শুধু আমে নয় তাজা মাছ সরবরাহেও দেশের শীর্ষে রাজশাহী

 

রাজশাহী: সারা বিশ্বে মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে চতুর্থ স্থানে বাংলাদেশ। ৭ জুলাই এফএও থেকে প্রকাশিত দ্য স্টেট অব ওয়াল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার-২০১৬ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেয়া হয়েছে। আর বাংলাদেশের মধ্যে মিশ্র প্রজাতির খাওয়া এবং বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা তাজা মাছ রাজশাহী জেলায় প্রথম স্থানে রয়েছে। এমনই দাবি করেছেন মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তারা। রাজশাহী জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ি, জেলায় সরকারি জলাশয়ে মাছ উৎপাদন করে চার হাজার ৯১৫ জন চাষী, বাণিজ্যিক খামার আছে ছয় হাজার ১০৮ জনের, ধান ক্ষেতে মাছ চাষ করে ১৮৯ জন ও খাঁচায় মাছ চাষের তিনটি খামার আছে। যাতে ৬০ জন চাষী মাছ চাষ করে।

এর বাইরে এখনো রেজিস্ট্রেশন করেনি এমন ব্যবসায়ীর সংখ্যা রয়েছে ৪০০ থেকে ৫০০ জন। তবে রেজিস্ট্রেশন না করলেও নিজ নিজ উপজেলায় তারা মৎস্য ব্যবসায়ী হিসাবে তালিকাভুক্ত। এইসব মৎস্য ব্যবসায়ীরা জেলায় ৪৪ হাজার ৫২৩ হেক্টর জলাশয়ে মাছ উৎপাদন করে। এইসব জলাশয় সরকারি খাল-বিল, লিজ অথবা নিজে খননকৃত পুকুর করে মিঠা পানিতে মাছ উৎপাদন করে থাকে ব্যবসায়ীরা।

এসব জলাশয়ে বছরে মাছ উৎপাদনের সংখ্যা ৬৬ হাজার ৮২২ মেট্রিক টন। উৎপাদিত মাছ জেলার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত অংশ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা হচ্ছে। মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, ওজনে বেশি ও বাজারে দাম ভাল পাওয়ায় পুকুর থেকে তাজা মাছ ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করা হচ্ছে। এতে ফরমালিনমুক্ত মাছ খেতে পান মানুষ এই চিন্তা থেকেই মৎস্য কর্মকর্তাদের পরামর্শে দীর্ঘদিন ধরে তারা তাজা মাছ সরবরাহ করে রাজশাহীকে প্রথম স্থানে ধরে রেখেছেন। রাজশাহী জেলায় প্রথম তাজা মাছ সরবরাহ করা শুরু করেন তানোরে কৃষ্ণপুর গ্রামের জামাল উদ্দিন নামের এক জন মৎস্য ব্যবসায়ী।

জামাল উদ্দিন জানান, আগে কষ্ট করে মাছ উৎপাদন করে বাজারে দাম পাওয়া যেত না। কারণ পুকুর থেকে মাছ ধরে দুই থেকে ৩০০ কিলোমিটার দুরে বাজারে যাওয়ার পরে মাছ সব মরে ফ্যাকাশে হয়ে যেত। কম দামে মাছ বিক্রি করে আসতে হতো। এতে উৎপাদন খরচ তো দুরের কথা ট্রাক ভাড়াই উঠতো না। সে সময় অনেক লোকসান গুনতে হয়েছে। এমন সময় তার মাথায় তাজা মাছ বাজারজাত করার করার পরিল্পনা আসে। সে অনুযায়ি ২০০৯ সালে প্রথম পুকুর থেকে তাজা মাছ তুলে পানি ভর্তি ট্রাকে করে ঢাকা বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়।

তার ট্রাকে থাকা বড় বড় রুই, কাতলা বাজারে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশি দামে বিক্রি হয়ে যায়। সে থেকে তিনি তার পুকুরের মাছ ধরে তাজাই বাজারে বিক্রি শুরু করেন। তানোরের মু-ুমালার মৎস্য ব্যবসায়ী উজ্জ্বল সরদ্দার জানান, তিনিও গত দুই বছর ধরে তার পুকুরের চাষ করা তাজা মাছ বাজারজাত করছেন। লাভও ভালো হচ্ছে। রাজশাহী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী জানান, রাজশাহীর পানি ও মাটি উভয়ই মাছ চাষাবাদের উপযোগী। সেই কারণে জেলার মৎস্য চাষীদের উৎসাহ ও পরামর্শ দিয়ে নতুন নতুন পদ্ধতি মাছ চাষাবাদ করা হচ্ছে। আজ ২০১৬-তে এসে মাছ উৎপাদন ও জীবন্ত মাছ বাজারজাতকরণে দেশে রোলমডেল রাজশাহী জেলা।

দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এ জেলার মৎস্যখাত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। যেখান থেকে বছরে প্রায় ৬৬ হাজার ৮২২ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদিত মাছ জেলার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত অংশ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা হচ্ছে। বর্তমানে নিরাপদ মাছ চাষ প্রকল্প শুরু হয়েছে।