ে বিভ্রান্তি আছে। মাথা প্রতি খাদ্যের চাহিদা নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় এক ধরনের হিসাব দেয়, বিআইডিএস আরেক তথ্য। দেশের জনসংখ্যার হার, খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্যের চাহিদা নিয়ে যে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার প্রয়োজন তা বাংলাদেশে এখনো হয়ে উঠেনি। এ কারণে তথ্যের গড়মিল হচ্ছে।

১৯৭১ সাল থেকে ৪৫ বছরে জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুন। আর খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে তিনগুন-এ হিসাবের কোনো ভুল নেই। কিন্তু সঠিক হিসাব নিয়ে বিভ্রান্তি আছে। তবে খাদ্যশস্য আমদানিতে টাকা পাচার ও সীমান্ত দিয়ে চাল পাচার হয়ে যাওয়ার কারণে দেশে চাল আমদানি হতে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। আবার চাল আমদানির অন্তরালে অন্য পণ্য দেশে আসতে পারে। এ কারণে দেশে চালের চাহিদা না থাকার পরও চাল আমদানি হচ্ছে, এমন হতে পারে। তবে যে কারণেই হোক দেশে খাদ্যশস্য আমদানির বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।

ব্যাংকিং খাতের তথ্য অনুযায়ী দেশে আমদানিকৃত সকল খাদ্যশস্যই এসেছে বেসরকারি খাতের আমদানিকারকদের মাধ্যমে।

দেশে যথেষ্ট খাদ্যশস্য থাকার পরও খাদ্য আমদানি করতে কেন বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় করা হচ্ছে-এমন প্রশ্নের জবাবে সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী বলেন, এ খাদ্যশস্য মানুষের জন্য নয়, পশু খাদ্য। তবে খাদ্যের স্টক স্থিতিশীল রাখার জন্য খাদ্য আমদানি হতে পারে বলে মনে করেন বিআইডিএস এর গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখ্ত।

তিনি বলেন, প্রতিদিনই মানুষের খাদ্যের প্রয়োজন হয়। সেই সাথে বাড়ছে চাহিদাও। সে কারণে স্টক কমে যেতে পারে, এমন সন্দেহের কারণে খাদ্য আমদানি করে স্টক সমান করা হচ্ছে। এ কারণে খাদ্যশস্যের আমদানি বাড়তে পারে।