সৃজনশীলের নম্বর বাড়ানোর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

সৃজনশীল পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা

ডেস্ক: আজ এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় কথিত সৃজনশীল প্রশ্নের নম্বর বাড়ানোর হঠকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলন করেছেন ঢাকার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে আজ দুপুর ১২টার পর থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় চরম যানজটের। আজ শনিবার রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। দাবি পূরণ না হলে আগামী মঙ্গলবার থেকে লাগাতার কর্মসূচি দেয়া হবে বলে শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দিয়েছে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, সরকার এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় বহুনির্বাচনী বা এমসিকিউ অংশে নম্বর কমিয়ে কথিত সৃজনশীল অংশে বাড়িয়েছে। আগে যেখানে কথিত সৃজনশীল অংশে ছয়টি প্রশ্ন থাকতো সেখানে এবার আরো একটি প্রশ্ন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরীক্ষার জন্য যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে তারা সাতটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না। এজন্যই তারা চায়, গতবারের মতোই সিদ্ধান্তটি বহাল থাকুক।

আন্দোলনকারীদের মধ্যে সরকারি বিজ্ঞান কলেজের ছাত্র জুবায়ের বলেছে, তারা দাবি মানার জন্য সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছে। যদি দাবি পূরণ না হয়, তাহলে মঙ্গলবার থেকে লাগাতার কর্মসূচি দেয়া হবে। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এরপর সেখান থেকে তারা জাতীয় প্রেসক্লাবের দিকে যায়। আজ দুপুর ১২টার পর থেকে প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আড়াই ঘণ্টা পর আবার যান চলাচল শুরু হয়।

বর্তমানে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় একটি প্রশ্নপত্রকে দুই ভাগে ভাগ করে প্রশ্ন করা হয়। একটি অংশে সৃজনশীল আরেকটি অংশে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন থাকে। এতদিন ১০০ নম্বরের একটি পরীক্ষায় সৃজনশীল অংশের নম্বর ছিল ৬০। আর বহুনির্বাচনী অংশের নম্বর ছিল ৪০। বহুনির্বাচনীর জন্য সময় ছিল ৪০ মিনিট। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের সমালোচনার মুখে সরকার বহুনির্বাচনী অংশের ১০ নম্বর কমিয়ে সৃজনশীল অংশে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। অর্থাৎ একটি পরীক্ষায় যদি ১০০ নম্বর থাকে তাহলে সেখানে এখন সৃজনশীল অংশের নম্বর হবে ৭০। আর এমসিকিউ অংশের নম্বর হবে ৩০। গত বছরেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় কিছুদিন আগে শিক্ষা বোর্ডগুলো এই নম্বর পুনর্বণ্টন করে। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীরা এর বিরোধিতা করছে।

৭টি সৃজনশীলের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে অবস্থান শিক্ষার্থীদের:

এদিকে আসন্ন ২০১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষায় সৃজনশীল প্রশ্ন ছয়টির জায়গায় সাতটি করার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছে শিক্ষার্থীরা। আজ শনিবার দুপুর ১২টা থেকে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা এসে বোর্ড চত্বরে জড়ো হয়। পরে সেখানে তারা অবস্থান নিয়ে ‘সাতটি সৃজনশীল মানব না’, ‘ছয়টির বেশি লিখব না’, ‘আমরা মানুষ, রোবট নই’, ‘নিত্যনতুন পদ্ধতি করে আমাদের ক্ষতি করবেন না’ সেøাগান দিতে থাকে। তবে আজ শনিবার সরকারি ছুটির দিন থাকায় শিক্ষাবোর্ড বন্ধ রয়েছে। তাই বোর্ডের কার্যক্রমে ব্যাঘাত হবার প্রশ্নই নেই।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন সাউথ এশিয়ান কলেজের সৈয়দ তানভির মাহমুদ বলেন, আসন্ন ২০১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষায় সৃজনশীল প্রশ্নে ১০ নম্বর বৃদ্ধি ও বহুনির্বাচনী প্রশ্নে ১০ নম্বর কমানো হয়েছে। পরিবর্তন করা হয়েছে পরীক্ষার সময় বণ্টন, থাকছে না বহুনির্বাচনী ও সৃজনশীল পরীক্ষার মধ্যে বিরতি। আমাদের দুই ঘণ্টা ২০ মিনিটে সাতটি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে। এতদিন যেখানে দুই ঘণ্টা ১০ মিনিটে ছয়টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দেয়া নিয়েই ছিল আপত্তি। সেখানে আবার প্রশ্নের সংখ্যা বৃদ্ধি হলেও সে অনুযায়ী সময় না বাড়ায় আমরা ক্ষুব্ধ। তাই আন্দোলনে নেমেছি আমরা।’ আন্দোলনকারী এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, আজ শনিবার শিক্ষাবোর্ড বন্ধ থাকায় আমরা এখানে আন্দোলন করছি। কারণ খোলার দিন এখানে অবস্থান নিলে বোর্ডের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এদিকে ঘটনাস্থলে দায়িত্বপালনরত পাঁচলাইশ থানার উপ-পরিদর্শক প্রভাকর বলেন, আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট আছি। শিক্ষার্থীদের বলে দেয়া হয়েছে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে চলে যাবার জন্য। এর আগে ২৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে একই দাবিতে আন্দোলন করেছিল কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, ফেসবুকে ইভেন্ট খুলে এ আন্দোলনের ডাক দেয় শিক্ষার্থীরা।