সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র ১১ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি

প্রথম বিদেশ সফরে সৌদি আরবে পৌঁছে দেশটির সঙ্গে ১১ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি করলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এই প্রতিরক্ষা চুক্তির ফলে সৌদি আরবসহ পুরো উপসাগরীয় এলাকার দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো আট দিনের বিদেশ সফরের প্রথমেই মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী দেশটিকে বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প। গতকাল শনিবার তিনি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে পৌঁছান। সেখানে আরব ইসলামিক আমেরিকান (এআইএ) সম্মেলনে ট্রাম্পের ৪০টি মুসলিম দেশের নেতাদের উদ্দেশে চরমপন্থা ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়ে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।

একই সম্মেলনে যোগ দিতে চার দিনের সরকারি সফরে গতকাল রাতে রিয়াদে পৌঁছেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ১০টার কিছু আগে ট্রাম্পকে বহনকারী বিমান ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’ রিয়াদে কিং খালিদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে। সেখানে তাঁকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সৌদি বাদশাহ সালমান ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। আট দিনের বিদেশ সফরে ট্রাম্প সৌদি আরবের পর ইসরায়েল, ফিলিস্তিন, ব্রাসেলস, ভ্যাটিকান সিটি ও সিসিলি যাবেন।

ট্রাম্পের সফরসঙ্গী হিসেবে তাঁর মেয়ে ও হোয়াইট হাউসের অবৈতনিক উপদেষ্টা ইভানকা এবং ট্রাম্প ক্যাবিনেটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য জামাতা জ্যারেড কুশনারও রয়েছেন। সৌদি আরবে পৌঁছানোর সময় যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডিকে রক্ষণশীল পোশাক পরতে দেখা যায়। তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ও জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের সাম্প্রতিক সৌদি সফরের মতো তিনিও মাথায় কোনো স্কার্ফ পরিধান করেননি।

গতকাল মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন রিয়াদে সাংবাদিকদের জানান, সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ১১ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। তাঁর মতে, মধ্যপ্রাচ্যে ‘ক্ষতিকর’ ইরানের হুমকি মোকাবেলায় এই চুক্তি সৌদি আরবের জন্য অনেক সহায়ক হবে। তিনি বলেন, ‘প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও অন্যান্য সেবার এই প্যাকেজে যে সুবিধা রয়েছে তাতে সৌদি আরব ও পুরো উপসাগরীয় এলাকায় দীর্ঘ মেয়াদে নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। ’

সফরের দ্বিতীয় দিনে আজ রবিবার রাজধানী রিয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ‘আরব ইসলামিক আমেরিকান সামিটে’ ভাষণ দেবেন। এতে তিনি ইসলামের শান্তিপূর্ণ ভিশনের কথা উল্লেখের পাশাপাশি ইসলামী চরমপন্থা ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের আহ্বান জানাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্ব গণমাধ্যম ট্রাম্পের এই ভাষণে বিশেষ দৃষ্টি রাখছে। কারণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে সাময়িকভাবে মুসলিমদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেছিলেন।

ধারণা করা হচ্ছে, এই সম্মেলনের এজেন্ডা হবে ইসলামী জঙ্গিবাদ ও আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলার ইস্যু। এর আগে নির্বাচনী প্রচারকালে ইরানের সঙ্গে বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর চুক্তির সমালোচনা করেছিলেন ট্রাম্প, যাতে পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করার শর্তে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পথ সুগম হয়। এ কারণে সৌদি আরবও ট্রাম্পের পূর্বসূরি বারাক ওবামার সমালোচনা করেছিল। ইরানের প্রতি ওবামার নমনীয় মনোভাবের কারণে ক্ষুব্ধ ছিল সৌদি আরব। ট্রাম্পের এই সফরে সৌদি আরবের মানবাধিকার ইস্যুটি চাপা থাকবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

কূটনৈতিক অভিজ্ঞতাবিহীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য সফরটিকে এক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প তাঁর গুরুত্বপূর্ণ এ প্রথম বৈদেশিক সফর কোনো বিপর্যয় ছাড়া উতরে যেতে পারলে এটি তাঁর সফলতা বলেই গণ্য হবে।

সফরে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে খুশি করতে যা করার সব কিছুই করছে সৌদি আরব। এ জন্য অতি উৎসাহপূর্ণ সংবর্ধনা জানানো হয়েছে ট্রাম্পকে। এর কারণ তাঁর পূর্বসূরি বারাক ওবামার প্রতি সৌদির ক্ষোভ। সাধারণ সৌদিরাও ট্রাম্পের এ সফরে গর্ববোধ করছে। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে তাদের দেশকে বেছে নেওয়ায় তারা খুশি। মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক মার্কিন নীতিতে তারা ক্ষোভও প্রকাশ করেছে। সাধারণ সৌদি নাগরিকরা মনে করে, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমরা ইসলামবিরোধী।